অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কেউ যদি হতচৈতন্য হয়ে পড়ে....চীৎকার করতে থাকে....প্রলাপ বকতে থাকে....ভাবতে থাকে তার খাটটা আকাশে উড়ছে....ভাবতে থাকে সে রাজসিংহাসনে বসে পাটিসাপটা খাচ্ছে অথবা কেউ যদি ড্রেনে গড়াগড়ি যায়–এই অবস্থায় থাকা মানুষকেও ‘কোশাতকিন্’ ৰলা যায়৷ এই ‘কোশাতকিন্’ সম্ৰন্ধে নানান গল্প প্রচলিত আছে৷
কয়েকজন কোশাতকিন্ একবার মধ্য রাত্রে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন গোয়াড়ি থেকে কেষ্নগর ইষ্টিশানের দিকে৷ এমন সময় পুলিশ কাছে এসে গেল৷ কোশাতকিন্রা ভাবলেন, এখন উপায় কী তাঁরা সারিৰদ্ধ ভাবে রাস্তার পাশে নালির গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে পড়লেন৷ পুলিশ এসে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে ৰললে–এত রাত্তিরে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী করতা হ্যায়?
তাঁরা ৰললেন–‘‘আমাদের জ্বালাতন কেন করতা হ্যায় ৰাৰা৷ আমরা নিরীহ জিনিস হ্যায়, চোখের মাথা খায়া হ্যায়৷ নেহি দেখতা হ্যায়, আমরা ল্যাম্পপোষ্ট হ্যায়৷ আমরা সাতেও নেহি হ্যায়, পাঁচেও নেহি হ্যায়৷ দেখতা নেহি হ্যায় আমাদের মাথার ওপর আলো জ্বলতা হ্যায়৷’’ তারা তাদের মাথার ওপর টর্চ জ্বেলে রেখেছিল৷
* * * *
একবার কয়েকজন কোশাতকিন্ রাস্তায় যাচ্ছে ৰিড়ৰিড় করে বকতে বকতে৷ কাছে পুলিশ এসে গেল৷ তারা ৰললে–দেখ, এখানে আমরা যদি কথা ৰলি, পুলিশ ভাবৰে আমরা কোশাতকিন্......আমরা মাতাল৷ আর আমরা যদি নুচি–পুরি–রসগোল্লা– গপ্প ৰলি তাহলে পুলিশ ভাববে নেমতন্ন খেয়ে ফিরছি৷ আর যদি চুপ থাকি তাহলে ভাববে আমরা পাহাড়ের গুহায় তপস্যা করতে যাচ্ছি৷ তাই চেঁচামেচি না করাই ভাল৷ নুচি–পুরির গপ্প করতে করতে গেলে পুলিশ জিজ্ঞেস করৰে কোথায় নেমন্তন্ন খেতে গেছলি র্যা তখন উত্তর দেওয়া মুসকিল হৰে৷ তাই চুপচাপ থাকাই ভাল৷ গুহায় ৰসে তপস্যা করতে যাচ্ছি শুনলে পুলিশও সমীহ করে পাশ কাটিয়ে চলে যাৰে৷ তাই সৰাই চুপ করলে৷
কিছুক্ষণ পরে এক নম্বর কোশাতকিন্ রামবাৰু চীৎকার করে ৰললেন–‘এই চুপ’ দুই নম্ৰর কোশাতকিন্ শ্যামবাবু আরও চীৎকার করে ৰললেন–‘এই চুপ’ তিন নম্ৰর কোশাতকিন্ যদুবাবু আরও গলা চড়িয়ে বললেন–‘এই চুপ’৷ চার নম্ৰর কোশাতকিন্ গলা খাঁকিয়ে ঝাঁঝাল সুরে ৰললেন–‘এই চুপ’৷ শেষ পর্যন্ত এই চুপ, এই চুপ আবাজে সেখানে মেছোহাটা বসে গেল৷ আবাজ শুনে পুলিশ দৌড়ে এল৷ তারপরে কী হয়েছিল আমাদের জানা নেই–কোশাতকিন্রাই জানেন৷
* * * *
শুনেছিলুম একবার কেষ্নগরে (‘কৃষ্ণনগর’কে কথ্য ভাষায় কেষ্নগর বলা হয়৷ তাই থেকে ইংরেজীতে ভুল করে বানান হয়েছে ন্ব্জন্ব্দড়ুত্রন্ধ্ত্রব্জ্)৷ কয়েকজন কোশাতকিন্ গভীর রাত্রে মদের মৌতাত করে ফিরছে৷ তাদের মধ্যে একজন পড়ে গেছল একটা কূয়োয়৷ ৰাকীরা চিন্তিত হ’ল৷ সাহেৰদের দেখাদেখি ওদেরও সোস্যাল সার্ভিসের (সমাজ সেবা) জন্যে প্রাণ ছটফট করে উঠল৷ তারা সৰাই নিজেদের মধ্যে এক প্রস্থ আলোচনা করে নিল ঃ
এই তো একটা সমাজ–সেবার সুযোগ এসে গেল৷ সেই গেল বছর স্বরূপগঞ্জের ঘাটে চূড়ামণিযোগে সোস্যাল সার্ভিসের সামান্য একটু সুযোগের ঝিলিকমাত্র পৌঁছেছিল৷ কিন্তু সেই সুযোগের ঝিলিকের দরুণ কোমরের ব্যথা আজও রয়ে গেছে৷ ব্যাপারটা হয়েছিল কি স্বরূপগঞ্জের ঘাটে একবার এই পাঁচজন কোশাতকিন্ গেছল রিলিফ ক্যাম্প করতে৷ কিন্তু বরাত খারাপ একজনও জলে ডুবল না যে তাকে উদ্ধার করে সোস্যাল সার্ভিস করা যায়....একজন শিশুও পথ হারাল না যে মাইকে বলা যায় ঃ ‘‘গোবরবাৰু আপনার ছেলে ভোঁদড় আমাদের ক্যাম্পে রয়েছে, আপনি এসে তাকে নিয়ে যান৷’’
এখন কী করা যায় তাঁরা দেখলেন, সাত বছরের একটি মেয়ে ঘাটের দিকে চেয়ে চপ খাচ্ছে৷ ওরা মেয়েটির কাছে গিয়ে ৰললে–হ্যাঁ খুকী, তুমি এমনভাবে ঘাটের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন? তুমি কি হারিয়ে গেছ?
মেয়েটি ৰললে–কই না তো, আমি তো হারায়নি৷
কোশাতকিন্রা ৰললে–না, না, তুমি হারিয়ে গেছ৷
মেয়েটি ৰললে–না, না, আমি মোটেই হারাইনি৷ এই দেখ, আমি এইমাত্র গরম চপ ভাজিয়ে এনে খাচ্ছি৷ তোমাদের যদি চপ খাবার ইচ্ছে হয়ে থাকে পয়সা দাও, আমি তোমাদের জন্যে চপ কিনে এনে দিচ্ছি৷
তারা ৰললে–না, না, আমরা সোজাসুজি চপ খাই না৷ কারণবারি পান করার পূর্বে চাট হিসেৰে চপ খেয়ে থাকি৷ তোমার আনা চপ খাৰ না৷
তারা ৰললে–খুকী, তোমার হাতে ৰালা–জোড়া নেই কেন? ৰালা কি চুরি গেছে?
মেয়েটি ৰললে–আমার হাতে কোনো কালেই ৰালা ছিল না৷
ওরা ৰললে–তবে তোমার নাকের নোলকটা কোথায় গেল?
মেয়েটি ৰললে–আমার নাক ৰেঁধানোই হয়নি৷ নোলক পরৰ কী করে
ওরা ৰললে–তাহলে আমরা ৰুঝছি, তুমি হারিয়েই গেছ৷
মেয়েটি তখন ঘাটের দিকে চেয়ে চীৎকার করে ৰললে–পিসিমা গো দেখ দেখ, লোকগুলো এখানে এসে কী সব আজেবাজে কথা ৰলছে৷
পিসিমা তখন সেইমাত্র স্নান সেরে পাট–করা ভিজে গামছাটা মাথায় রেখে একটা খ্যাংরার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ফুলঝাঁটার দরদস্তুর করছিলেন৷ ভাইঝির চীৎকার শুনে তিনি একটা ঝাঁটা হাতে সঙ্গে সঙ্গে সেদিকে ছুটে গেলেন আর চীৎকার করে ৰলতে লাগলেন–কে রে খ্যাংরা–খেকো পোড়ারমুখো মিনসে, আমার ভাইঝিকে ছিনতাই করতে এসেছিস আমি আমঘাটার জগদম্বাৰালা ৰামণী, ভূ–ভারতে....নদে জেলায় কে আমায় না চেনে যত পাপী ধান্ধাবাজ মু–পোড়ারা আমাকে সামনে দেখলে পেণ্ণাম ঠোকে আর আড়ালে গিয়ে ৰলে ডিঙ্গি–মারা ড্যাঙ্গর....হাড়–জ্বালানো হাঙ্গর৷ আজ তোদের একদিন কী আমার একদিন তোদের চউদ্দ দু’গুণে বাহান্ন পুরুষের নামধাম ভুলিয়ে খাস্তা করে দোৰ....ঝেঁটিয়ে মগজের বিষ ঝেড়ে দোৰ৷
পিসি এসে ওদের পিঠে সপাসপ ঝপাঝপ দমাদম ঝাঁটাপেটা করতে লাগলেন৷ ঝাঁটার ৰাড়ি খেয়ে ওরা তো পগার পার৷
* * * *
ওরাই আবার এ্যাদ্দিন পরে মাঝরাত্তিরে কূয়োয় পড়া কোশাতকিন্কে পেয়ে বর্ত্তে গেল৷ সোস্যাল সার্ভিসের সুযোগ পেয়ে ওদের হাত–পা নিশপিশ করতে লাগল৷ ওরা ৰললে–আজই একটা প্রেস কনফারেন্স করা যাক্৷
একজন ৰললে–না, আগে একটা প্রেস রীলিজ দেওয়া যাক্৷ আগে ওকে উদ্ধার করে তারপরে ৰড় আকারের প্রেস কনফারেন্স করলেই চলৰে৷
তৃতীয় একজন ৰললে–আগে খোঁজ নাও, ও মরেছে না ৰেঁচে আছে৷ মরলেই তা যুৎসই হৰে৷
সৰাই ৰললে–ঠিক বলেছিস, ঠিক বলেছিস, ........এটা হ’ল লাখ কথার এক কথা......৷ এ কথা জজেও মানৰে৷
ওরা সৰাই তখন কূয়োটার চারি পাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে ৰললে–ওরে ভোঁদা, আমরা তোকে উদ্ধার করতে এসেছি৷ আগে ৰল, তুই বেঁচে আছিস না মরে গেছিস৷ যদি মরে গিয়ে থাকিস তবে এক্ষুণি গিয়ে ৰাড়ীতে খৰর দিয়ে আসছি৷ আর তোকে দড়াদড়ি দিয়ে ৰেঁধে তুলে ঘাটে শেষ কেত্তো করতে নিয়ে যাৰ৷ যদি ৰলিস ৰেঁচে আছিস তাহলে হাসপাতালে খৰর দোৰ৷ ওরা এ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে দু’–তিন দিনের মধ্যেই তোকে তুলে নিয়ে যাৰে৷
কোশাতকিন্রা চীৎকার করে চলল৷ সেই শীতের রাতের ভারী বাতাসকে গরম করে দিয়ে তারা ৰললে–ৰল্ ব্যাটা, ৰেঁচে আছিস না মরে গেছিস৷ আমরা একটা সোস্যাল সার্ভিসের সুযোগ নোব৷