নির্ভয় হও

Baba's Name
শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী

কখনও এই পরিস্থিতি আসতে পারে তুমি বিরাট শক্তিশালী সত্তার কাছে পঁৌছে গেছ, যাকে তুমি খুব ভয় পাও৷ এই যে শক্তিশালী সত্তা, তার শক্তি বা তার সাহস আসছে কোথা থেকে? সেও তোমার পিতার কাছে থেকেই আসছে৷ নিজের শক্তি বলে কারোর কিছু আছে কি? না, তা নেই৷ খাদ্য, হাওয়া, জল, মাটি ইত্যাদি দ্বারা পরমপিতা শক্তি প্রদান করেন৷ ধর, এক বিরাট শক্তিশালী পালোয়ান– সেটা কি তার নিজের শক্তি? না, তা নয়৷ সে শক্তি তোমার পরমপিতার৷ তাই তার থেকে তুমি ভয় কেন পাবে? আর যে শক্তিমান, তার মনে যদি অহংকার এসে যায়, তাহলে তার পতন হয়ে যাবে কেননা তা তার নিজের শক্তি নয়৷ একথা তার মনে রাখা উচিত যে, যে শক্তির কারণে তার এই অহংকার, সেই অহংকারের কোনো যুক্তি নেই কেননা সেই শক্তি তার নিজের নয়৷

মানুষ নিজে থেকে কিছু তৈরী করতে পারে না৷ তার কাছে যা কিছুই আছে তার প্রভু  পরমাত্মা৷ শক্তির যেখানে দুরুপযোগ হবে সেখানে শক্তি ছিনিয়ে নেওয়া হবে৷ তাই তুমি ভয় করতে পার বা ভয়ার্ত হতে পার এরকম কোনো বস্তুই বিশ্বৰ্রহ্মাণ্ডে নেই৷ তোমার মধ্যে যে শক্তি, যে ৰুদ্ধি তা তাঁরই৷ তিনি এটাই চান, এই যে সৃষ্টিলীলা, এতে তোমার যে ভূমিকা আছে, তুমি তাকে যথাযথভাবে পালন কর৷ শক্তি–সাহসের সঙ্গে জগতের সেবা কর৷ মনীষার দ্বারা আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন কর, অন্যকে প্রকৃত পথ প্রদর্শন কর, খাও দাও আনন্দে থাক৷ পরমাত্মার গুণগান কর, সকলকে ভালবাস–সেটাই মানুষের কর্তব্য৷ সর্বদাই যে চিন্তিত থাকে কাল কী হবে, পরশু কী হবে, সে বোকা সে আসলে জানে না যে তার জন্যে ভাবনা–চিন্তা করা পরমাত্মার কাজ, তোমার কাজ হ’ল কর্তব্য করে যাওয়া৷ তুমি পৃথিবীতে এসেছো নিজের কর্তব্য করে যাও৷ তোমার জন্যে ভাবা বা চিন্তিত হওয়া, এটা পরমাত্মার কাজ৷ তুমি নিজের কাজ কর, আর তাঁর কাজ তাঁকে করতে দাও৷

তুমি যখন নিজের সম্পর্কে ভাবতে শুরু করে দেবে তখন পরমাত্মা ভাববেন যে, ‘পুত্র এত উপযুক্ত হয়ে গেছে, সেই নিজের সম্পর্কে ভাবতে পারে৷ তাহলে নিজের সম্পর্কে সেই–ই ভাবুক, আমিও তার সম্পর্কে আর ভাবব না৷’ এইজন্যে পরমাত্মাকে তাঁর কাজ করতে দাও৷ যখন তিনি নিজে থেকে বলবেন যে, ‘পুত্র, নিজের সম্বন্ধে নিজেই ভাব, এখন থেকে আমি আর ভাবব না’–তখন তুমি নিজের সম্বন্ধে ভাবতে পার৷ তখন তুমি বলবে–‘হে পরমাত্মা ভাববার ৰুদ্ধি তুমি আমাকে দাও৷’ তা নাহলে তাঁর ওপর সবকিছু ছেড়ে দাও৷ তুমি খাও, দাও, ভালো করে সাধনা কর, জনসেবা কর, মিলেমিশে থাক, ভগবানের ভজন কর আর সামনে এগিয়ে চল৷ যিনি তোমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তুমি কীভাবে থাকবে, বিপদের সম্মুখীন কীভাবে হবে, বিপদ থেকে কীভাবে রক্ষা পাবে, এসব তিনি ভাবুন, তিনি ৰুঝুন৷ তোমার মধ্যে যে ৰুদ্ধি আছে অর্থাৎ পরমাত্মা তোমাকে যে ৰুদ্ধি দিয়েছেন, তার সদুপযোগ কর৷

যেখানে তুমি দেখবে এক শক্তিমানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছ আর সেখানে তোমার শক্তি হারিয়ে ফেলেছ, সেই অবস্থায় পরমাত্মাকে বলবে, পরমাত্মার কাছে বলার তোমার অধিকার থাকবে–‘হে পরমাত্মা, আমার মধ্যে যে শক্তি ছিল, আমি সেই শক্তির সদুপযোগ করেছি৷ এখন তুমি যা ভালো ৰোঝ কর৷ আমার মধ্যে যতদূর ৰুদ্ধি ছিল, আমি তার সদুপযোগ করেছি৷ এখন তুমি ৰুঝে নাও’৷ কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত শক্তি বা ৰুদ্ধির পুরোমাত্রায় সদুপযোগ হয়নি ততক্ষণ পর্যন্ত এইরকম বলবার অধিকার তোমার নেই৷ পরমাত্মা তখন বলবেন যে– তোমার মধ্যে যে শক্তি আছে, ৰুদ্ধি আছে, আগে তার সদুপযোগ কর৷ ধর, তোমার সামনে খাবারের থালা রাখা আছে৷ আর তাতে রুটি আছে, আর তুমি পরমাত্মাকে বলছ,–‘হে পরমাত্মা, আমার মুখে রুটি তুলে দাও’, তখন পরমাত্মা বলবেন, ‘তোমার হাতে শক্তি আছে, রুটি নিজেই উঠিয়ে নাও৷ আর যখন তোমার শক্তি থাকবে না তখন আমি নিজে থেকেই ব্যবস্থা করে দেব, অন্য কোনো মানুষের দ্বারা তোমার মুখে রুটি তুলে দেব৷’ তাহলে পরমাত্মা থেকে যে শক্তি–সামর্থ্য পেয়েছ তার পুরো সদুপযোগ করতে থাক, হাসতে হাসতে জীবন ব্যয়িত কর৷

আমি এলাহাবাদে বলেছিলুম যে তোমার জন্মই হয়েছে হাসবার জন্যে, কর্তব্য করবার জন্যে, জনসেবা করবার জন্যে, সাধনা করবার জন্যে, বিদ্যাৰুদ্ধির উৎকর্ষতা সাধনের জন্যে–কাঁদবার জন্যে তোমার জন্ম হয়নি৷ কাঁদা জীবনের ধর্ম নয়, যে কাঁদছে সে জীবন ধর্ম খুইয়ে বসেছে৷ তাই কাঁদবে না৷

দুঃখেও হাসবে৷ সে অবস্থায় বলবে, ‘হে পরমপুরুষ তুমি দুঃখ দিয়েছ কিন্তু দেখ আমি হাসছি –অর্থাৎ এখানে তোমার পরাজয় হয়ে গেল তুমি আমাকে কাঁদাতে চেয়েছিলে কিন্তু আমি তো কাঁদিনি৷’ এই জন্যে তোমরা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চল, ভালো করে সাধনা কর, জনসেবা কর, হাসতে থাক৷ হাসবার জন্যেই তো তুমি পৃথিবীতে এসেছো৷ আর যে কাঁদবে তাকে খুব বকে দেবে আর বলবে তুমি কেঁদ না, তোমার জন্যে পরমাত্মা বরং কাঁদবেন, যিনি তোমাকে এই ধরায় পাঠিয়েছেন৷ তাই তুমি হাসতে থাক৷ যেখানেই আছ পরমাত্মার মধ্যে আছ, সর্বদা তাঁর কোলে বসে আছ৷ তাই তুমি কখনও কোনো অবস্থাতেই নিরাধার নও৷ ধর, চারিদিকে ঘন অন্ধকার আর তুমি সেখানে পঁৌছে গেছ, কোন্ দিকে যাবে তা জান না৷ সেই অবস্থাতেও হতাশ হবার কোনো কারণ নেই, কেননা আকাশের যে তারা, চাঁদ–এরা সব তো চলছে পরমাত্মারই নির্দেশে৷ চাঁদের দ্বারা, তারার মাধ্যমে তিনি তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবেন৷ তুমি নিজে কেন বিচলিত হবে৷ বিচলিত হবার কোনো কারণই নেই৷ তাই আমি বলি যে মানুষের জীবনে এই অবস্থা কখনোই আসতে পারে না বা হতেই পারে না, যে অবস্থায় তার বিচলিত হবার কারণ থাকতে পারে৷ তাই বিচলিত হবে না, সামনে এগিয়ে চল৷ (আনন্দবচনামৃতম, ষড়বিংশ খণ্ড)