পোস্ত

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

পরিচয়ঃ পপিনামে এক রকমের ছোট ফুলের গাছ ইয়ূরোপ থেকে এদেশে এসেছিল৷ এটি শীতকালের মরশুমী ফুল৷ ভারতে এখন শখের ফুল হিসেবে অনেকেই বাগানে চাষ করেন৷ ফুলের রঙ নানান ধরনেরলাল, শাদা, হলদে, ক্ষেগনে৷ এটি নির্দোষ বা নির্বিষ বর্গীয়৷ ফুল ঝরে যাবার পর এর গাছে যে ক্ষীজকোরক আসে সেটা ছোট ও লম্বাটে৷ তার গা চিরে দিলে যে রস বের হয় তা নির্দোষ৷ ক্ষীজকোরকে যে ক্ষীজ হয় তা কালচে রঙের৷ এই পপির যে প্রজাতিটি ওপিয়াম পপি নামে পরিচিত, তা কিন্তু ভারতে বিদেশ থেকে আসেনি৷ সেটা এদেশেরই ফুল৷ সাধারণ পপি ও ওপিয়ামপপির মধ্যে তফাৎ হ, সাধারণ পপির চেয়ে এর পাতা ক্ষড়, মোটা, পুষ্ট ও সতেজ ও একটু বেশী রকমের জোরালো সবুজ৷ সাধারণতঃ এর ফুল ঘিরঙের, দেখতে সাধারণ পপির ফুলের মতইতবে একটু ক্ষড়৷ ক্ষ্রিটেনে দেখেছি, কোন কোন চাষী শখ করে গমের ক্ষেতের ভেতরে কিছু সাধারণ পপির ক্ষীজও ছিটিয়ে দেন৷ ফুল ফুটলে ভারী সুন্দর দেখায়৷ সেগুলির কেউই ওপিয়ামপপি নয়৷ ভারতেও বাগানে কেউ ওপিয়ামপপি লাগান না৷ লাগানো আইনতঃ নিষিদ্ধ, কারণ ওপিয়ামপপির চাষ কেন্দ্রীয় সরকারের আক্ষগারী বিভাগ কর্ত্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে৷

পোস্ত সাত্ত্বিকপোস্তর গুণাগুণ : ওপিয়াম পপির ক্ষীজকোরক সাধারণ পপি থেকে ক্ষড় ও পুষ্ট৷ এর গা চিরে দিলে এর থেকে রস বা আঠা বেরোয়৷ তাই হল কাঁচা আফিং৷ এই ওপিয়াম পপির ক্ষীজকোরকে যে ক্ষীজ থাকে তার রঙ ফিকে ঘিরঙের, তাকে আমরা পোস্ত বলে থাকি৷ কী অদ্ভুত ব্যাপার, পোস্তর ক্ষীজকোরকের আঠা ক্ষড় রকমের নেশা ও অধিক মাত্রায় সেবন করলে ক্ষড় রকমের বিষ, অথচ ভেতরকার ক্ষীজ পোস্তর দানা, যা একটি সত্ত্বগুণসম্পন্ন বস্তু, তা শরীরের স্নিগ্ধতা বজায় রাখতে সাহায্য করে৷

তরল ভেদবমিতে ও উদরাময়ের ক্ষাড়াক্ষাড়ি অবস্থায় গরম ভাতে অল্প পরিমাণ কাঁচা পোস্ত ক্ষাটা ঈষৎ লবণ সহযোগে ভক্ষণ করলে দ্রুত রোগ অপসারণে সাহায্য করে৷ ক্ষাংলার মানুষ (বিশেষ করে রােের মানুষ) পোস্তর ক্ষড়া তো খায়, আলুপোস্ত, ঝিঙ্গেপোস্ত, ড়িপোস্ত, কুঁদরীপোস্ত, কাঁচা পোস্তক্ষাটাসবই সাগ্রহে খেয়ে থাকে৷ কথায় লে ‘‘অতি সর্বত্র বর্জয়েৎ’’৷ খুব বেশী পোস্ত খেলে অপাক আমাশয় হতে পারে৷ তবে মাঝারী পরিমাণ পোস্ত খেলে তা স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দুয়ের ক্ষৃদ্ধিতেই সাহায্য করে৷

পোস্ত শরীরকে পোষণ করে ক্ষলে সংস্কৃতে এর একটি নাম পোষিত (পোষিতঞ্ছ পোষ্তঞ্ছপোস্ত–‘মূর্দ্ধ বর্ণ৷ তার সে৷ দন্ত্য বর্ণ এর সংযুক্তি হয় না৷ তাই পোস্তবানানে এর স্থানে এর আগম হচ্ছে)৷

পোস্ত ও রাবাসী ঃ আফিং গাছের ক্ষীজকোরকের দানা (পোস্ত) একটি সাত্ত্বিক খাদ্য৷ এর পৌষ্টিক গুণ ও তৎসৎ ঔষধীয় গুণও রয়েছে৷ ক্ষাংলার, বিশেষ করে রাঢ়ের মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য হচ্ছেএই পোস্ত৷ রাঢ় একটি দরিদ্রভূমিঅন্ততঃ বর্ত্তমান সমাজব্যবস্থায়৷ রাঢ়ে আফিং চাষ করতে দেওয়া হয় না৷ তাই রাঢ়বাসী তাদের প্রিয় খাদ্য ক্রয়ের জন্যে লক্ষ লক্ষ টাকা তো বটেই, এমনকি কোটি কোটি টাকাও ব্যয় করে বাইরে থেকে এই পোস্ত কেনবার জন্যে৷ গত ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৪ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক  মন্দার (economic depression) সময়েও তরল ভেদবমিতে ও উদরাময়ের বাড়াবাড়ি অবস্থায় গরম ভাতে অল্প পরিমাণ কাঁচা পোস্ত ক্ষাটা ঈষৎ লবণ সহযোগে ভক্ষণ করলে দ্রুত রোগ অপসারণে সাহায্য করে৷ কথায় ক্ষলে ‘‘অতি সর্বত্র বর্জয়েৎ’’৷ খুব বেশী পোস্ত খেলে অপাক আমাশয় হতে পারে৷ তবে মাঝারী পরিমাণ পোস্ত খেলে তা স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দুয়ের ক্ষৃদ্ধিতেই সাহায্য করে৷

মানভূম জেলার চাণ্ডিলের গ্রামাঞ্চলে দেখেছি গরীব মজুর শ্রেণীর মানুষও পাঁচটি পয়সা নিয়ে বেণের দোকানে (লটকনের দোকান) গিয়ে কিনত ১ পয়সার চাল, ১ পয়সার ডাল, ১ পয়সার সরষের তেল, ১ পয়সার হলুদ তথা মশলা, ও ১ পয়সার পোস্ত৷ আজ এক পয়সায় পোস্তর একটা দানাও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ৷ পোস্ত অর্থাৎ আফিমের চাষ কেন্দ্রীয় আক্ষগারী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে হয়ে থাকে৷ তা হোক, এটা বাঞ্ছনীয়ও৷ তবে আক্ষগারী বিভাগের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রেখে রাঢ়ে প্রয়োজন মত পোস্ত পাওয়ার জন্যে যে পরিমাণ আফিম চাষের প্রয়োজন, সেই পরিমাণ আফিম চাষের অনুমতি দেওয়া উচিত৷ অন্যথায় এই পোস্ত কিনতে গরীব রাঢ়ের অর্থের বহিঃস্রোত ক্ষন্ধ করা যাবে না৷ হ্যাঁ, একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গরীব রাঢ়বাসী যাতে আফিংয়ে আসক্ত না হয় সেইজন্যে এই চাষের ওপর কড়া সরকারী তদারকী থাকা দরকার৷         

উৎস

  (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের দ্রব্যগুণে রোগারোগ্যথেকে)