প্রভাত সঙ্গীত--- নবজাগরণের সঙ্গীত

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

১৪ই সেপ্ঢেম্বর প্রভাত সঙ্গীত দিবস৷ ১৯৮২ সালের এই দিনে পরমশ্রদ্ধেয় মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার যিনি ধর্মগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী রূপে সমগ্র বিশ্বে পরিচিত৷ তিনি এই দিন শুরু করেন তাঁর যুগান্তকারী প্রভাত সঙ্গীত রচনা৷ যিনি মাত্র আট বছর এক মাস সাত দিনের মধ্যে ৫০১৮টি প্রভাত সঙ্গীত রচনা করেন ও তাতে নিজেই সুরারোপ পরেন৷ আর তাঁর প্রতিটি সঙ্গীতই ভাব-ভাষা-সুর ও ছন্দে অভিনবত্বের দাবীদার৷

বলা বাহুল্য, তিনি কেবল সঙ্গীতকার নন, তিনি যুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক যুগান্তকারী আধ্যাত্মিক দর্শন আনন্দমার্গের প্রবক্তা, তাঁর সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্ধ কুসংস্কার, ভাবজড়তা, ভৌম ভাবপ্রবণতা, গোষ্ঠী ভাব প্রবনতা এমনকি তথাকথিত মানবতাবাদের সঙ্কীর্ণ গণ্ডী থেকে মানুষের বুদ্ধির মুক্তি ঘটিয়ে মানব সমাজকে উপহার দিয়েছেন অভিনব ‘নব্যমানবতাবাদ তত্ত্ব’---যা মানুষকে বিশ্বের সমস্ত মানুষ, পশুপাখী, তরুলতাকে এক পরমব্রহ্মের অভিপ্রকাশ রূপে ভালবাসতে শিখিয়েছে৷ তাঁর দেওয়া এই নব্যমানবতাবাদ তত্ত্বের ওপর আধারিত নোতুন শিক্ষা দর্শন যথার্থ মানুষ তৈরীর পন্থা হিসেবে দেশে দেশে আদৃত হয়েছে৷ তাঁর রচিত ভাষাতত্ত্ব ও ব্যকরণ বিজ্ঞানও বিদ্বৎ মহলে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷ তাঁর রচিত নতুন সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব ‘প্রাউট’ (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব)আজ নিপীড়িত মানবতার শোষণমুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাচ্ছে৷ বিশ্বমানবের সর্বাত্মক কল্যাণে তাঁর সর্বতোমুখী প্রয়াসের পাশাপাশি তাঁর রচিত এই প্রভাত সঙ্গীত স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বমানবতার নবজাগরণের সঙ্গীত, ঘুম ভাঙ্গানোর গান৷

বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নিবিড় ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই  আমরা দেখব, মানুষ আজ হুঁশ হারিয়ে দিশাহীনভাবে ছুটে চলেছে৷ জীবনের উদ্দেশ্য কি, লক্ষ্য কি---বিন্দুমাত্র সে সব চিন্তা না করে মানুষ নিজের কর্তব্যাকর্তব্য ভুলে উন্মাদের মত ভোগের পেছনে---অর্থের পেছনে ছুটে চলেছে৷ হারিয়ে ফেলেছে তাঁর মানবিক গুণ, হারিয়ে ফেলেছে নৈতিক মূল্যবোধ৷ ফলে সমগ্র সমাজ জুড়ে নেমে এসেছে নিদারুণ অবক্ষয়, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়৷ হারিয়ে ফেলেছে ব্যষ্টিগত জীবনের ও পারিবারিক জীবনের প্রকৃত শান্তি, হারিয়ে ফেলেছে সমাজ জীবনের সুস্থিতি৷ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলার নাম সমাজ৷ আজ সেই সমাজবোধটাই আমরা হারিয়ে ফেলেছি৷ তাই সর্বত্র দুর্নীতি ও শোষণের রাজত্ব চলছে৷

এই লাঞ্ছিত, অবনমিত, শোষিত মানবতাকে সমস্ত লাঞ্ছনা, অমানবতা ও শোষণের হাত থেকে মুক্ত করতে সর্বানুসূ্যত আদর্শের প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাত রঞ্চন সরকার তথা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আবির্ভাব৷  তাঁর রচিত ‘প্রভাত সঙ্গীত ’ তাই প্রকৃতপক্ষে মানবতার নবজাগরণের সঙ্গীত৷ প্রভাত সঙ্গীত তাই আজকের যুগে পুঞ্জিভূত অমানিশার অবসান ঘটিয়ে নব-প্রভাতের বার্তা বহন করছে৷

বিশ্বকবির ভাষায়---‘প্রভাত কী রাত্রির অবসানে? যখনই জেগেছে চিত্ত / শুনেছো বাণী / তখনই হয়েছে প্রভাত’৷ সেই নব প্রভাতের উত্তেরণের আকুতি নিয়ে প্রভাত সঙ্গীতের যাত্রা শুরু৷

তাই ১৯৮২ সালের ১৪ই সেপ্ঢেম্বর রচিত প্রথম প্রভাত সঙ্গীত ছিল---

‘বন্ধু হে নিয়ে চলো

আলোর ওই ঝর্ণাধারার পানে৷৷

আঁধারের ব্যথা আর সয় না প্রাণে

ঘুমের ঘোর ভাঙানোর গানে গানে৷’   (এরপর আগামী সংখ্যায়)