পুরুষ, কিন্তু মানুষ নয়

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

প্রথম মহিলা যাত্রী হলে বাসের দিন খারাপ যাবে, দুর্ঘটনা্য ঘটতে পারে--- এমন কুসংস্কার থেকে বাসের এক যাত্রী প্রথম মহিলা বলে তাকে থামানো হলো৷ ঘটনাটি ঘটেছে উড়িষ্যায়৷

আজকাল মেয়েরা তো  গাড়ী চালায়, পরিবহন দপ্তর এমন পরিসংখ্যানতো কখনো প্রকাশ করেননি যে মহিলা-চালিত গাড়ী তুলনায় বেশি দুঘর্টনা ঘটায়৷

যেসব পুরুষ মেয়েদের অপয়া ভাবেন তারা কিন্তু ভূমিষ্ট হওয়ার পর প্রথম যার মুখ দেখেন তিনি একজন নারী---জননী৷ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার রোগ মুক্তি ঘটাতে যিনি ইংজেকশন পুস করেন তিনি কিন্তু একজন নারী---নার্স৷ বাস চালাবার জন্য বাড়ি থেকে  খেয়ে বেরোতে হয়৷ সেই খাবার তৈরী করেন একজন নারী---মা,দিদি অথবা পরিচারিকা৷ শৈশবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিদিমণির কাছেই তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন৷ প্রতিবছর ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ায় দীর্ঘায়ু কামনা করে কপালে যে মাঙ্গলিক ফোঁটা দেয় সেও একজন নারী---বোন বা দিদি৷ অন্তর থেকে সে বলে‘‘ভ্রাতামে চির আয়ুর্ভবতু৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের কথাতেই বলি---‘‘পতির পীড়ায় নারী তাকে যেভাবে সেবা করে পত্নীর অসুস্থতায় পুরুষ কি তাকে ততখানি সেবা করে?’’

আচ্ছা, বাসে যে প্রথম আরোহিনী যাত্রীকে অপয়াভাবা হয়েছিল, এমন হতে পারে ঐ বাসটির দুর্ঘটনা ঘটার কথা ছিল শুধুমাত্র ঐ মহিলা যাত্রীটির কপালগুণেই তা হলো না৷ তার জীবনে সেদিন দুঘর্টনা ছিল না বলেই বাসটি রক্ষা পেল৷

ঘটনাটি যখন বাসের তখন বাসেরই উল্টো একটি ঘটনা আমি দেখেছি৷ শ্রীরামপুরের ৩নং বাসের তখন রমরমা ব্যবসায়৷ একদিন সকাল বেলা সস্ত্রীক ৩নং বাসে আমি উঠলাম৷ বাসটি ছিল ফাঁকা,একজন ও প্যাসেঞ্জার ছিল না৷ ওঠার সময় দেখলাম একটি অপূর্ব সুন্দরী তরুণী আমাদের আগে এসেও বাসে না উঠে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমরা ওঠার পরে সেও বাসে উঠলো৷ পরে তাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করাতে সে বললো, ভয়ে৷ ফাঁকা বাসঙ্গী বাসের কন্ডাক্টার খালাসীদের সে বিশ্বাস করতে পারেনি৷ বাস-কর্ত্তৃপক্ষের একথা শুনতে কেমন লাগছে?

মোদ্দাকথা, যারা মেয়েদের অপয়া ভাবে, মনের মধ্যে  নারী-বিদ্বেষ পোষণ করে, কোন কাজে পারদর্শিতা দেখে প্রশংসা না করে মেয়েদের ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে, সুযোগ পেলেই ঠোট বেকিয়ে মেয়েদের অবমূল্যায়ণ করে তারা হতে পারে পুরুষ, কিন্তু মানুষ নয়৷