রাষ্ট্রায়াত্ত মূল কারখানা গুলিকে বিলগ্ণীকরণ করাটা  উন্নয়ণশীল গণতান্ত্রিক দেশে মারাত্মক ক্ষতিকারক

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্তমানে যে প্রশ্ণটা সর্বাগ্রে সাধারণ জনগণের  দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সেটা হলো এদেশের দলীয় শাসকগণ ‘‘গণতন্ত্র’’ শব্দটির কী সত্যই অর্থ আত্মস্থ  করতে পেরেছেন? গণতন্ত্রের মানে তাঁরা বোঝেননি৷ তাই দীর্ঘ ৭২ বছরের শাসনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ও হচ্ছেন হতভাগ্য জনগণই৷ আর রাজনৈতিক দলের নেতারা সব কিছুতে জল ঘোলা করে নিছক সেই ঘোলা জলে  নিজেদের দলীয় স্বার্থকেই রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর৷

দেশের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো  বেকার সমস্যা৷ রাষ্ট্রায়াত্ত কলকারখানা গুলিতে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেগুলির সমস্যা সমাধান করতে হবে৷  তা না করে কি কেন্দ্র সরকার  আর কি  রাজ্য সরকার নিজেদের  দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে সেগুলিকে বেসরকারীকরণ করে ধনীদের হাতে  তুলে দিচ্ছে৷ কারণ একটা---সেটা  হলো সরকার সেগুলি থেকে চড়ামূল্যে কর আদায় করে নিজেদের দলীয় শাসন চালাচ্ছে, অথচ শাসক হিসাবে কোন দায়িত্ব কাঁধে নেবেন না৷

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয় পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার শিকার দলগুলি৷ তাই কি কেন্দ্রে, কি রাজ্যে পুঁজিবাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে জনগণের উন্নয়নমূলক সব কাজেই ব্যর্থ৷ দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির  নিয়ন্ত্রণে একেবারেই  পশ্চাদপদ, বেকার সমস্যাতো জ্যামিতিক হারে  বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ মানুষের  মনকে ঘুরিয়ে দিতে  সব ব্যাপারে  তারা দলীয় কোন্দলে ব্যস্ত৷ তাছাড়া বিগত সরকারগুলিকে সব ব্যাপারে দোষারোপ করে চলেছে৷ আসল প্রশ্ণে আসা যাক৷ সরকারকে অবশ্যই  মূল শিল্পকে সরকারের হাতে রাখতে হবে৷ কিন্তু  সরকারগুলি শাসন চালাতে গিয়ে দারুণ ঋণভারে জর্জরিত  হয়ে জাতীয় ঋণের  পরিমানকে  আকাশছোঁয়া করে বসেছেন৷ এটা তো শাসকদলের চরম ব্যর্থতা৷ রাষ্ট্রায়াত্ব ৪২টি কারখানা বিলগ্ণিকরণের  সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্ত্তমান কেন্দ্রীয় সরকার৷ গণতন্ত্রে সরকার হবে সেবক৷ সরকারের পরিচালনাধীন উৎপাদনমূলক মূল শিল্পগুলিকে হতে হবে লাভও নয়  আর লোকসানও নয়---এই   নীতিতে  প্রতিষ্ঠিত৷ কারণ সরকারকে জনগণকে সেবা দিতে হবে৷ সরকারের অধীন কলকারখানা লোকসানে চলছে৷ এ কথাটাতো প্রশাসনিক ব্যর্থতার নজির৷ এই কারখানাগুলির মধ্যে আছে পশ্চিম বাঙলার চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা, আর দুর্র্গপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট৷ এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে  ইউনিয়নগুলি লড়াই করে চলেছে৷ আজ নোতুন সরকার কেন্দ্রে বসেছেন৷ যদিও তাঁরা গত  পাঁচ বছর গদীতেই ছিলেন৷ এই পাঁচ বছরে তাঁরা এই সমাধান করতে পারেননি৷

আজ পশ্চিম বাঙলার কেন্দ্রীয় সরকারী দলের এমপি বলছেন ‘‘বিলগ্ণীকরণ থেকে  সরবে না কেন্দ্র৷’’ সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় বলেন যে তারা গত২০১৬ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিলগ্ণীকরণ নীতির বিরুদ্ধে  আন্দোলন  করে আসছেন৷ ঐসব কলকারখানাগুলির আধুনিকী করণের মাধ্যমে কারখানাগুলিকে আরো উৎপাদন মুখী, করে তোলার জন্য কিন্তু কেন্দ্র সরকারের সেদিকে তিলমাত্র নজর নেই৷ তিনি বোভের সঙ্গে বলেন যে বিজেপি এমপি যিনি মেদিনীপুর থেকে নির্বাচিত তিনি কেবল কারখানার কর্মরত শ্রমিকদের বেতনটাই দেখছেন৷ কারখানার শ্রমিকরাতো পরিশ্রম করে বেতন গ্রহণ করেন৷ তিনি তো আসানসোল শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের কল্যাণ এর অনেক কথাই বলেছেন, কিন্তু  এই পুরাতন কারখানাগুলিকে বেসরকারীকরণ অর্থাৎ ধনী ব্যবসাদারদের হাতে তুলে দিলে তাঁরা তো কর্মী ছাটাই করবেন৷ তাতে তো নোতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে৷ তিনি হতভাগ্য কর্মীদের ভবিষ্যতের  কথা তো ভাবছেন  না৷ দিলীপবাবুর উক্তির  প্রকাশ পাচ্ছে তিনি যেন বেসরকারী করণের পক্ষে দালালী করছেন, যেটা কট্টর  ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাতে চলে বা হয়ে থাকে৷ কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়ণশীল দেশে চলে না৷  এখানে অবশ্যই মূল শিল্পগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে  আর্থিক সাহায্য দিয়ে পুরাতন যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ অবশ্যই করতে হবে আর উৎপাদন বৃদ্ধি করে কারখানাগুলিকে  সচল রাখতে হবে যাতে এই কারখানাগুলিতে আরও বেশী কর্মসংস্থান হতে পারে৷

বিলগ্ণীকরণ এর অর্থ হলো কেন্দ্রের ও রাজ্য সরকার পঁুজিবাদীদের হাতে মূল শিল্পকে ছেড়ে দিয়ে দেশকে আরো শোষণ এর পথে ঠেলে দেওয়া৷ গণতন্ত্রের যে লক্ষ্য সমাজবাদ অর্র্থৎ সামাজিকীকরণের পথে দেশকে নিয়ে যাওয়া সেটা  না করে সরকার ধনীদের শোষণের পথ প্রশস্থ করছে৷ তাই জনগণের প্রতিনিধিদের  অবশ্যই সেবার মানসিকতা নিয়েই এগিয়ে চলতে হবে৷ এটাই জনগণ আশা করে৷