রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়াটা কি প্রয়োজন নয়?

লেখক
প্রভাত খাঁ

জনসংখ্যা বহুল ভারতের বুকে গণতন্ত্রের নামে যে শাসন চলছে সেই কোটি কোটি হত দরিদ্র নাগরিকগণ যাদের  ভোট ছল-বল-কৌশলে যে টেনে নিচ্ছে স্বার্থান্ধ দলতান্ত্রিক  নেতা ও নেত্রীগণ সেটা গত দীর্ঘ ৭৫ বছরে জানা হয়ে গেছে এদেশের নাগরিকদের৷ রাজতন্ত্র চলে একক ব্যষ্টি রাজার ইচ্ছায় আর বর্তমানের গণতন্ত্র চলে অধিকাংশ ব্যষ্টি নিয়ন্ত্রিত দলের নিয়ন্ত্রণে সেটি যে জনগণের স্বার্থে চলে না সেটা বিশেষ ব্যষ্টি যিনি রাজনৈতিক দল ঘটন করেন তাঁর ইচ্ছানুসারে চলে৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার শাসনে নিজের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থা জারি করেন লোকসভাকে না জানিয়ে জোর করে সহি করিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকিরুদ্দীন সাহেব কে দিয়ে৷ এই ঘটনা যখন তৎকালীন জনৈক সাংবাদিক জরুরী অবস্থা জারীর পর তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন৷ তখন তিনি দুঃখ করে বলেন আমি বিশ্বাস করে না পড়ে সহি করেছি৷ আমি দুঃখীত!

এখন প্রশ্ণ যে দেশে এই সব চলে গণতন্ত্রের নামে তখন একটা বড়ো প্রশ্ণ জাগে তা হলো দেশের সর্ব দিক থেকে যিনি  প্রধান তাঁর নির্বাচনটি কেন জনগণের বোটে হয় না? সেই  নির্বাচনটি যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি কেন শুধু সেই এম.এল.এ ও এমপিদের দ্বারা হবে!---কারণ এম.এল.এ ও এমপিরা যেমন নির্বাচিত জনগণের দ্বারা ঠিক তেমনটাই তো হওয়া উচিত৷ যাঁর সবচেয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা বেশী সেটি কেন ঐ দলতন্ত্রের প্রেরিত প্রার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নির্বাচন করবো রাষ্ট্রপতিকে? তাঁর তো স্বাধীনতা থাকবে দেশকে রক্ষা করার দায়৷ তিনি কেনই বা ঐ কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রীর দলের ইচ্ছানুসারে ইয়েস ম্যান হয়ে চলবেন? এতেই বোঝা যায় দলতন্ত্র নিছক ধনীদের দ্বারা চালিত হয় সেটি যে ধনীদের তল্পীবাহক  সেটাকে কি করে অস্বীকার করা  যায়?

আজ যাঁরা কেন্দ্রে শাসকে আছেন তাঁরা তো সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে হিন্দুত্ববাদের নামাবলি গায়ে দিয়ে বিরোধী দলের সরকার গুলোকে ছল বল কৌশলে টাকার খেলা খেলে কব্জা করে এক অনৈতিক সংবিধান বিরোধী কাজ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে উঠে পড়ে লেগেছেন৷ এটা কী  গণতন্ত্রের নীতি? দল ভেঙ্গে যারা যায় তারা দল বিরোধী কাজ করে আইনত৷ বিশ্বাসভঙ্গ করছেন বোটারদের সঙ্গে! সেটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে গণতন্ত্রের তল্পীবাহক শাসকগণ৷ তারা তা হলে কি ধরণের গণতন্ত্রী প্রেমী ও জনগণের সেবক? এটা কিন্তু দেশের সচেতন প্রতিটি নাগরিকের প্রধান প্রশ্ণ৷ সবাই তো পাঁচবছরের জন্য এসেছেন দেশকে সেবা দিতে৷ পাঁচবছর ধৈর্য্য রেখে ধরে থাকার যাদের শক্তি নেই তাদের কি উচিত নয় শাসক এর দায়িত্ব থেকে বিদায় হওয়া৷ তাদের বিবেক কী বলে? এটা তো সংবিধানের প্রতি ও গণতন্ত্রের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা করা৷ তাই ইন্দিরাকে বিদায় হতে হয়েছে শাসন ব্যবস্থা থেকে৷ ইমারজেন্সির পর নির্বাচনে তিনি হেরে যান৷ হত দরিদ্র জনগণও বিবেকবান ভোটারগণ তাঁকে মেনে নেননি৷

বর্তমানে যে দলই শাসনে আসছে তারা নির্বিচারে জনগণের উপর নানাধরণের কর চাপিয়ে দলের তহবিল পরক্ষে বৃদ্ধি করে প্রচার যন্ত্র বসাচ্ছে দলে ও তার মাধ্যমে দলীয় প্রচার চালাচ্ছে নিজেদের মনের মত করে৷ নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে জনগণকে গদীকে দীর্ঘস্থায়ী করতে৷ ইন্দিরার পর জনতা দল শাসনে আসে৷ তাদের ষড়যন্ত্রকারী বেশী দিন শাসন চালাতে দেয়নি৷ জনতা দল সিদ্ধান্ত নেয় হিংস্র অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থা জারি কোন সরকার এ দেশে নাকি ঘোষণা করতে পারবে না ভবিস্যতে৷ তবে দুষ্টের ছলের অভাব হয় না৷ জনতা ভেঙ্গেই নাকি বিজেপি দল হয়৷ জনগণ জানে৷ এই ধরণের ভয়ঙ্কর জরুরী অবস্থা করবে কিনা! তবে এরা যেভাবে নানা করভারে ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর জিএসটি কর নির্মমভাবে বসাচ্ছে তাতে দরিদ্র জনগণ আর বেশি দিন বাঁচবে বলে মনে হয় না! অনাহারে তাঁরা মারা যাবেন৷ সেবা দেবার নামে যারা শাসনে এসেছে তারা চরম শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ! তারা ইন্দিরাকেও হার মানাচ্ছে৷

আজ ভারতে দলছুট দলের সংখ্যা বেশী৷ সর্বভারতীয় দল প্রায় শেষ৷ এদিকে বিজেপির শাসনে বিরোধী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কোনগুরুত্বই নেই লোকসভায় ও বিধানসভা যেখানে বিজেপি শাসন চলছে সেথায়৷ এই দল যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই তেড়ে ফুড়ে এক নায়কতন্ত্রের দিকে এগুচ্ছে!

এই ধরণের মানসিকতা কিন্তু গণতন্ত্রের প্রতি মারাত্মক! শ্রীলঙ্কাই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ৷ তবে সেটা অতি ক্ষুদ্র দেশ৷ ভারত বিশাল দেশ৷ এখানে তনুমন এক হওয়াটা সম্ভব পর নয়৷ তবে ভারতের দলীয় শাসকদের কিন্তু কিছুটা রাজধর্মও ন্যায়ধর্ম পালন করে চলাটা নৈতিক দিক থেক আবশ্যিক৷ তাতে নাগরিকদের কিছুটা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় থাকবে৷

ভারতের নাগরিকদের শ্রদ্ধা ছিল মাননীয় অটল বিহারীর প্রতি তিনি রাজধর্ম পালন করতে ও জনগণের স্বার্থ দেখতেন৷ তাই তিনি স্মরণীয়৷

মানুষ দাবী করেন বিজেপি সরকার তাঁকে যেন অস্বীকার করে একনায়কতন্ত্রের দিকে পা না বাড়ায়৷

মনে রাখা দরকার রাজনৈতিক স্বার্থে ধান্দাবাজ সব দলই গোষ্ঠী সেন্টিমেন্ট নিয়ে প্রার্থী দাঁড় করায় নিজেদের দলীয় স্বার্থ সিদ্ধি করতে৷ জেনে রাখা দরকার জনগণ সবই দেখছেন আর সবই বুঝছেন তা হলো এই সব কাজ তাঁরা পছন্দই করছেন না৷ গণতন্ত্রে যদি রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে  নিঃস্বার্থ সেবা না দিয়ে শুধু নিজেদের ধান্দাবাজি করে গদীর মোহে তাহলে অবশ্যই একদিন হিতে বিপরীতই হবে৷

বর্তমান যে নির্বাচনটি হলো তাতে সংকীর্ণ জাত-পাতের ভাবাবেগকে উস্কে দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করে শাসক দল৷ বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহা৷ কিন্তু এম.এল.এ, এম.পি-রা বোট দেয় দলীয় নির্দেশে৷ তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীর গুণাগুন বিচার করা হয় না৷ তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রকৃত জনমত যাচাই করতে প্রত্যক্ষভাবে জনগণের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন৷