রসায়নের ওপর মাইক্রোবাইটামের প্রভাব

লেখক
শ্রী সমরেন্দ্রনাথ ভৌমিক

মাইক্রোবাইটাম আবিষ্কারক  শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের মতে---‘একটি কার্বন পরমাণু কোটি কোটি মাইক্রোবাইটামের সমষ্টি মাত্র৷ শুধুমাত্র কার্বন পরমাণুই নয়৷ হাইড্রোজেন, অক্সিজেন,  সালফার প্রভৃতি মৌলগুলিও অসংখ্য মাইক্রোবাইটাম দ্বারা গঠিত৷’ যেহেতু সমস্ত মৌলই মাইক্রোবাইটাম সঞ্জাত অর্থাৎ সমস্ত মৌলের উপাদানই হ’ল মাইক্রোবাইটাম, সুতরাং সমস্ত জৈব ও অজৈব যৌগের সংরচনায় মাইক্রোবাইটামের ব্যাপক ভূমিকা থাকবে৷  বৈবহারিক ক্ষেত্রে মাইক্রোবাইটাম প্রয়োগ করলে রাসায়নিক ফরমূলায় বা সংরচনায় অবশ্যই পরিবর্তন ঘটবে৷ এযাবৎ যত জৈব ও অজৈব যৌগের সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের অভ্যন্তরীণ সংরচনায় মাইক্রোবাইটামের জন্যে আমূল পরিবর্তন ঘটবে৷ বাহ্যিক সংরচনা অর্থাৎ ফরমূলার কোন পরিবর্তন হবে না৷ মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর মাইক্রোবাইটাম বিজ্ঞানীরা জলের ফরমূলা যেH2O তা মেনে নেবেন না৷ কারণ, ওই জলের সংরচনায় মাইক্রোবাইটামের হিসেব নেই৷ মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত হবার পর ওই এক অণু জলের মধ্যে কত সংখ্যক মাইক্রোবাইটাম বর্তমান আছে তা নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন৷ তখন মাইক্রোবাইটাম সংরচনা অনুযায়ী জলের ফরমূলা হবে--হয়তো H2O (Group-A MV 20 million)৷ জলের এই নতুন সংকেতের অর্থ হ’ল---এক অণুH2O তে20 Million সংখ্যক মাইক্রোবাইটাম বর্তমান আছে৷ মাইক্রোবাইটামের ব্যাপক গবেষণার ফলে রসায়ন বিদ্যার বিভিন্ন বস্তুর ফরমূলায় বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হবে, গবেষণাগারে  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ নিরীক্ষণের সময় আমরা দেখে থাকি, রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে একই তাপমাত্র, একই চাপ ও একই অবস্থা(same temperature, pressure and same condition) বজায় থাকলেও সবক্ষেত্রে ফলাফল একই হয় না৷ এরূপ ফল হেরফের হওয়ার কারণ হ’ল বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে মাইক্রোবাইটামের সংখ্যাগত পার্থক্য৷ যেমন---ধরা যাক, ক্যালসিয়াম সালফেটের দুটি নমুনায় Sample)  প্রথমটিতে যে মাত্রায় অক্সিজেন রয়েছে, দ্বিতীয় নমুনাতেও ঠিক একই মাত্রায় অক্সিজেন রয়েছে, কিন্তু প্রথম নমুনায় অক্সিজেনের  থেকে দ্বিতীয় নমুনায় হয়ত10 million মাইক্রোবাইটাম কম আছে৷ এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে দুটি নমুনায় একই ফল পাওয়া যাবে না৷ ধরা যাক, ক্যালসিয়াম সালফেট(CaSO4)-এর দুটিsample, একটিsample-A ও অপরটিSample-B৷ ত্রমন দুটির বাহ্যিক সংরচনা এক---CaSO4৷ কিন্তুCaSO4 -এর অভ্যন্তরীণ সংরচনা হবে হয়তোsample-A-এর জন্যেCaSO4(A-MV 20 million) আরsample-B-এর জন্যে  হয়তোCaSO4(B-MV 10 million)৷ সুতরাং বাহ্যিক সংরচনা একই হলেও কিন্তু মাইক্রোবাইটামের সংখ্যাগত কম-বেশীর দরুণ অভ্যন্তরীণ সংরচনা পরিবর্তিত হয়ে যাবেই৷ এর ফলে দুূই প্রকারCaSO4 -এর গুণগত পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে৷

এখন ঔষধ রসায়নের(Pharmochemistry) ক্ষেত্রেও মাইক্রোবাইটামের সংখ্যাগত পার্থক্যের জন্য ঔষধের গুণগত পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে৷ প্রাকৃতিক নিয়মে বিশেষ বিশেষ বস্তুতে বিশেষ বিশেষ গুণ রয়েছে৷ যেমন ধরা যাক---কপার সালফেট-এর কথা৷ কপার সালফেটের বর্তমান স্বীকৃত সংকেত হ’লCaSO4(অনাদ্র)৷ এখন এই কপার সালফেটের উপাদান হ’ল কপার, সালফার ও অক্সিজেন৷ কপার সালফেটের মধ্যে কপার , সালফার ও অক্সিজেনের পারমাণবিক অনুপাত(Atomic proportion) নির্দিষ্ট আছে৷ কিন্তু যদি এই অনুপাতের পরিবর্তন করা যায় তবেCaSO4 যৌগটির গুণগত পরিবর্তন ঘটবে৷ এই হ’ল বর্তমান রসায়নবিদ্‌গণের সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু মাইক্রোবাইটাম বিজ্ঞানীর এ ব্যাপারে মতামত হ’ল---একই যৌগের মধ্যে উপাদানের পারমাণবিক অনুপাত নির্দিষ্ট থাকলেও অর্থাৎ বাইরের সংরচনা ঠিক থাকলেও, মাইক্রোবাইটামের সংখ্যাগত হেরফের হ’লে ওই যৌগের অভ্যন্তরীণ সংরচনার পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে৷ যেহেতু ঔষধ একপ্রকার জৈব রাসায়নিক পদার্থ, অতএব ঔষধ-রসায়নের গবেষণার ফলে আমরা জানতে পারব কী পরিমাণ মাইক্রোবাইটাম থাকলে ঔষধের কী ধরণের গুণাগুণ থাকবে৷ তদনুযায়ী, আমরা বেশী কার্যকরী ঔষধের ফরমূলা তৈরী ক’রে নিতে পারব৷ তখন পুরোনো ঔষধের ফরমূলাগুলি অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে৷ সুতরাং দেখা যাচ্ছে মাইক্রোবাইটামের ব্যাপক গবেষণার ফলে রসায়ন((chemistry) ও ঔষধ-রসায়নের Pharmo-chemistry জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে৷ কোন একটা ঔষধ, ধরা যাক্‌ স্যারিডন ট্যাবলেট দুটো বিভিন্ন কোম্পানিতে তৈরী করা হ’ল ও ওই দুটো কোম্পানির দুটো ঔষধের সংযুক্তি chemical composition) একই same) রাখা হ’ল৷ তথাপি বাস্তবে দেখা যায় যে, একটি কোম্পানির ঔষধ (স্যারিডন) যতটা ফলদায়ক, অপর কোম্পানির ঔষধ ততটা ফলদায়ক নয় বা কার্যকরী হয় না৷ এর কারণ হ’ল ঔষধটির মধ্যে থাকা মাইক্রোবাইটামের সংখ্যাগত ও গুণগত পার্থক্য৷

এক্ষেত্রে মাইক্রোবাইটাম বিজ্ঞানীরা পুরোনো ঔষধের সংরচনাকে বাস্তবে প্রয়োগ না ক’রে বাতিল করে দেবেন৷ এমনি করে বিভিন্ন প্রযুক্তি বিদ্যায় যেমন---জৈব প্রযুক্তি বিদ্যাতেও Bio-technology) আমূল পরিবর্তন ঘটবে৷ মাইক্রোবাইটাম আবিষ্কারক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন---‘‘মাইক্রোবাইটাম নিয়ে ব্যাপক গবেষরার ফলে বিস্ফোরণ সংক্রান্ত প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে৷ কোন বস্তুর অভ্যন্তরীণ চলমানতা(internal movement)) যেখানে বেশী সেখানে ফ্রিকোয়েন্সি Frequency) অনেক বেড়ে যায়৷ ফলস্বরূপ বিস্ফোরণের ক্ষমতা তীব্র হয় ও আবাজও বেশী হয়৷ মাইক্রোবাইটামের সক্রিয়তা অভ্যন্তরীণ চলমানতাকে প্রভাবিত করে৷ এর ফলে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক তৈরীর ক্ষেত্রেও বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷