শারীরিক সুস্থতা ও রোগমুক্ত শরীরের জন্যে পজেটিব মাইক্রোবাইটামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ মাইক্রোবাইটাম আবিষ্কারক মহাপ্রাজ্ঞ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন---প্রাণের উৎস হ’ল মাইক্রোবাইটাম৷ এই মাইক্রোবাইটাম তিন প্রকারের হয়৷ এরা হ’ল (১) পজেটিব মাইক্রোবাইটাম বা মিত্র মাইক্রোবাইটাম৷ (২) নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম বা এনিমি মাইক্রোবাইটাম৷ (৩) নিরপেক্ষ মাইক্রোবাইটাম৷ এই তিন প্রকার মাইক্রোবাইটামের মধ্যে পজেটিব মাইক্রোবাইটামকে কোনও মানুষ কিংবা কোন মহাপুরুষ এমনকি কোনও সাধক বা অতি মানবও তৈরী করতে পারে না৷ শুধুমাত্র পরমপুরুষ তথা সদ্গুরুই এই মাইক্রোবাইটাম তৈরী করতে পারে৷ পরমপুরুষ সৃষ্ট মাইক্রোবাইটাম মানব মনের শুভাত্মক দিকগুলোর অভিস্ফূরণ ঘটায়৷ মানব মনে যে শুভবুদ্ধি আছে তাকে জাগরিত করে ও শুভপথে চালিত করে৷ ত্যাগের মনোভাব তৈরী করে এই পজেটিব মাইক্রোবাইটামেরা৷ এমনকি এরাই মানুষকে ঘর ছেড়ে ত্যাগব্রতী সন্ন্যাসী হতে উদ্বুদ্ধ করে৷ নিমাই সন্ন্যাস এই পজেটিব মাইক্রোবাইটামের প্রেরণাতেই একদিন সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন৷ আমাদের আনন্দমার্গ মিশনের হাজার হাজার আচার্য অবধূত নিজেদের ছোট সংসারের গণ্ডী ছেড়ে পরমপুরুষের বৃহৎ সংসারের কাজে ত্যাগের ব্রত নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, এই পজেটিব মাইক্রোবাইটামের প্রেরণাতেই৷
পরমপুরুষ তথা সদ্গুরুকে সন্তুষ্ট করতে পারলে সদ্গুরু কৃপাপরবশ হয়ে সাধকের ওপর মাইক্রোবাইটাম বর্ষণ ক’রে সাধককে উচ্চমনে উজ্জীবিত করেন৷ এর ফলে ওই উজ্জীবিত মাইক্রোবাইটাম চক্রগুলিকে উত্তেজিত করে চক্রস্থিত বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে৷
সুস্থ মন ও সুস্থ শরীর তৈরীতে এই মাইক্রোবাইটাম অপরিহার্য৷ আধ্যাত্মিক বিকাশের গতি আনতে সাহায্য করেএই পজেটিব মাইক্রোবাইটাম৷ এখন, এই মাইক্রোবাইটাম শরীর ও মনের সুস্থতাকে বজায় রাখে ও আত্মার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার শক্তি বা প্রেরণা যোগায়৷ সেই মাইক্রোবাইটাম দেহের মধ্যে কিভাবে কার্যকর হবে? না, দেহের মধ্যে পজেটিব মাইক্রোবাইটামকে স্থিতিশীল করতে হবে৷ পজেটিব মাইক্রোবাইটামের আধিক্য বেশী করতে হবে৷ পজেটিব মাইক্রোবাইটামের আচরণ স্বভাবগত ভাবেই মিত্রোচিত৷ তাই শরীরে নেগেটিব মাইক্রোটামের চাইতে যদি পজেটিব মাইক্রোবাইটামের আধিক্য আনা যায় তবেই এরা নেগেটিব মাইক্রোবাটামকে প্রতিহত করে বা ধবংস করে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে৷ কিন্তু মাইক্রোবাইটাম শরীরে কীভাবে প্রবেশ করবে? মাইক্রোবাইটাম ধারণোপযোগী মন ও দেহ তৈরী না হওয়া পর্যন্ত পজেটিব মাইক্রোবাইটাম দেহের মধ্যে প্রবেশ করবে না৷ যাতে এই মাইক্রোবাইটাম ধারণ উপযোগী মন ও দেহ গঠন করা যায় তার জন্যে তাদের করণীয় হ’ল---
(১) নিয়মিতভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে ভজন-কীর্ত্তন-সাধনা করতে হবে৷ কারণ, ভজন-কীর্ত্তনের দ্বারা মনে আসে পবিত্রতা৷ সেই সঙ্গে দেহও হয় পবিত্র৷ আর এই পবিত্র মন ও দেহের পরিবেশই হ’ল পজেটিব মাইক্রোবাইটামের থাকার উপযুক্ত বা অনুকূল পরিবেশ৷ মশা-মাছি প্রভৃতি কীট-পতঙ্গদের থাকার পরিবেশ হ’ল পচা-দুর্গন্ধ আবর্জনাযুক্ত এলাকা৷ অপরদিকে মউমাছি, প্রজাপতি কীটপতঙ্গদের থাকার অনুকূল পরিবেশ হ’ল ধূপ-ধূনা ও সুগন্ধীযুক্ত এলাকা৷ ঠিক তেমনি, পজেটিব মাইক্রোবাইটাম থাকার অনূকূল পরিবেশ হ’ল শারীরিকভাবে পবিত্র দেহ-মন পুষ্ট শরীর৷
(২) সাত্ত্বিক খাদ্য গ্রহণ ও পূর্ণ নিরামিষী শরীর ছাড়া পজেটিব মাইক্রোবাইটাম দেহের মধ্যে অধিষ্ঠান করে না৷
(৩) নিয়মিত আসন শরীর ও মনের সুস্থতা ও সবলতা এনে দেয়৷ তাই সতেজ ও সবল দেহ মনেই সাধনা যথার্থ হয়৷ ফলে পজেটিব মাইক্রোবাইটামের অধিষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷
(৪) যে সাধক যত বেশী যম-নিয়ম ও ষোড়শ বিধি sixteen points) পালনের জন্যে পুর্ণ প্রয়াস বা প্রচেষ্টা চালাতে পারবেন তিনি তত বেশী পজেটিব মাইক্রোবাইটামের কার্যকর ফল পাবেন৷
(৫) নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম আক্রান্ত হলে নানান ধরণের রোগ সৃষ্টি হয়৷ মূলাধার চক্র হতে মণিপুর চক্র পর্যন্ত নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে ও লিবার, পাকস্থলি, কিডনি, কোমর প্রভৃতিতে নানান ধরণের রোগ আক্রমণ করে৷ তাই শরীরকে রোগমুক্ত করতেহলে শরীরের মধ্যে পজেটিব মাইক্রোবাইটামের প্রভাব যত বেশী হয় তার প্রয়াস চালাতে হবে৷ এক্ষেত্রে পজেটিব মাইক্রোবাইটাম, নেগেটিব মাইক্রোবাইটামের চেয়ে বেশী হতে হবে৷ কারণ, ওই পজেটিব মাইক্রোবাইটাম, নেগেটিব মাইক্রোবাইটামকে প্রতিহত বা ধবংস করে দেয়৷ এর ফলে রোগী রোগমুক্ত হয়৷
(৬) আজ্ঞাচক্রে পজেটিব মাইক্রোবাইটাম স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে কিন্তু নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম স্বাধীনভাবে আজ্ঞাচক্রে কাজ করতে পারে না৷ তবে বড় জোর কখনও কখনও পরোক্ষভাবে আজ্ঞাচক্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷ কিন্তু কোনও প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে না৷ এখন, এই আজ্ঞাচক্রের সঙ্গে যে সব মানসিক ব্যাধির সম্পর্ক রয়েছে সেগুলো দেখা দেয় তখনই যখন পজেটিব মাইক্রোবাইটামের থেকে, নেগেটিব মাইক্রোবাইটামের প্রভাব বেড়ে যায়৷ যদি কোনও ব্যষ্টির আজ্ঞাচক্রে নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম প্রবলভাবে শুরু হয়ে যায়, তখন ওই ব্যষ্টি পাগল হয়ে যায়৷ অতএব আজ্ঞাচক্রের এই নেগেটিব মাইক্রোবাইটামের প্রভাবকে প্রতিহত করতে হলে মানুষকে সম্যক চিন্তা ও সম্যক সাধনার আশ্রয় নিতে হবে৷ অর্থাৎ যে মানুষ আধ্যাত্মিক সাধনা ও ধ্যান-ধারণার মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করেন সেই মানুষ সাধারণত নেগেটিব মাইক্রোবাইটামের দ্বারা আক্রান্ত হয় না৷
(৭) মানুষের শরীরে পজেটিব মাইক্রোবাইটাম ধারণের অপরিহার্য শর্ত হ’ল---ওই মানুষটিকে নিরামিশাষী হতেই হবে৷ কারণ আমীষভোজীর দেহ পজেটিব মাইক্রোবাইটামের থাকার অনুকূল পরিবেশ নয়৷ এটাই হ’ল পজেটিব মাইক্রোবাইটামের স্বভাবগত পরিচয়৷
অতএব, শরীর সুস্থ ও নিরোগ থাকার জন্যে চাই নিরামিষ আহার ও আধ্যাত্মিক সাধনা, ধ্যান-ধারণা ও তৎসহ আসন প্রভৃতি৷ শারীরিক সুস্থতায় সুনির্মল পরিবেশ হ’ল আর একটি শর্ত৷ আগেকার দিনে মুনী-ঋষিরা সাধারণতঃ তপস্যা করতেন সেই এলাকায় যেখানে পঞ্চবটী বন রয়েছে৷ বাবা বলেছেন ওই পঞ্চবটী বনের পরিবেশ হ’ল এক সুনির্মল পরিবেশ৷ অর্থাৎ ওই পরিবেশ হ’ল পজেটিব মাইক্রোবাইটাম থাকার উপযুক্ত পরিবেশ৷
সুতরাং নীরোগ ও সুস্থ মানব সমাজ গঠনে মাইক্রোবাইটামের অবদান অপরিসীম৷
- Log in to post comments