ছেলেবেলায় শিবনাথ শাস্ত্রী পশু পাখি পুষতে ভালবাসতেন৷ টুনটুনি, বুলবুলি,দোয়েল,ছাতারে, শালিক, টিয়া হরেকরকম পাখি শিকার ও তাদের পোষা ছিল শিবনাথের শখ৷ এমন কি তিনি পিঁপড়েও পুষতেন৷ ফড়িং পোষাও ছিল তার বাতিক৷ পিঁপড়েগুলোকে সযত্নে কৌটোর মধ্যে ভরে রাখতেন৷ ফড়িংদের ধরে কচি কচি দূর্বাঘাস খাওয়াতেন৷ পিঁপড়েদের খাওয়াতেন চিনি আর মধূ৷
শিবনাথের যখন ছ-সাত বছর বয়স তখন তিনি চার হাত পায়ে হামাগুঁড়ি দিয়ে পিঁপড়েদের সাথে সাথে ঘুরে বেড়াতেন আর তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন৷ মাছি মেরে খ্যাংড়া কাঠিতে গেঁথে মাটিতে পুঁতে রাখতেন আর বসে বসে লক্ষ্য করতেন কখন পিঁপড়েরা এসে মাছিটাকে টানাটানি শুরু করে৷ একদিন এইরকম একটা মাছি মারার পর আধঘন্টা বাদে দেখলেন একটা পিঁপড়ে এসে হাজির৷ সে প্রথমে মরা মাছিটার পা ধরে টানাটানি শুরু করলো৷ কিন্তু মাছিটাকে টেনে নেওয়াতো দূরের কথা নড়াতেও পারলো না৷ তখন মাছিটার চারদিক একবার ঘুরলো৷ খ্যাংড়া কাঠিটা বেয়ে একবার উঠলো আবার নামলো৷ তারপর চলে গেল৷
শিবনাথও তখন হামাগুঁড়ি দিয়ে পিঁপড়েটাকে অণুসরণ করতে লাগলেন৷ পিঁপড়েটা গিয়ে সোজা গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়লো৷ গর্তের বাইরে শিবনাথ অপেক্ষা করে আছেন৷ আধঘন্টা বাদে দেখলেন পিলপিল করে সৈন্য পিঁপড়েরা গর্ত থেকে বেরোচ্ছে৷ পিঁপড়ের সারির মধ্যে দু-একটি বড় পিঁপড়েও দেখতে পেলেন৷ ওরা বোধ হয় সেনাপতি পিঁপড়ে৷ পিঁপড়েরা সদলে মাছির কাছে এলো৷ শুরু হলো টানাটানি৷ শিবনাথ খ্যাংড়া কাঠিটা তুলে নিলেন৷ তখন মাছিটাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে পিঁপড়েরা গর্তের দিকে নিয়ে চললো৷ ইত্যবসরে গর্ত থেকে আরো কিছু পিঁপড়ে বেরিয়ে এসেছিল৷ পথে ফিরে আসা পিঁপড়েদের সাথে মুখোমুখি দেখা৷ তারা কি সংকেত করলো কে জানে৷ যারা আসছিল তারা আবার ফিরে যেতে লাগলো৷ তখন শিবনাথ তাড়াতাড়ি মাটিতে কানপেতে পিঁপড়েদের কথা শোণার চেষ্টা করলো৷ বাড়ির লোকেদের উচ্চস্বরে কথাবার্র্তয় পাছে পিঁপড়েদের কথা না শোণা যায় তাই শিবনাথ তাদের নিষেধ করে বললেন, পিঁপড়েরা কি বলছে শুনি৷ চুপ, চুপ!
শিবনাথের কাণ্ড দেখে বাড়ির সবাই হো হো করে হেসে উঠলো৷
- Log in to post comments