‘অপরাজিতা’ আইন এই পশ্চিম বাঙলার বিধানসভায় পাশ হলো৷ কিন্তু এটি যে কবে বলবৎ হবে সেটা কিন্তু অনিশ্চিত বিষয়৷ এটি যাবে সেই রাজ্যপালের টেবিলে৷ তিনি যে স্বাক্ষর তাড়াতাড়ি করবেন সেটার সম্বন্ধে এই সমস্যা সংকুল বাঙলার অনেক নাগরিকের মনে প্রশ্ণ উঠছে! কারণ রাজ্যের অনেক বিলই রাজ্যপালের টেবিলে পড়ে পড়ে পুরাতন হয়ে যাচ্ছে তাতে মহান রাজ্যপাল নানা অদৃশ্য কারণেই কলম ঠেকাচ্ছে না! কারণ তিনি যে প্রভুদের নির্দেশে এসেছেন তাঁরা দিল্লিশ্বর! সেখান থেকে ইঙ্গিত এলে তবে কলমের চালকের হাত নড়বে! অতীব সত্যকথা সেটা হলো এদেশের আইনের বাস্তবায়ন পদ্ধতি৷ তার উপর যে অপরাধে আইন সেই অপরাধতো এদেশের একটা অতি লজ্জাজনক ঘটনা সমগ্র মানব সভ্যতারই কলঙ্ক! এ রোগের যেটা ওষুধ সেটার দিকে সমাজ ও সরকার অদ্যাবধি কতটা নজর দিয়েছেন? এটা কি সরকার চিন্তা করেছেন? আজকের সরকার তো এদেশের সরকার তাঁরা যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে হাতে নিয়েছেন সেখানে কতটুকু নৈতিক শিক্ষা দানের ব্যবস্থা রেখেছেন! দলীয় নোংরা রাজনীতিটাই যেন সারা দেশটাকে ধবংসের দিকেই টেনে নিয়ে চলেছে! কি কারণে? এটা বড়ো প্রশ্ণ৷ সমাজে শৃঙ্খলা বলতে আজ কতোটুকু আছে! আজ দেশে দলীয় সরকার হয়েছে --- সরকার দলের, দলের দ্বারা ও দলের জন্য৷ গণতন্ত্রে হলো সরকার জনগণের, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য৷ সেটার অস্তিত্বটা কি আছে? সারা ভারত যুক্তরাষ্ট্রটাই চলছে কয়েকটা রাজনৈতিক দলের মর্জির উপর! তাই খেয়োখেয়ি, আর দলাদলি! জনগণকে কোনদল গুরুত্ব দেয়! শুধু বোটের সময় বোটটা পেতে কত না দলগুলো জনগণের বন্ধু! বোট মিটে গেলেই আর কারোরই দেখা নেই! এটাই বড়ো আকারে বাস্তবের ছবি৷ দেশটি নাকি স্বাধীন! স্বাধীন দেশে একি মানসিক অধঃপতন সেই শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত! ভারতবর্ষের মুনি ঋষিগণ জগৎকে জানান দিয়ে গেছেন যে মানুষ হলেন--- অমৃতের সন্তান! তবু কেন এদেশে এতো ‘মাতৃজাতির প্রতি অসম্মান আর অত্যাচার!’ এই রোগটা এতো প্রবল কেন এটার সন্ধান তো সেই শাসকদের প্রথমে করতে হবে! যদি মানুষকে স্বনির্ভরশীল না করা হয়৷ তার বেঁচে থাকার জন্য যে জিনিসের প্রয়োজন সেটা থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে মানুষ আর মানুষ থাকে না! তখন পশুর প্রবৃত্তির দিকে ছুটে চলে৷ তাই সুশিক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক! এদেশে সেদিনও তো শত অভাবের মধ্যে শিশুদের পাঠশালায় মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতেন শিক্ষকগণ যেমন গুরুজনদের প্রণাম করা, জন সেবার দিকে তাদের শিক্ষা দেওয়া, বিশেষ করে মাতৃজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি, ও সম্মান দেওয়ার শিক্ষা দিতেন৷ আজ বিদ্যালয়ে ছেলে মেয়েরা কি শিক্ষা পাচ্ছে? শুধু কি করে টাকা রোজগার করা যায় তার শিক্ষা! মহাপুরুষদের জীবনী পাঠ নীতি শিক্ষার কবিতাগুলি মুখস্থ করে দেওয়া আরো অনেক কিছু৷ আজ সব কিছুই বর্ত্তমান শিক্ষায় তুলে দেওয়া হয়েছে৷
শিশুদের ছবির মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে৷ আজ মধ্যাহ্ণ ভোজের পর স্কুল ও ভোঁ ভোঁ৷ দেখা যাচ্ছে সরকার অনেক অর্থ খরচ করছেন কিন্তু কোথায় ছাত্র অত্যন্ত কম! আবার কোথাও ছাত্র আছে কিন্তু সেই অনুপাতে শিক্ষক নেই৷ তাদের স্কুলের পোষাক সবকিছুই দেওয়া হয়৷ প্রাথমিকে প্রচুর অর্থব্যয় হয় শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশু শিক্ষার আসল গোড়াটাই সেখানে নেই৷ বর্তমানে ইংরাজী পাঠদানের ব্যবস্থা হয়েছে৷ মানুষের জীবন গড়ে ওঠে সেই সঠিক বাল্যশিক্ষার মাধ্যমে৷ ছড়ার মাধ্যমে শিক্ষাদান৷ আগে চিরস্মরণীয় কবি সাহিত্যিকগণ যে সব ছবি ও ছড়ার মাধ্যমে শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করে ছিলেন সেই সব বই আজ নেই৷ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগরের ১ম,২য় ভাগ শিক্ষার জগতে নবজাগরণ এনে দিয়েছিল৷ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো আচরণ শিক্ষাদান৷ সত্যাশ্রয়ী করে তোলার শিক্ষা৷ পরস্পর আপন করে নেওয়ার শিক্ষা৷ শেখার আগ্রহ বাড়ানো৷ শিশুর মন থেকে ভেদাভেদটা দূর করার চেষ্টাটা ও শিক্ষা দেওয়া খুবই জরুরী৷ মিলে মিশে আনন্দের মধ্যে থাকার অভ্যাসটাকে বাড়িয়ে তোলা৷ এটা খুবই দরকার৷ যাতে শিশু ভবিষ্যতে সমাজ সেবায় মন দিতে পারে৷ গান ছড়ার মাধ্যমে শিক্ষাদান৷ তার সঙ্গে ধীরে ধীরে অনুশাসন শেখানো৷ কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়৷ কুৎসিত ছবি, কুশিক্ষা থেকে খুবই সতর্ক হয়ে গৃহে বাবা মাকে সজাগ থাকতে হবে৷
বার বার বলছি চরিত্র ঘটন, নীতি শিক্ষা, স্বাস্থ্য রক্ষার, পড়ার আগ্রহ বাড়ানো ইত্যাদিগুলি খুবই জরুরী৷ শিশু অত্যন্ত অনুকরণ প্রিয়, তাই তার সামনে এমন কথা বলা বা করা উচিত নয় যা তাকে বিপথে চালিত করে বসে৷ মিথ্যা কথা একেবারে বলা উচিত নয়৷
তাই শিশু শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দরকার হলো খোল নলচে পাল্টাতে হবে৷ শিশুদের আনন্দে রাখতে হবে৷ কোনরূপ নেগেটিভ কথা ভয়ের কথা বা গল্প বলা যাবে না৷ জাত-পাত, ছোট বড়ো, ধনী দরিদ্র ভেদাভেদের কথা বলা নিষিদ্ধ৷ যাতে আনন্দ পায় তারা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ পশুপাখী গাছ পালা যে বন্ধু এমন গল্প করতে হবে৷ যেসব বন্ধুর সঙ্গে মিশছে তাদের ভাবখানা না বুঝে অভিভাবকদের সিদ্ধান্ত এমনভাবে নিতে হবে যাতে শিশু মন ক্ষুন্ন না হয়৷ তাই বাড়ির মা, ভাই বোন আত্মীয় স্বজনকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ আজ কিন্তু এটিরই বড় অভাব৷ একান্তবর্তী পরিবার ভেঙে গেছে৷ ছোট ছোট পরিবারে বাবা মা নানা কাজে বাইরে থাকে, শিশু একা একা, হয়তো বা কোন পারিবারিক সহায়িকার কাছে৷ এর ফলে শিশু ছোট থেকেই সে বড় একা হয়ে যায়, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায়৷ তাছাড়া বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল দেখতে দেখতে শিশু বয়স থেকেই মন হিংস্র, অপরাধ প্রবন হয়ে যায়৷ তাই শিশুকে আদর্শ মানুষ করে গড়ে তুলতে হলে শিশুর দায়িত্ব বাড়িতে বাবা মা ও বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাকে নিতে হবে৷
- Log in to post comments