‘‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ, পরধর্র্মে ভয়াবহঃ৷’’ গীতোক্ত এই আপ্তবাক্যের সাধারণভাবে যে অর্থ করা হয় তা হলো --- যে যে ধর্মমতে বিশ্বাসী তার কাছে সেই ধর্মটি শ্রেষ্ঠ৷ অপরের ধর্ম গ্রহণ করা বা ধর্র্মন্তরিত হওয়া ভয়াবহ৷ তাই বিভিন্ন ধর্ম মতাবলম্বীই এ আদর্শ গ্রহণ করে নিজ নিজ ধর্মমতের স্বপক্ষে অকাট্য যুক্তির অবতারণা করে থাকেন৷ কিন্তু প্রকৃত অর্থ কি তাই?
স্বাধ্যায় করতে না জানলে শাস্ত্রপাঠ নিরর্থক৷ শাস্ত্রের প্রতি কথার আধ্যাত্মিক অর্থ অনুধাবন করাই স্বাধ্যায়৷ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ কোনও বিশেষ ধর্মমতের নাম উল্লেখ করেন নি৷ তাঁর বাণী প্রতিটি মানুষের জন্য প্রযোজ্য৷ মানুষকে বুঝে নিতে হবে তার ধর্ম কী? স্বধর্ম অর্থে স্বভাব ধর্মকে বোঝানো হয়েছে৷ নিজ নিজ স্বভাব ধর্মই তার প্রকৃত ধর্ম, সে ধর্মের বিশিষ্ট কোন নাম নেই৷ সকল মানুষের ধর্ম একপ্রকার৷
স্বভাব ধর্ম কি? প্রতিটি মানুষের স্বভাব হলো সুখের অন্বেষণ করা৷ বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই বা স্থান নেই যেখানকার মানুষ দুঃখ চায়৷ ‘‘সুখানুরক্তিঃ পরমা জৈবী বৃত্তিঃ৷’’ প্রতিটি জীবের ধর্মই সুখানুরক্তিঃ পরমা জৈবী বৃত্তিঃ৷’’ প্রতিটি জীবের ধর্মই সুখানুরক্তি৷ সেই সুখ মানুষ নিরবচ্ছিন্নরূপে পেতে চায়৷ ‘‘নাল্পে সুখমস্তি, ভূমৈব সুখম্৷ অনন্তং সুখম আনন্দম্৷’’ অনন্ত সুখেরই নাম আনন্দ৷ আনন্দই প্রতিটি মানুষের স্বভাবগত চাহিদা৷ কোন্ পথে চললে জীবনে পরম আনন্দ উপলদ্ধি করা যাবে তাই মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে৷ প্রকৃত পথ নির্দেশনা পেয়ে গেলে তাকে বলব আনন্দের পথ তথা ‘‘আনন্দমার্গ’’৷ যে পথিক সেই চরম ও পরম পথ ধরেছে তাকেই বলি ‘‘আনন্দমার্গী’’৷ সংসারে কেই বা দুঃখ মার্গে চলতে চায়৷ তাই সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে সকল মানুষই আনন্দমার্গী, আনন্দের পথ ধরে চলাই সবার ধর্ম৷
বিষয়ানুরক্ত মানুষ অনন্ত চাহিদার পূর্তির পথ সহজে খুঁজে পায় না৷ কারণ জড়াধার,ভাবাধার ও চেতনার--- এই তিনভাগে মানুষের ব্যাষ্টিত্ব বিভাজিত৷ ভৌতিক ভোগের দ্বারা জড়াধারের প্রয়োজন মেটে কিন্তু পরিতৃপ্তি হয় না৷ কারণ ভাবাধার ও চেতনাধারের পরিপূর্ণতা আসে মানসিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে৷ এমনিভাবে ত্রিবিধ ধারায় স্বীয় সত্তাকে প্রয়োজনানুসারে প্রধাবিত করে নিয়ে যাওয়ার উপরই নির্ভর করে আনন্দোপলব্ধি৷ এটাই মানুষের প্রতিদিনের কর্ম, এই হলো মানুষের ধর্ম সাধনা৷
পরম আনন্দের পথে চলে স্বভাবের ‘অনুকূল বেদনীয়ম’ অনুভব করাই প্রকৃত মানবধর্ম,তাই শ্রেয়৷ বিষয়লিপ্ত মানুষ ভোগের স্রোতে পাল তুলে দিয়ে যদি বিপরীত পথে চলে তবে তাই ভয়াবহ৷ অন্ধ তমিস্রার পথে পরম জড়ত্ব প্রাপ্ত হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষ দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত থাকে৷ তাই পরধর্ম মান হলো ভোগাশ্রিত জড় জীবন৷ কর্ম নিবন্ধন জন্মজন্মান্তর ধরে কর্মফল ভোগ করতে থাকে ৷ এ তত্ত্ব বিশ্ব সংসারে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ তাই সবার ধর্ম এক৷ ধর্ম একাধিক হতেই পারে না৷ অতএব মানুষের ধর্মকে কোন বিশেষ নামে আখ্যায়িত করাই মূঢ়তা৷
হিন্দু ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খৃষ্টি ধর্ম, জৈন ধর্ম ইত্যাদি যে সমস্ত ধর্মের নাম আমরা শুনতে পাই তার কোনটাই প্রকৃত ধর্মকে বোঝায় না৷ তা হলো ধর্মীয় মতবাদ বা উপধর্ম ইংরেজীতে যাকে বলে ‘রিলিজিয়ন’ আর আরবীতে বলে মজহব৷ ধর্ম কথার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘ধৃ’ ধাতুর উত্তর ‘মণ’ প্রত্যয় অর্র্থৎ যা ধারণক্ষম৷ প্রতিটি বস্তুর যেমন নিজস্ব স্বভাব বা গুণ রয়েছে যা ধারণ করে তার সত্য পরিচয়কে প্রস্ফুটিত করে তুলেছে, ঠিক তেমনি প্রতিটি জীবের নিজস্ব স্বভাব তার পরিচয়কে বহন করে চলেছে৷ মানুষের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই৷ যেমন জলের ধর্ম শীতলতা, তারল্য ও নিম্নাভিমুখী গতি বরফের ধর্ম ধবলতা, আগুনের ধর্ম উত্তাপ, তেমনি মানুষের ধর্ম অনন্ত পরিমাণে সুখকে পাওয়ার ইচ্ছা বা এষণা৷ তাই সকল মানুষই ছুটে চলেছে আনন্দ কুম্ভের সন্ধানে৷ তার চলার গতিকে, ছন্দকে, চলার লক্ষ্যকে যথাযথ করে দেওয়াই ধর্ম সাধনার কাজ৷ মানুষের ধর্মই প্রতিটি মানুষের স্বধর্ম, মনুষ্যেতর তথা পশুর ধর্মই তার পরধর্ম৷ প্রকৃত ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করলে মানব জীবন পেয়েও জড়ত্ব ও পশুত্ব প্রাপ্ত হয়ে জন্মান্তরে কোটি কোটি বৎসর ধরে পশুজীবনের ক্লেশে দগ্দ হতে থাকে৷ সে পথ ভয়ঙ্কর৷ তাই মানুষ মাত্রেরই তা বর্জনীয়৷ প্রকৃত ধর্মের সংজ্ঞাই মানুষ ও পশুর মধ্যে মূল প্রভেদকে স্পষ্ট করে দেখিয়েছে৷ বাস্তবিক জৈব ধর্ম অনুসারে মানুষ ও পশুতে তফাৎ নেই বললেই চলে৷ ঋষি তাই বলেছেন---
আহার-নিদ্রা-ভয়-মৈথুনঞ্চ সামান্য মেতদ্ পশুভির্ণরাণাম্ ৷
ধর্র্মেহি তেষামধিকো বিশেষো ধর্মেন হীনা পশুভিঃ সমানাঃ৷৷
অর্র্থৎ আহার নিদ্রা ভয় ও মৈথুন এই চারটি জৈবীবৃত্তি মানুষ ও পশু উভয়েতেই বিদ্যমান৷ কিন্তু ধর্মবিহীন মানুষ পশুর সমান৷ আনন্দমার্গ দর্শনের চিন্তাধারায় ধর্মবিহীন মানব জীবন পশুর চেয়েও অধম জীবন৷ কারণ মানুষ বিবেক-বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও ধর্মবিহীন হয়৷
কোনও মহাপুরুষের বা অবতারের নামের লেবেল দিয়ে তাঁর মতবাদ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণযোগ্য নয়---এ ধরণের চিন্তাধারায় সুস্থতার কোন লক্ষণ নেই৷ কোনও মহাপুরুষ ধর্মের সৃষ্টি করেন নি৷ ধর্মই অগণিত মহামানবের সৃষ্টি করেছে৷ ধর্ম শাশ্বত--- ধর্ম পূর্বেও ছিল, আজও আছে, আর চিরকাল তা থাকবে৷ শুধু মানুষকে তা অনুসরণ করার পথ বাৎলে দিতে হবে৷ মজহবী চিন্তাধারা প্রকৃত ধর্মের পথ নয়, বরং প্রকৃত ধর্মের পথে বাধা স্বরূপ৷ মানুষে মানুষে বিভেদের প্রাচীর খাড়া করে মানব সমাজকে খণ্ড বিখণ্ড করে দিয়ে যুগে যুগে কালে কালে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে চলেছে এই মজহবী ধর্ম বা রিলিজিয়ন৷ এ ধরণের ধর্মীয় মতবাদ সমাজে কোনও দিন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না৷ এ সমস্ত ধর্মীয় মতবাদ বা রিলিজিয়ন অদ্যাবধি মতবাদের বেড়াজালে মানুষকে নিক্ষিপ্ত করে হানাহানি ও রক্তারক্তি কলঙ্কময় ইতিহাস রচনা করেছে, গোটা পৃথিবীর বুকে৷ আজ যখন সভ্যতার ইমারৎ গগনচুম্বী তখনও তথাকথিত ধর্মের শোষণ থেকে মুক্ত হতে পারে নি মানুষ৷
প্রকৃত ধর্ম বা মানব ধর্ম আর মজহবী ধর্ম বা উপধর্ম তথা রিলিজিয়ন-এর তফাৎগুলো বিশেষভাবে লক্ষণীয় ও অনুধাবন যোগ্য ঃ---
‘‘ধর্মস্যতত্ত্বং নিহিতং গুহায়াম৷’’ অন্তরের অন্তঃস্তলে মনের গহীন গুহায় নিহিত রয়েছে ধর্মের তত্ত্ব--- বিশ্বের জ্ঞান ভাণ্ডার৷ প্রকৃত পথে সাধনা করে গেলে অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মত প্রবাহিত ধর্মের প্রবাহ প্রতিটি মানুষের জীবন ধারায়, তার কর্মে প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠবে৷ তার ধর্ম কোনও প্রকার বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান, দিক্-বিদিক, তিথি নক্ষত্র বা কোনও বস্তুর উপর নির্ভরশীল থাকবে না৷ জীবনচর্র্যয় তা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠবে৷ ঝর্ণাধারার মত স্বতঃপ্রবাহিনী হয়ে জীবনকে মহিমাহিত করে তুলবে৷ সে ধর্মই প্রকৃত ধর্ম৷ প্রতিটি মানুষের আপন ধর্ম৷ তার কোন বিকল্প নেই, নেই কোন পরিবর্তন-পরিবর্দ্ধন৷ সে ধর্মের ক্ষয় নেই নিন্দা-প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে বা সশস্ত্র আক্রমণের দ্বারা তাকে ঠেকিয়ে রাখা যায় নি, কোনও কালে যাবেও না৷ যতো ধর্ম ততো ইষ্টঃ, যতো ইষ্টঃ ততো জয়ঃ৷
ধর্ম |
|
প্রকৃত ধর্ম বা মানবধর্ম |
মজহব বা রিলিজিয়ন (উপধর্ম/ধর্মীয় মতবাদ) |
১৷ ‘ধৃ’ ধাতু ‘মন্’ প্রত্যয় করে ‘ধর্ম’ শব্দ নিষ্পন্ন যার অর্থ ধারণ করা৷ কোন ভাষাতেও তার প্রকৃত প্রতিশব্দ নেই, ইংরেজীতেও নেই৷ প্রকৃত ধর্ম এক ও অখণ্ড৷ |
১৷ সংস্কৃতে একে উপধর্ম,আর ধর্মীয় মতবাদ, আরবীতে মজহব এবং ইংরেজীতে রিলিজিয়ন বলে৷ এ ধরণের ধর্ম পৃথিবীতে অনেক রয়েছে৷ |
২৷ ব্যবহারিক জ্ঞান ও বিবেক পূর্ণ বিচারশীলতার উপর প্রতিষ্ঠিত৷ |
২৷ ভাবাবেগ প্রসূত বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত৷ কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ বিশ্বাস বলা চলে৷ |
৩৷ যুক্তিপূর্ণ অথচ পরম সত্যাশ্রিত৷ |
৩৷ তথাকথিত শাস্ত্রের উপর নির্ভরশীল৷ শাস্ত্রগুলো সবই ঈশ্বরের বাণী বলে কথিত অথচ একেক শাস্ত্রের একক মত৷ পরস্পর বিরোধী মতাবাদের অভাব নেই৷ |
৪৷ বিশ্বজনীন তাৎপর্য্যপূর্ণ ও বৈষ্টিকভাবে অধ্যাত্ম অনুশীলন দ্বারাই তাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়৷ |
৪৷ আঞ্চলিক ভেদাভেদ, ভাষাগত অসহিষ্ণুতা, গোষ্ঠীগত প্রবৃত্তি, জাতসম্প্রদায়, কুসংস্কার ও আচরণ সর্বস্ব৷ |
৫৷ কোনপ্রকারের শোষণের সুযোগ নেই, কায়েমী স্বার্থবাদ ও দলীয় মনোভাবের স্থান নেহ৷ বিশ্বভ্রাতৃত্বই সামাজিক লক্ষ্য৷ |
৫৷ রোহিততন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র, পোপতন্ত্র, গুরুতন্ত্র ইত্যাদির অপ্রতিহত শোষণ চলতে থাকে৷ |
৬৷ প্রেম, মৈত্রী, করুণা স্বাতন্ত্র্য ও সমতার উপর প্রতিষ্ঠিত৷ |
৬৷ যুক্তিহীনতা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধবিশ্বাস ও ভয় প্রসূত বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত৷ |
৭৷ স্থান-কাল-পাত্রের বন্ধনে আবদ্ধ নয়৷ স্বজাতীয় বিজাতীয় স্বগত কোনও প্রকার বিভেদ নেই, চিরন্তন দ্বন্দ্বাতীত৷ |
৭৷ কুসস্কারাচ্ছন্ন মতবাদ ও তার প্রয়োগ স্থান, কাল ও পাত্রের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে৷ আপেক্ষিক তত্ত্বের ওপর নির্ভরশীল বলে চিরকাল স্থায়ী হয় না৷ |
৮৷ ধর্র্মেপলব্ধির জন্য একমাত্র মনের প্রয়োজন৷ আধ্যাত্মিক আত্মানুশীলনের দ্বারা, মনের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে উপলব্ধি হয়ে থাকে ও তাতে মনের গতি অন্তর্মুখী হয়৷ |
৮৷ আচরণসর্বস্ব Ritualistic) জাগতিক বিষয়ের ব্যবহার, পবিত্র স্থান, পবিত্র স্নান ইত্যাদির মাহাত্ম্য প্রচার দ্বারা মনের গতিকে বহির্মুখী করে তোলে৷ |
৯৷ ব্যষ্টি ও সমষ্টির প্রতি বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেদন নিয়ে সবার সমভাবে কল্যাণ ভাবনা পোষণ করা হয়৷ |
৯৷ বিভিন্ন উপধর্মের আচরণগুলো পারস্পরিক শত্রুভাবাপন্ন ও বিরোধী৷ ফলে তা পারস্পরিক অবিশ্বাস, অনৈক্য এবং ধবংসের কারণ স্বরূপ৷ |
১০৷ সংশ্লেষণাত্মক, সৃজনশীল বিবর্দ্ধনশীল ও প্রগতিশীল৷ |
১০৷ বিশ্লেষণাত্মক উৎপীড়নকর, অধঃপতনশীল ও অপ্রগতিশীল৷ |
১১৷ মানবত্বে ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ |
১১৷ মানুষে মানুষে ভেদ প্রবণতা, পশুত্ব ও এমন কি খুন-খারাপির পথে পরিচালিত করে৷ |
১২৷ ধর্মে রয়েছে বিশ্বজনীনতার পরম শক্তি যা মানুষকে ‘হরমে পিতা, গৌরীমাতা, স্বদেশ ভূবন ত্রয়ম্’---নীতির শিক্ষা দিচ্ছে, এক লক্ষ্য বিশ্ববন্ধুত্ব, বিশ্বপ্রেম, একজাতি একপ্রাণ--- এই ভাবনায় প্রতিষ্ঠিত করে এক বিশ্ব মানব সমাজ গড়ে তোলার প্রয়াস পাচ্ছে৷ |
১২৷ মানুষকে আত্মকেন্দ্রিকতা , মানসিক বিচ্ছিন্নতা, কায়েমী স্বার্থবাদ, সংকীর্ণতা ও অনৈক্যের পথে পরিচালিত করে৷ |
১৩৷ সবাকার জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরমানন্দ উপলদ্ধিই ও জগৎকল্যাণ একমাত্র লক্ষ্য৷‘‘আত্মমোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ৷’’ |
১৩৷ উপধর্ম বড়বড় ভাব সমূহের প্রবচন দিয়ে থাকে৷ কিন্তু প্রকারান্তরে কপটতা, ব্যষ্টিপূজা, বিচ্ছিন্নতা ও সামাজিক খণ্ডতার দিকে নিয়ে যায়৷ |
১৪৷ যুক্তিসিদ্ধভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকৃত৷ |
১৪৷ অযৌক্তিক, কাল্পনিক ও অন্ধবিশ্বাস আরোপিত ঈশ্বরের ও সঙ্গে সঙ্গে বহু দেবদেবীর অস্তিত্ব স্বীকৃত৷ |
১৫৷ শরীর থেকে মন সূক্ষ্ম, মন থেকে আত্মা আরও সূক্ষ্ম বা সূক্ষ্মতম৷ প্রকৃত ধর্ম জীবকে স্থূলতা থেকে সূক্ষ্মত্বের দিকে নিয়ে যার৷ |
১৫৷ অনষ্ঠান বহুল বিষয়াশ্রিত উপধর্ম জীবকে স্থূলতা তথা জড়ত্বের দিকে নিয়ে যায়৷ ‘‘যাদৃশী ভাবনা যস্য সির্দ্ধিভবতি তাদৃশী৷’ |
১৬৷ ধর্ম নিষ্কাম কর্মবাদ, সাত্ত্বকী ভক্তি ও কৈবল্য৷ ভক্তির পথে পরমা শান্তির দিশারী৷ |
১৬৷ তামসিক ও রাজসিক ভক্তি, কর্মবন্ধন ও জন্মান্তরে কর্মভোগ ও বিপাক ক্লেশযুক্ত বদ্ধজীবন লাভ হয়৷ |
১৭৷ ধর্মে স্বর্গ নরক, পাতাল রসাতল, তীর্থক্ষেত্র, স্থান-মাহাত্ম, ঠাকুর-দেবতা, ভুত-প্রেত, দত্যিদানা, ভর-বশীকরণ, মারণ-উচাটন ইত্যাদির স্থান নেই৷ |
১৭৷ স্বর্গ-নরকাদির কাহিনী শুনিয়ে মানুষের মনে ধর্মভীরুতার সৃষ্টি করে ধর্মের নামে শোষণ চালিয়ে যায়৷ |
- Log in to post comments