সংবাদপত্রের পাতায় কিংবা টিভিতে প্রচারিত সংবাদ যেখানেই চোখ রাখুন এমন ধরনের সংবাদ নজরে আসছে যা দেখে বা শুনে আপনি শিউরে উঠবেন৷ আপনার মনে হতে বাধ্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ এসব ঘটনায় জড়িত? যারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে অনেক এগিয়েছে বলে দাবী করে তারা এভাবে খুন- ধর্ষণ -রাহাজানি- নারী নির্যাতন - প্রতারণা -জোচ্চুরি- সাম্প্রদায়িক হানাহানি ইত্যাদি যা ঘটে চলেছে তার সাথে যুক্ত !! একথা ভাবতে না পারলেও এটাই সত্যি৷ জলের মতো পরিষ্কার আজ এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে আছে নররূপী দানবের দল৷ যাদের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে.........
কিন্তু প্রশ্ণ জাগা স্বাভাবিক এই দানব কারা? যারা শোষণ ও অত্যাচারের মাধ্যমে মানুষের জীবনে শান্তি প্রতি মুহূর্তে বিঘ্নিত করছে, শিশু থেকে নর নারী কেউই যাদের হাতে নিরাপদ নয়, যাদের দৌরাত্ম্যে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত তারাই দানব৷ মানব রূপী এই দানবদের চিনে নিতে নাগরিকদের কারোরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, আর হচ্ছেও না৷ এদের অত্যাচার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে৷ সমাজ আজ এমন নারকীয় পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে, দানবকুলের এই দানবীয় কর্মকাণ্ডের জেরেই৷ সমাজে অসহায়, অবহেলিত, শোষিত ও নির্যাতিত মানুষ আজ এইসব দানবদের হাত থেকে বাঁচতে চায়৷ দিশেহারা মানুষ মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে না৷ জটিল আবর্তের মধ্যেই মানুষ ঘুরপাক খাচ্ছে৷ শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের একটাই প্রশ্ণ - কে রক্ষা করবে তাদের এই পরিস্থিতিতে! কারা হবে তাদের ত্রাতা?
বর্তমানে যে সময়ের মধ্য দিয়ে মানুষ কোনোরকমে দিনগুজরান করে চলেছে সেখানে সৎ, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে৷ সর্বক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে চরম অবক্ষয়৷ অনুকরণ ও অনুসরণ যোগ্য কোনো সমাজ বা দেশ নেতা চোখের সামনে নেই৷ বিশেষতঃ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আজ যাঁরা পরিচিত সমাজে, তাঁদের অধিকাংশই ভণ্ড৷ এঁরা মনে যা ভাবে,মুখে তা বলে না, আর মুখে যা বলে কাজে তা করে না৷ অথচ সমাজ পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরাই মাতববরি করে৷ এরা নিজেরাও যেমন জেনেশুনে অন্যায় কাজে জড়িত, পাশাপাশি অন্যের অন্যায় কাজকেও প্রশ্রয় দেয়৷ এদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে দানবদের দাপাদাপি ভীষণভাবে বেড়ে গেছে৷ ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা চূড়ান্ত পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে৷ একদিকে মাদক দ্রব্যের যথেচ্ছ ব্যবহার , অন্যদিকে অশ্লীল বিনোদন মানুষের নৈতিক চরিত্র ও মানবিক মূল্যবোধকে ধবংস করে দিচ্ছে৷ ভালো মন্দের বিচার বোধ হারিয়ে ফেলছে অধিকাংশ মানুষ৷ এই অবস্থা হঠাৎ একদিনে হয়নি৷ দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে যুব সম্প্রদায়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ যাতে তারা প্রতিবাদী হতে না পারে তাই ছাত্র -যুব সম্প্রদায়কে প্রথমেই টার্গেট করা হয়৷ মাদকদ্রব্য ও নোংরা নীল ছবিতে এদের মাতিয়ে রাখলে দানবদের অসামাজিক কাজকর্ম করতে সুবিধা৷ আর তাই এরা করে চলেছে সর্বত্র নির্বিঘ্নে৷
এই পরিস্থিতিতে মানুষ কে রক্ষা করার বা সমাজে শান্তি ও শুচিতা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে হবে সৎ- শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের৷ সৎ মানুষদের যেমন নিজেদের সংঘবদ্ধ হতে হবে , তেমনি দানবদের বিরুদ্ধে লড়াই এর প্রস্তুতি নিতে হবে৷ শোষিত ও নির্যাতিত জনগণকে বোঝাতে হবে কীভাবে তাদের শোষণ করা হচ্ছে৷ সাথে সাথে ঐ মানুষদের নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে আপোষহীন সংগ্রামে নামতে হবে৷ বুঝিয়ে দিতে হবে এই পৃথিবী দানবদের জন্য নয়, মানবের জন্য৷ পরিবার ও বিদ্যালয়স্তর থেকেই শুরু হোক খাঁটি মানুষ তৈরীর প্রচেষ্টা৷ সমাজে সৎ ভালো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারলে দানবদের উৎপাত স্তব্ধ করা যাবে না৷ দানবীয় শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ না করে নীতিবাদী মানুষ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাতেই হবে৷ একথা সত্য ভালো মানুষের সংখ্যা কম হলেও তাঁদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে দানবীয় শক্তির ( পাপ শক্তির) পরাজয় নিশ্চিত৷ মহাভারত আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়৷
- Log in to post comments