সমাজের সর্বস্তরে পুঁজিবাদী আগ্রাসন---প্রাউটই পরিত্রাণের পথ

লেখক
পথিক বর

খাদ্যপণ্যের অগ্ণিমূল্য৷ বাজারে ঘুরছে টাস্ক ফোর্স, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি হ্রাসের কোন লক্ষ্মণ নেই৷ দুর্গাপূজার পর থেকে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল টাস্কফোর্স দুর্গাপূজার পর জগদ্ধাত্রী পূজাও পার৷ দাম কমার সেরকম কোন লক্ষ্মণ নেই৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যেভাবে খাদ্যপণ্যের দাম না কমার কথা ঘোষণা করে তাতে মুনাফাবাজরা আরও সুবিধা পেয়ে যায়৷

তবে শুধু খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিই নয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রেই দুর্নীতি ও অবক্ষয় দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ আপত দৃষ্টিতে আমরা সামাজিক-অর্থনৈতিক দুরাবস্থার শাসক দলের ঘাড়েই চাপাই৷ শাসকদলের পরিবর্তনও হয়, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না৷ কারণ পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলির বাইরের পার্থক্য যাই যাক ভিতরে সবাই সমান রাঙা৷ পুঁজিবাদের অর্থপুষ্ট রাজনৈতিক দলগুলি পুঁজিবাদের স্বার্থরক্ষা করতে বাধ্য থাকে৷

দেশীয় পুঁজিপতিদের স্বরূপ চিনেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতার আগেই৷ ১৯৩৮ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সুভাষচন্দ্র লন্ডনে ভারতীয় ছাত্রদের এক সমাবেশে বলেছিলেন---দেশীয় পুঁজিপতিরা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে শক্তি যোগাচ্ছে৷ আমাদের ওদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷ মানুষকে শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও দিতে হবে৷ মাত্র এক বছরের মধ্যে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন৷ তারপরের পরিণতি সবাই জানে৷ মজার কথা হল তথাকথিত বামপন্থি কম্যুনিষ্টরাও সেদিন সুভাসচন্দ্রের পাশে না থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে সাহায্য করেছিল৷ আর এস এসের ভূমিকাও সেদিন তাই ছিল৷ অর্থাৎ স্বাধীনতার আগে থেকেই রাম-বাম-ডান তাই দেশীয় পুঁজিপতির নিয়ন্ত্রণে চলে৷

আজ সমাজের সর্বস্তরে যে ব্যাপক অবক্ষয়--- অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক-সাম্প্রদায়িক ভেদ বিদ্বেষ, অশ্লীলতার আবর্জনায় ভরা সাহিত্য-সংস্কৃতি, আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে রাজনীতির ধারক-বাহকরা৷ এই সমাজ ব্যবস্থাই ফ্যাসিষ্ট পুঁজিপতিদের অনুকুল পরিবেশ৷

এই দুর্বিসহ সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবেশ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রবর্তিত প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব---প্রাউট৷ প্রাউটের বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত মানুষ এই দুর্বিসহ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না৷

প্রাউটের পরিকল্পনায় সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা জল হাওয়া ইত্যাদি, নৃতাত্ত্বিক ও ভাষা সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিচয় অনুযায়ী কতকগুলি সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে৷ প্রত্যেকটি অঞ্চলের আর্থিক ক্ষমতা থাকবে ওই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের হাতে৷ প্রতিটি অঞ্চলের স্থানীয় কৃষিজ, খনিজ ও বনজ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে ব্লকভিত্তিক অন্তর ব্লক ও আন্ত-ব্লক পরিকল্পনা৷ এখানেই একশ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হবে ও প্রতিটি মানুষের হাতে থাকবে ক্রয় ক্ষমতা৷ এই ভাবে তৈরী হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ এই অঞ্চলগুলিতে পুঁজিবাদের আগ্রাসনের ও শোষনের কোন সুযোগ থাকবে না৷