সমবায়ের গুরুত্ব ও সাফল্যের সম্ভাবনা সম্বন্ধে প্রাউটের বক্তব্য

লেখক
প্রাউটিষ্ট

ব্যষ্টিস্বাতন্ত্র্যবাদ ভিত্তিক অর্থনীতি (পুঁজিবাদ) শোষণ–ব্যবস্থার নামান্তর৷ মার্কসবাদী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কৃষি ও শিল্প–উদ্যোগ বা কমিউন ব্যবস্থায় ব্যষ্টিস্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই, এসব ক্ষেত্রে পরিচালক ও শ্রমিকের সম্পর্ক প্রভু–ভৃত্যের সম্পর্কের মত৷ উৎপাদনে শ্রমিকের কোনো উৎসাহ থাকে না, মমত্ববোধও থাকে না৷ তাতে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়৷ প্রকৃতপক্ষে এও এক শোষণ–ব্যবস্থা৷ তাই এই ব্যবস্থাকে প্রকৃত জনকল্যাণমূলক বলা চলে না, আর এ ব্যবস্থা বেশি দিন টিঁকেও থাকে না৷

তাই প্রকৃতপক্ষে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি হ’ল সমবায়৷ এখানে শ্রমিকরাই সমবেতভাবে এর মালিক বা পরিচালক৷ তাই এখানে শ্রমিক–মালিক শ্রমিক–পরিচালকের মধ্যে সংঘর্ষের প্রশ্ণ ওঠে না৷ সবার মিলিত সহযোগিতা, পারস্পরিক বন্ধুত্ব, সকলের সমান অধিকার ও সম্মানই সমবায়ের ভিত্তি৷ এই বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ন্তুপ্স–প্সব্জস্তুনুত্র্ ন্তুপ্স–প্সহ্মন্দ্বব্জ্ত্  সমবায়ের মূল শক্তি৷ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভু–ভৃত্যের সম্পর্ক ব্দব্ভত্ব্–প্সব্জস্তুনু ন্তুপ্স–প্সহ্মন্দ্বব্জ্ত্  বিদ্যমান থাকায় শোষণ–ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে৷

কিন্তু, সমবায়ের সাফল্য সম্পর্কে অনেকে সন্দেহ শোষণ করেন৷ অনেক ক্ষেত্রে সমবায় অসফল হয়৷ কিন্তু এজন্যে সমবায়কে দোষারোপ করা উচিত নয়৷ কারণ, ওইসব ক্ষেত্রে সমবায়ের সাফল্যের যে সমস্ত অপরিহার্য তত্ত্ব সেদিকে নজর দেওয়া হয় না৷ প্রাউট–প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করে মূলতঃ তিনটি তত্ত্বের ওপর–নীতিবাদ, কড়া তত্ত্বাবধান ত্রব্ভহ্মন্দ্বব্জ্লন্ব্দ্ ও জনগণের হদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ৷ এ তিন তত্ত্বের মধ্যে যেখানে যতটুকু রয়েছে সেখানে সমবায় ততটুকুই সাফল্য অর্জন করেছে৷ যেমন, ইজরায়েল চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত হবার জন্যে ওখানকার জনগণের মধ্যে এক স্বয়ং–নির্ভরশীলতা চেতনা গড়ে’ উঠেছে–কারণ জনগণ মন–প্রাণ দিয়ে তাদের অর্থনীতিকে মজবুত  করতে চায়, তাই সেখানে তারা সমবায়ের দ্বারা শুষ্ক মরুভূমিকে শস্য–শ্যামলা করে’ তুলেছে৷ ঠিক সেই মনোভাব ভারতে গড়ে’ তোলা হয়নি বলে’ সমবায় অসাফল্যের নমুনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ভারতের সমবায় অর্থনীতির উন্নতির জন্যে তৈরী হয় নি– তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যে৷ তাই এখানে সমবায় সফল হওয়াটাই আশ্চর্যজনক হ’ত৷১২

তাই উপরিলিখিত ৩টি বিষয়ে  (নীতিবাদ, কঠোর তত্ত্ববধান ও জনগণের হূদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ) সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে সমবায় সফল হতে বাধ্য৷

প্রাউট–প্রবক্তা সমবায়ের গুরুত্ব বোঝাতে আরও বলেছেন, ‘‘সমবায় প্রথার অর্ন্তনিহিত ভাবটি হ’ল বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ভাব৷ কেবল এই মানবিক ভাবের ভিত্তিতেই মানব সমাজের সুষ্ঠু ও সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রগতি ঘটানো সম্ভব৷ মানবজাতির মধ্যে পূর্ণ ও চিরস্থায়ী ঐক্যস্থাপনের পক্ষে সমবায়–র্থনৈতিক ব্যবস্থাই আদর্শপন্থা৷ পৃথিবীর সকল দেশে সকল মানুষেরই উচিত ব্যাপকভাবে এই সমবায় প্রথার প্রচলন করা৷

শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য সবকিছুই যতদূর সম্ভব সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া দরকার৷ এই জন্যেই প্রয়োজনবোধে সমবায় সংস্থাগুলিকে বিশেষ ধরণের সুবিধা দিতে হবে, রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হবে, ও ধীরে ধীরে বিশেষ বিশেষ ধরণের কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্র থেকে ব্যষ্টিগত মালিকানা বা ব্যষ্টিগত পরিচালনা ব্যবস্থা রহিত করতে হবে৷১১

স্বাধীন ভারতে প্রথম গণ প্রতিরোধ

মনোজ দেব ঃ বাংলা ভাষা আন্দোলনে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে৷ ১৯শে মে ১৯৬১ সালে শিলচরও মনে পড়ে কিন্তু স্বাধীন ভারতে মাতৃভাষার মর্যাদার দাবীতে প্রথম গণ প্রতিরোধ হয়েছিল বিহারে ১৯৪৭ সালেই স্বাধীনতার জন্মলগ্ণ থেকে৷ বাঙলার অবিচ্ছেদ্য অংশ মানভূম সিংভূম ব্রিটিশ চক্রান্ত করে বিহারে সঙ্গে যুক্ত করে ১৯১২ সালে৷ তখনই মানভূমের বাঙালী সমাজ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল৷ কিন্তু পরাধীন ভারতে সে আন্দোলন স্থায়ী হয়নি৷ কিন্তপ স্বাধীনতা জন্মলগ্ণ থেকেই বিহার সরকার মানভূম ও সিংভূমবাসীর মাতৃভাষা বাংলা কেড়ে জোরপূর্বক হিন্দি চাপাতে চেয়েছিল৷ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল মানভূমের বাঙালী সমাজ৷ সে আন্দোলন দমন করতে বিহার সরকারের অত্যাচার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকেও ম্লান করে দিয়েছিল৷ তবুও মানভূমবাসী মাথা নত করেননি৷ দাবী উঠলো মানভূমকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করার৷   অবশেষে বাধ্য হয়ে ১৯৫৬ সালে ১লা নভেম্বর মানভূমকে ভাগ করে পুরুলিয়া অংশ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা হয়৷ ধানবাদ বোকারো বিহারেই থেকে যায়৷ সেদিনে সেই আন্দোলনই অনুপ্রাণিত করতে মানভূমের পথে পথে মানুষ গাইতো টুসু গান৷ তারই কয়েকটি ---

মানভূমের সাংসদ ভজহরি মাহাত গাইলেন---

‘‘শুণ বিহারী ভাই

তোরা রাইখ্যতে লারবি ডাং দেখাঁই

বাংলা ভাষার দাবীতে ভাই

কোন ভেদের কথা নাই

এক ভারতে ভাইয়ে ভাইয়ে

মাতৃভাষায় রাজ্য চাই৷’’

মধূসূদন মাহাতোর প্রতিবাদী কন্ঠ গেয়ে উঠলো---

‘‘মন মানে না রে হিন্দি সইতে

ভাষা মোদের হরে নিল হিন্দিতে৷

মাতৃভাষা হরে যদি

আর কি মোদের থাকে রে৷

তাই মধূবলে মাতৃভাষার

ধবজা হবে বহিতে৷’’

আর একপ্রতিবাদী কন্ঠ জগবন্ধু ভট্টাচার্য গাইলেন---

‘‘প্রাণে আর সহে না

হিন্দি কংগ্রেসীদের ছলনা৷

ইংরেজ আমলে যারা গো

করতো মোসাবিয়ানা

এখন তার হিন্দি - কংগ্রেসী

মানভূমে দেয় যাত না৷’’