সন্দেশখালি---শ্মশান - কুক্কুরদের কাড়াকাড়ি গীতি

লেখক
পথিক বর

সন্দেশখালি প্রথম নয়, কেউ ভুলেও ভাববে না---এটাই শেষ৷ আজ যারা সন্দেশখালি নিয়ে সরব তাদের অনেকেই ১২/১৪ বছর আগে এই ধরণের নক্কারজনক ঘটনায় নীরব থাকতো নতুবা ঘটনাকে গুরুত্বহীন করার চেষ্টা করতো৷ সেদিন যারা সরব ছিল আজ তারা অনেকেই কেমন যেন মিইয়ে গেছে৷

তাহলে প্রতিবাদ কিসের জন্যে? মিডিয়ায় মুখ দেখাতে, পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে, গায়ের ঝাল মেটাতে---এক কথার ব্যষ্টিগত ইর্ষায় অথবা দলীয় স্বার্থ প্রতিবাদের প্রেরণা, সমাজকে পাপমুক্ত করার এষণা নয়, পাপকে প্রশ্রয় দেবার ক্ষমতার দখল নিতে প্রতিবাদ! না-হলে প্রতিবাদ কি হয়নি! পার্কষ্ট্রীট, কামদুনি, বগটুই--- এত প্রতিবাদ প্রতিরোধের পরেও আবার সন্দেশখালি কেন?

অপরাধীর শিবির পাল্টায় স্বভাব পাল্টায় না৷ প্রতিবাদের রঙ বদলায় লক্ষ্য বদলায় না৷ কারণ অপরাধী ভালই জানে---প্রতিবাদের শেষ পরিণতি কোথায়৷ প্রতিবাদীরাও জানে তাদের দৌড় কতদূর? তাই প্রতিবাদ হয় আবার থেমেও যায়, শ্মশান কুক্কুররা যেমন শব ভক্ষণের পর আবার অপেক্ষায় থাকে কখন একটা শব আসে৷ প্রতিবাদীরাও তাই---ক্ষমতার ময়দান কে কতটা দখল নিতে পারে তারি লাগি কাড়াকাড়ি৷

স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতি সমাজকে ব্যাভিচারমুক্ত করতে নয়, ব্যাভিচারকে হাতিয়ার করে রাজনীতির ময়দানে কে কতটা জমি দখল করতে পারে তার লাগি কাড়াকাড়ি--- তাই ঘটনা ঘটে--- প্রতিবাদ হয়, রাজপথে মিছিল চলে--- প্রদীপ জ্বলে, সোস্যাল মিডিয়ায় বস্তির ঝগড়া বাধে ---তারপর কিছুদিন পরে সব নীরব---আর একটা শবের প্রতিক্ষায়!

শুধুমাত্র প্রতিবাদে সমাজ থেকে এই ব্যাভিচার দূর হবে না৷ এই ব্যাভিচারের মূলে আছে ধনবৈষম্য, ভ্রষ্ট রাজনীতি ও রুচীহীন অশ্লীল নিম্নমানের চলচ্চিত্র গান যা শোষকের শোষনের অবলম্বন৷ তাই সমাজ থেকে এই ব্যাভিচার দূর করতে হলে প্রতিবাদের ঢেউ শুধু সন্দেখালিতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না৷ প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়তে হবে শোষকের দরজায় ভেঙে ফেলতে হবে কেন্দ্রীত অর্থনীতির খোল নলচে, ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে ভ্রষ্ট রাজনীতির ভ্রষ্টাচার নেতৃত্বকে ভস্মীভূত করে দিতে হবে যুব সমাজকে অধঃপথে পাঠানোর অসংস্কৃতির আখড়াগুলোকে৷ কিন্তু সেখানে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে ফেলার হিম্মত কোন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নেই৷ যাঁর ছিল---তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতার আগেই৷ তাই চলতেই থাকবে --- বানতলা --- বিরাটি --- তারকেশ্বর--- সিঙ্গুর---হাতরাস--- পার্কস্ট্রীট--- কামদুনি সন্দেশখালি--- কয়েকদিন নিরব৷ তারপর আরও একটা---শ্মশান কুকুরদের প্রতিবাদের কাড়াকাড়ি গীতি চলতেই থাকবে৷ সোস্যাল মিডিয়ার পকেট ভরতেই থাকবে৷ শুধু স্থান কাল পাত্রটুকু বদলাবে৷