সন্ত্রাসবাদ

লেখক
শ্রী রত্নেন্দু দাস

সন্ত্রাসবাদের সমস্যা আজ এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা বিশ্বে এবং তা ধবংস করার কথাও অনেকে বলেন, কিন্তু প্রশ্ণ হচ্ছে এর কারণ কি বা কেনই বা মানুষ এ পথ বেছে নেয়? যদি আমরা গভীর দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখি তবে দেখতে পাই এর প্রধান কারণ যেমন রয়েছে পুঁজিবাদ ঠিক তেমনি বেকার সমস্যাও৷ এখন কথা হচ্ছে যেহেতু অনেকেই বলেন সন্ত্রাসবাদের কোন ধর্ম হয় না, প্রশ্ণ হচ্ছে তাও কি ঠিক? না তা ঠিক কেন কেননা সন্ত্রাসবাদের আরেকটি কারণ হচ্ছে ভাবজড়তাবাদী দর্শন বাdogmatic philosophy.

এখন কথা হচ্ছে পুঁজিবাদকে নিয়ে, তা যদি আমরা পুঁজিবাদের কথা বলি তবে বলতে হয় আমরা সকলেই জানি মানুষের চাহিদা অনন্ত আর এই অনন্ত চাহিদার জন্য মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ নিজের জ্ঞান ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজের সকল সম্পদ আত্মসাৎ করতে চায় ফলে তারা বেকার যুবক যুবতীদের নিজের দলে আনে (কখনো বা বাধ্য করে) আবার কিছু মানুষ রয়েছে যাদের উদ্দেশ্য কেবল অস্ত্র ব্যবসা করা আর এজন্যে এরা সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয় কিন্তু সবার সম্মুখে এরা বড় বড় কথা বলে৷ তাদের কাছে কত মানুষ মরল বা না, খেয়ে থাকলো তাতে কিছু আসে যায় না.কেননা তাদের অস্ত্রের ব্যবসা চললেই হল৷

এখন আসছে ভাবজড়তাবাদী দর্শনের dogmatic philosophy) কথা৷ পৃথিবীতে যত বেশী রক্ত ঝরেছে বা ভবিষ্যতে আরো ঝরবে এর মূল কারণ হচ্ছে এই ত্রুটিপূর্ণ দর্শন৷ এই দর্শনে সর্বপ্রথম মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করা হয় এই বলে যে তা হচ্ছে স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী আর তাই এটা আপ্তবাক্য৷ এখন প্রশ্ণ হচ্ছে যদি এটা আপ্তবাক্য হয় তবে তা কুসংস্কারে-অন্ধবিশ্বাসে ভরা থাকবে কেন? মেনে নিলাম তা ঈশ্বরের বাণী তবে কেন সেই দর্শনের মধ্যে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ধর্মমতের অনুগামীদের কথা লেখা হবে বা বলা হয় সেই ধর্মের অনুগামীরা ভাই ভাই ও বাকীদের কোন জায়গা নাই? বলা হয়েছে বাকীরা সবাই কাফের এবং তারা যতদিন পর্যন্ত সেই ধর্মমতে না আসছে ততদিন তারা ঈশ্বরের অভিশাপগ্রস্ত হয়ে থাকবে, এই কথা শুনে মনে হয় যেন বাকিরা সব অন্য গ্রহ থেকে এসেছে কিংবা তাদের ঈশ্বরের ডিপার্টমেন্ট আলাদা৷ কথা হচ্ছে তা যদি স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী হত তবে কেন সেই দর্শনকে দেখে মানুষ প্রশ্ণ করতে পারে না? কেন মানুষের মুখ-নাক-কান সব বন্ধ করে দেওয়া হয়? এর প্রধান কারণ হল যাতে কেউ প্রশ্ণ করতে না পারে, কেউ ভুল ধরতে না পারে অন্ধবিশ্বাস দেখেও৷ যদি মানুষ প্রশ্ণ করে তবে সেই দর্শনটি আর টিকবে না৷ যেহেতু বলা হচ্ছে অন্যান্যরা কাফের তাই যখন সেই দর্শনের অনুগামীরা সেই দর্শনকে অনুসরণ করে সন্ত্রাসবাদের রাস্তায় পা দেয় তখন সাধারণত এরা অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দেয় নইলে বলে এমনটা যারা করছে তারা কখনই এটাকে বা এই দর্শনকে ঠিক মেনে চলছে না নতুবা এমনটা হত না৷ কিন্তু তারা কেউই সেই দর্শনের ভুলত্রুটিগুলি সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা করেন না৷ এই দর্শনের ভুল ব্যাখ্যাগুলিকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় আর যারা তা করে তারা স্বার্থবাদী৷ স্বার্থবাদী, কেননা তারা স্বর্গের বা জান্নাতের লোভ ছাড়াও আরও কিছু লোভের (৭২টা হুরপরীর) জন্যে এমনটা করে থাকে৷ আসলে তা হল কিছু স্বার্থবাদী মানুষের চালাকি যাতে ছলে-বলে-কৌশলে বছরের পর বছর এই দর্শনকে চালিয়ে নেওয়া যায়৷ ভাবজড়তার কারণ এজন্যও বলা হয়েছে কেননা কিছু স্বার্থপর ব্যাক্তি সাধারণ মানুষের মধ্যে ভেদভাব সৃষ্টি করে উঁচু জাতি ও নীচু জাতি বানিয়েছে৷ এই সব স্বার্থবাদীদের দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছে যে উঁচু জাতের মানুষ তথাকথিত নিচুজাতের মানুষের হাতে কিছু খাওয়া বা নেওয়া যাবে না, ঘরে প্রবেশ করাও নিষেধ৷ আসলে এরা সবার উপরে থাকার মনবাসনার জন্যই এমনটা সৃষ্টি৷