শোষণ মুক্তির পথ নীতিবাদীদের নবজাগরণ ধান্দাবাজদের ভণ্ডামী নয়

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের যে সংবিধান সেটি পৃথিবীর বিশেষ কয়েকটি দেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়েই মূলতঃ তৈরী হয়৷ তৎকালীন ভারতবর্ষের জ্ঞানীগুণী ব্যষ্টি নিয়ে  একটি কমিটি ঘটন করে নানা আলোচনার পর এটির সৃষ্টি হয়৷ তাই এই সংবিধান বিরাট ও জটিল৷ এই সংবিধানের মধ্যে অনেক কিছু আছে যা দেশকে উন্নতির  দিকে নিয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের তা হলো যাদের  হাতে এটি পড়েছে তারা এই মর্যাদা দিতে পারে নি সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থেই৷ তাই এর শতাধিকবার বিভিন্ন ধারার পরিবর্ত্তন ও পরিবর্দ্ধন ঘটেছে বিশেষ বিশেষ স্বার্থান্বেষীদের  সংকীর্ণ স্বার্থে৷  শব্দটির অর্থবোঝা বড়ই কঠিন৷ আর নির্বাচন হলো  পবিত্র দায়িত্ব পালনের এক বিশেষ পর্ব৷ এইটিকেই বিকৃত করেছে রাজনৈতিক দলগুলি সংকীর্ণ স্বার্থে৷ প্রকৃত দেশনেতা নির্বাচিত হওয়ারই সুযোগ পান না৷ তাই এদেশে ধান্দাবাজরা, ক্ষমতা লিপ্সু ধনী ব্যষ্টিরাই নানা রাজনৈতিক দল করে শাসন ক্ষমতা কব্জা করে দেশকে গোল্লায় পাঠাচ্ছে৷

তাই আজ জাতীয় দলগুলির প্রায় সবগুলিই জন সমর্থন হারিয়ে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে৷ আর সেই দলগুলিরই নানা নামে অনেক দলছুট আঞ্চলিক দল হয়েছে৷ তারা ও আবার দল ভাঙ্গাভাঙী করে এদল ওদলে ঢুকে এমন সব কাণ্ড করছে আর মারামারি কাটাকাটি করে এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে যার জন্য মানুষ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস হারিয়ে বসেছে দলগুলির  উপর! ফলে আশপাশের ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলির চেয়ে এই বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত যুক্তরাষ্ট্র জনগণের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা তাদের চেয়ে অনেক পশ্চাতে পড়ে আছে৷ দুর্নীতিতে দেশ একেবারেই ডুবে গেছে৷ এর মূল কারণ হল এ দেশের সরকার মাথা ভারী ব্যয়বহুল সরকার৷ তাই সরকারের আয় কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসন চালাতেই খরচ হয় বেশী৷ জনগণ কিন্তু করভারে শোষিত রক্তশূন্য হয়ে পড়ে৷ হতদরিদ্র মানুষের সেবা দিতে যে অর্থের প্রয়োজন তাতেই সরকার ফতুর হয়ে যায়৷ এই দেশকে শেষের দিকে যারা পালন করে  তারা ছিল বাহিরের লোক৷ তারা এদেশের উন্নতি করার চেয়ে এ দেশকে শোষণ করে নিজেদের দেশের শ্রীবৃদ্ধি ঘটায়৷ দেশকে রক্তশূন্য করে ছেড়েছে৷ ইংরেজ যাদের হাতে দেশকে টুকরো করে শাসনভার দিয়ে গেল তারা মূলতঃ সমাজের রাজা মহারাজা বংশের সন্তান৷ তাদের দলই মূলতঃ হল জাতীয় দল৷ সেই বংশ পরম্পরায় চলছে কিন্তু রাজশক্তি হারিয়ে বসেছে৷ সেইগুলি ভেঙ্গে বহু দলছুট দল হয়েছে৷ তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া লড়াই করে গরিব মানুষ দিশেহারা!

মাথায় যাঁরা বসে আছেন তাঁরা সেই পুরাতন ধনতান্ত্রিক শাসনের সমাজব্যবস্থায় সেই কেন্দ্রে মহারাজা, সম্রাট ও রাজ্যে ছোট লাট গভর্নর এর মতো পদাধিকারগণ৷ ইংরেজ শাসনে লণ্ডনের ইন্ডিয়া হাউসের নিয়ন্ত্রকগণ যেমন ভাইয়েরা, গভর্নর সিলেক্ট করে পাঠাতো ভারতের রাজ্য শাসনে ঠিক তেমনই ধারাগুলি রয়ে গেছে  বর্তমানে৷ যেমন রাষ্ট্রপতি  নির্বাচিত হয়ে দেশের৷ এম.এল.এ, এমপিদের  বোটে কিন্তু রাজ্যে গভর্ণর মনোনীত হন কেন্দ্রের মাথায় যে শাসক আছে তাদের ইচ্ছানুসারে মনোনীত ব্যষ্টিগণ কিন্তু নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি তাঁকে কেন্দ্রের মন্ত্রীসভা যাঁকে ঠিক করে দেন৷ তবে যেহেতু নির্বাচিত গণ গণতন্ত্রের ধারকবাহক তাই এই পদ্ধতি৷ জাতীয় রাজনীতি যাঁরা করেন তাঁরা সেই ধনী রাজা মহারাজের নবাব, বাদশাহদের বংশধরগণ৷ তারাই দলের ভাগ্যবিধাতা৷

বর্ত্তমান সব দলে ধনীরাই পৃষ্ঠপোষক কারণ সাধারণ যারা আছে তারা সব দলেরই কিছুটা ইয়েসম্যান৷ তাই দলগুলি বোটে, জিততে নানা কৌশল গ্রহণ করে থাকে৷ তবে এছাড়া গতি নেই৷ তাই দেশের ও হাল তথৈবচ৷ বুদ্ধিজীবীরা চিরকালই মাপা পথে চলে৷ কিছু উৎসাহী ও কিছুটা উদারভাবাপন্ন ব্যষ্টিরাই মনমত দলে যোগ দেয়৷ দল এই ভাবে চলে৷ দল রক্ষা করা কঠিন কারণ অত্যধিক খরচ তাই আত্মপ্রতিষ্ঠায় ধনীদের দ্বারস্থ হতে হয় দলের নেতা-নেত্রীদের৷ সেখানে ঐ ধনীরাই নিয়ন্ত্রক হয়ে বসে৷ কারণ কলকারখানার মালিকরা ব্যবসাদারগণ তো সরকারের সঙ্গে সখ্যতা করতে অর্থ ঢালে৷ চাঁদা দিয়ে আর কতটুকু হয়! দলতন্ত্র তাই বেঁচে থাকে ধনীদের স্বার্থে৷ আর নিজেদের আত্মরক্ষার্থে দলের নেতারা সেদিকেই চলে৷ ধনীদের উপায় বৃদ্ধির জন্যই আজ সরকারী নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থাগুলি বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র ধনীদের হাতে৷ সরকার তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করেই শাসক হিসাবে শাসক হয়ে লাঠি ঘোরায় অসহায় দুর্বল জনগণের উপর এ কেবল ভুরি ভুরি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷ আর সেবার নামে অষ্টরম্ভা! শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, শান্তি শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা সবই চুলোর দোরেই যাবে আর যাচ্ছে৷ সততা, নিষ্ঠা, দেশসেবা এই গুলি ধীরে ধীরে শেষ হয়েই যাবে! তাই আজ ঘোষিত হচ্ছে দিকে দিকে--- বিশ্বের নীতিবাদীরা এক হও৷ বাঁচো আর অন্যকে বাঁচতে দাও৷ সাম্প্রদায়িক, ধান্দাবাজি বন্ধ হোক৷ প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক,বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুধব হও, জড়বাদ নয় অধ্যাত্মবাদ প্রতিষ্ঠিত হোক৷ মানুষের সমাজ এক ও অবিভাজ্য, মানুষ আধ্যাত্মিক প্রাণী, অর্থনৈতিক জীব নয়৷ মানুষ মানুষ ভাই ভাই৷ অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরনেই হলো শোষন মুক্তির প্রধান চাবিকাঠি৷ মনে রাখতে হবে মানুস সমাজবদ্ধশালী৷ বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের দাস নয়৷ সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে মানুষের  মতো বাঁচতে হলে৷ সংগ্রামই জীবন৷