শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী ও নব্যমানবতাবাদ

লেখক
প্রভাত খাঁ

পৃথিবীর বুকে যাঁরা মানব ও জীবজন্তু গাছপালা সম্বন্ধে চিন্তা ভাবনা করতেন তাঁরা সকলেই ছিলেন মহামানব৷ তাঁরা সকলেই নমস্য ব্যষ্টি৷ তবে একটা কথা না বললে অসম্পূর্ণ থাকে তা হলো এই ধরণের মহামানব সারা পৃথিবীর অনেক দেশেই জন্মেছিলেন৷ তবে  ভারতবর্ষই হল ব্যতিক্রম৷ এখানে সেই মুনি ঋষি থেকে অনেকেই  এই ভূখণ্ডে  বিরাট চিন্তাভাবনা করার মতো মহামানব এসেছে  অসংখ্য৷ তবে তাঁদের সকলের তেমন প্রচার ছিল না৷ প্রচার পেয়েছিলেন ও বিখ্যাত হয়েছেন সেই সদাশিব যিনি সমাজ ব্যবস্থা, নাচ গান, রোগে  ওষুধপত্রও আরো অনেক কিছু দিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন  শ্রীকৃষ্ণ যিনি ভারতবর্ষের মানব সমাজকে একসূত্রে বাঁধতে বিচ্ছিন্নতাবাদকে  নির্মূল করতে কুরুক্ষেত্রে অর্থাৎ এই পৃথিবীর বুকে পাপ ও পুণ্যের লড়াই করে একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ ও শাসন ব্যবস্থার  প্রবর্ত্তন করেন৷ তিনি যাঁরা সৎব্যষ্টি তাঁদের রক্ষায় আর দুষৃকতকারীদের নিধনে কাজে নামেন৷ সেই সৎনীতিবাদীদের সঙ্গে থেকে সংগ্রাম করেন তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে৷ যুগে যুগে  এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী এসেছেন যখন দরকার হয়েছে৷

এই ধরনের একজন মহামানব আসেন এই বাঙলায় মুসলমান শাসনকালে৷ তিনি হলেন নদীয়ার নদের নিমাই৷ সেই গৌরাঙ্গদেব যিনি শ্রীচৈতন্যদেব নামে বিখ্যাত৷ তিনি সরাসরি জাতপাত স্বীকার করতেন না এমনকি কুসংস্কার দূর করার জন্য সমাজব্যবস্থায় সেদিন এক বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসেন৷ আর সেই শ্রীকৃষ্ণের  আরাধনা করতেন সেই ঈশ্বরকে লাভ করার জন্য৷

শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আগমন হয় অত্যাধুনিক যুগে অর্থাৎ ঊনবিংশ শতাব্দীর ১৯২১-২১শে মে পূর্ণিমার পবিত্র দিনে যেটিকে আনন্দমার্গীয় আনন্দপূর্ণিমা বলে আখ্যায়িত করা হয়৷ তাঁর পিতৃদত্ত নাম হলো পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার৷ তাঁর প্রদত্ত আধ্যাত্মিক দর্শন ও সমাজও অর্থনৈতিক দর্শন প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) তাঁর আনন্দমার্গ দর্শনে লিপিবদ্ধ হয়৷ তাঁর প্রদত্ত সংঘটন আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ৷ এই প্রচারক সংঘের সর্বক্ষণের কর্মীদের বলা হয় অবধূত ও অবধূতিকা৷ এছাড়া গৃহী আচার্য ও তাত্ত্বিকগণ৷ তিনি ঘোষণা করেন--- মানবসমাজ এক অবিভাজ্য৷ মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম প্রাণী৷ এই মানুষের মূল লক্ষ্যই হলো নিজেকে জানা৷ আত্মানাং বিদ্ধি৷ জগতের সকল মানুষ, প্রাণী জীবজন্তুদের হিংসা না করা গাছপালাকে রক্ষা করা৷ আর ধীরে ধীরে নিরামিষ আহার গ্রহণ করা অভ্যাস করা ৷ নেশার জিনিস না গ্রহণ করা৷ শরীরকে  সুস্থ রাখার  জন্য আসন করা৷ নিয়মিত আধ্যাত্মিক সাধনা গুরু প্রদত্ত মহামন্ত্রের অনুশীলনের মাধ্যমে৷ সকল স্থানে বস্তু গাছপালা জীবজন্তুর মধ্যেই তিনি সেই পরমব্রহ্ম বিরাজ করছেন চিন্তাভাবনা করা ও তাকে মনে প্রাণে মেনে নেওয়া৷ একেশ্বরবাদকে মনে প্রাণে মানা ও উপলব্ধি করা৷ এগুলোই শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী প্রদত্ত ‘নব্যমানবতাবাদ’ দর্শনের মূলকথা যেহেতু জগৎ তাঁর সেই পরমপুরুষের সৃষ্টি সেই সৃষ্টিকে রক্ষা করা৷ সৎনীতিবাদী হিসাবে সমাজের বুকে সকল প্রকার শোষণ,অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা প্রতিরোধ করা এবং  প্রয়োজনে পাশশক্তি নির্মূলের জন্য সংগ্রাম করা যেমন শ্রীকৃষ্ণ করে গেছেন৷ আনন্দমার্গীদের সকল বাধা বিপত্তিকে প্রতিরোধ করে যাঁরা  শোষিত  ও নিপীড়িত বঞ্চিত তাঁদের স্বনির্ভর শীল  করে গড়ে তোলার জন্য--- কাজ করে যেতে হবে৷ 

সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য হলো বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য তাই  শোষণ ও পীড়ণ করে কোন সমাজকে ধবংস করার বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়া মার্গীদের সামাজিক কর্ত্তব্য৷ তাই তাঁদের অবশ্যই জাতপাতের উর্দ্ধে উঠে এক মানব সমাজ গড়তে হবে৷

তাই সমাজ আন্দোলন জরুরী৷ এই আন্দোলন মার্গের সকলকে করতে হবে৷  তাদের অবশ্যই নিরামিস আহার করতে হবে৷ আর জীবজন্তু পশুপক্ষী গাছপালাদের ও অবশ্য আহারের ভক্ষ্য ও ধবংস না করে তাদের রক্ষা  করতেই তাই নব্যমানবতাবাদী হতে হবে মার্গীদেরই৷

অতীতে ও বর্তমানে অনেক মানবতাবাদী দেখা যায় কিন্তু  মাংস ও মাছও মাছের মুড়ো খেতে একেবারে আহ্লাদে আটখানাতাহলে চলবে না৷ তাই তিনি সর্বপ্রথম ঘোষণা করলেন ‘নব্যমানবতাবাদী’ হতে হবে মানুষকে৷ পরমপুরুষের সৃষ্ট জগৎ রক্ষা পাবে বিশ্বে ভারসাম্য রক্ষা হবে৷