নারীর মর্যাদা

বলিষ্ঠ ত্রুটিমুক্ত সমাজ চাই

নারী কল্যাণ ঃ সমাজে নারীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, একান্তই দুর্বিসহ৷ সংঘের যারা ‘তাত্ত্বিক’, তাদের কর্ত্তব্য হ’ল অনগ্রসর মহিলাদের মধ্যে কল্যাণমূলক কাজ করা, তাদের কুসংস্কার–নিরক্ষর দূর করা, ধর্মচক্রের বন্দোবস্ত করা ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা৷ দেখা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর নারীরা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন৷ তাই তাঁরা যাতে স্বাধীনভাবে জীবিকার্জন করতে পারেন সে ধরণের সুযোগ তৈরী করতে হবে৷

কয়েকজন স্মরণীয়া মহিলা

কর্কটী রাক্ষসী

শিব তাঁর বৈদ্যক শাস্ত্র কাকে প্রথম শিখিয়েছিলেন তা’ এখন আর হলপ করে ৰলা যায় না৷ তবে যদ্দুর মনে হয়, তিনি প্রথমে তা’ শিখিয়েছিলেন কর্কটী রাক্ষসী নাম্নী জনৈকা অনার্য কন্যাকে৷ অনেকে সেকালে তাচ্ছিল্য করে অনার্যদের কখনো দানব, কখনো দৈত্য, কখনো রাক্ষস ইত্যাদিতে অভিহিত করত৷ সেকালের ভারতে কেবলমাত্র এই কর্কটী রাক্ষসীই বিসূচিকা (ওলাওঠা বা কলেরা) ও কর্কট রোগের (ক্যান্সার রোগ) চিকিৎসা করতে পারতেন৷ পরে ডগমা–প্রেষিত মানুষেরা তাঁকে হত্যা করে৷    (‘‘গণবতীসূত’’

    ‘শব্দ–চয়নিকা’, ১৬শ পর্ব)

নারী ও পুরুষ একই পাখীর দু’টি ডানার মত

আমি চাই, আমাদের যে সব ছেলেমেয়েরা বৌদ্ধিক দিক থেকে উন্নত অথবা বৌদ্ধিক স্তরে আরও উন্নতি ঘটাতে চায়, তারা মানব সমাজের বৌদ্ধিক প্রগতির জন্যে উৎসাহ দান করে চলুক৷ মানুষের বৌদ্ধিক প্রগতি শেষ পর্যন্ত মানব সমাজের সর্বতোমুখী বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে৷ আমি আশা করছি, তোমরা আনন্দমার্গের ছেলেমেয়েরা এ ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারছ  তোমাদের উচিত, বৌদ্ধিক প্রগতির গুরুত্বটাকে ভালভাবে বুঝে নেওয়া৷

(‘‘ভাবজড়তা ও মনীষা’’, ‘অভিমত’, ৪থ খণ্ড)

স্বাস্থ্য ও কৌশিকী নৃত্য

মানুষের অস্তিত্ব ত্রি–স্তরীয় অর্থাৎ এর তিনটে স্তর (Stratum) রয়েছে– শারীরিক (Physical), মানসিক (Phychic) ও আধ্যাত্মিক (Spiritual)৷ এই যে তিনটে স্তর এদের কোনটিকেই অবজ্ঞা করা যায় না৷ শারীরিক স্তরের চেয়ে মানসিক স্তরের মহত্ত্ব অধিক, কিন্তু তাই বলে শারীরিক স্তরটাকেও (Physical stratum) উপেক্ষা করা যায় না৷ ঠিক তেমনি মানসিক স্তর (Psychic stratum) অপেক্ষা আধ্যাত্মিক স্তরের (Spiritual stratum) গুরুত্ব বেশী কিন্তু মানসিক স্তরটাও (Psychic stratum) অবহেলার জিনিস নয়৷ তাই তারও চর্চা আবশ্যক৷ তেমনি যারা আধ্যাত্মিক চর্চা করে না, কেবল শরীর ও মনেরই চর্চা করে তারা দেখতে মানুষের মত হলেও তাদের মানসিকতা স্থূল হয়ে প

জাতিভেদ ও নারীর মর্যাদা হ্রাস

বৈয়ষ্টিক জীবনে মৌলিক অধিকার সমূহের সুরক্ষা তথা সামূহিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মানুষ অনাদিকাল থেকে শৃঙ্খলাসমন্বিত শাসন–ব্যবস্থার প্রবর্ত্তন করে চলেছে৷ এই সকল আইন শাসকশ্রেণীই সময়ে সময়ে তৈরী করেছে ও প্রতিটি আইন থেকে এ ভাবই প্রকট হয় যে শাসক শ্রেণী আইন প্রণয়নকালে তাদের নিজেদের স্বার্থের দিকেই সব থেকে বেশী নজর রেখেছে৷ দৃষ্টান্ততঃ, মনুস্মৃতিতে মনু বিধান দিয়েছেন যে কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকন্যার পাণিগ্রহণ করলে তাকে মাথা মুড়িয়ে গাধার পিঠে বসিয়ে শহর পরিক্রমণ করানো হবে, আর শূদ্র যদি কোন ব্রাহ্মণতনয়ার পাণিগ্রহণ করে তবে সেক্ষেত্রে তার শাস্তি হবে প্রাণদণ্ড৷  এই ধরণের আইন ব্যবস্থা সমাজে ব্রাহ্মণদের প

নারী–পুরুষ উভয়েই পরমপুরুষের আদরের সন্তান

আমরা সবাই পরমপুরুষের সন্তান৷ তিনি সবাইকে তৈরী করে চলেছেন৷ সুতরাং বেঁটে, লম্বা, কালো, ফর্সা, আমি পুরুষ, সে মেয়ে–এসব ভেদের মধ্যে থাকার প্রয়োজন নেই৷ পরমপুরুষের সঙ্গে মনটা মিলিয়ে দিয়ে ভেবে দেখ কী করলে পরমপুরুষের ভালো লাগৰে, কী করলে ভাল লাগবে না৷ যা’ করলে তাঁর ভাল লাগবে সেই মত করবে৷ কোন পিতা চাইবে না তার একটা সন্তান শুকিয়ে মরুক, একটা সন্তান প্রয়োজনের চেয়েও বেশী খাক বা প্রয়োজনের চেয়েও বেশী জমিয়ে রাখুক৷ অর্থনৈতিক জীবনেও তোমাদের সেই রকমই চলতে হবে৷ সামাজিক জীবনে কোন পিতাই মনের দিক থেকে চাইবে না তার বিধবা মেয়ে অন্য রকম পোষাক পরুক, তার বিধবা মেয়ের ওপর সামাজিক নির্যাতন চলুক অর্থাৎ কোন শুভ কার্যে তাকে ছ

নারীর প্রতি অবিচার ঃ ভাষা ব্যবহারে

এই দশ লাখ বৎসরের মানুষের ইতিহাসে মানুষের প্রতি সুবিচার করা হয়নি৷ মানুষের একটি শ্রেণী, একটি বর্গের প্রতি বেশী বাড়াবাড়ি করা হয়েছে, বেশী আদিখ্যেতা করা হয়েছে, ও তা, করতে গিয়ে অন্যকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে৷ একজন মানুষ লড়াই করল, মরল, আত্মদান দিল, কাগজে বড় করে তা ছেপে দেওয়া হ’ল, আর সে মরে যাওয়ার পর ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলিকে নিয়ে তার বিধবা স্ত্রীকে কী ধরণের অসুবিধায় পড়তে হ’ল সেকথা খবরের কাগজে বড় করে ছাপানো হ’ল না অর্থাৎ একতরফা বিচার করে আসা হয়েছে৷ যদিও ব্যাকরণগত ব্যাপার, আর হঠাৎ বদলানো যায় না, তবু ‘ম্যান’ ‘প্প্ত্রু’ এই কমন জেণ্ডারের মধ্যে ‘ম্যান’, আর ‘ওম্যান’(woman) দুই–ই এসে যায়৷ অথচ ‘ওম্যান’ এই কমন জেন

নারীর প্রতি অবিচার

কিছুকাল আগেও কেউ কেউ বিধবা নারীর নামের সঙ্গে ‘শ্রীমতী’ বা ‘দেবী’ না লিখে ‘শ্রীমত্যা’ বা ‘দেব্যা’ লিখতেন৷ এরকম লেখা ব্যাকরণের দিক দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ তো বটেই, নারীর পক্ষে মর্যাদাহানিকরও৷ কারণ, বিধবা কী এমন অপরাধ করেছে যে জন্যে তাঁর শ্রীমতীত্ব বা দেবীত্বকে এইভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হবে বৈয়াকরণিক বিচারে ‘শ্রীমত্যা’ মানে ‘শ্রীমতীর দ্বারা’, ‘দেব্যা’ মানে ‘ ‘দেবীর দ্বারা’৷ অধবা সধবা–বিধবা নির্বিশেষে সব নারীর নামের সঙ্গেই ‘শ্রীমতী’ বা ‘দেবী’ শব্দ ব্যবহূত হতে পারে৷ এতে কোন সামাজিক বাধাও নেই, আবার বৈয়াকরণিক আপত্তিও নেই৷ ইংরেজী ‘মিস্’(Miss) শব্দের অনুকরণে বাঙলায় অধবা মেয়েদের নামের আগে যে ‘কুমারী’ শব্দটি ব্যবহ

জাতিভেদ ও নারীর মর্যাদা হ্রাস

(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷

–সম্পাদক)

ভারতীয় সমাজের নারীর অবদান

অদিতি দত্ত বাগ

পূর্ব প্রকাশিতের পর,

১৫) শাশ্বতী অঙ্গিরাশি ঃ শাশ্বতী অঙ্গিরাশি ঋষি অঙ্গিরাশ এর কন্যা ছিলেন এবং এই ঋষিকা ঋক্‌বেদের ৮.১.৩৪ নং সূক্তোটির রচয়িতা,

১৬) রাত্রি ভরদ্বাজী ঃ রাত্রি ভরদ্বাজী ঋষি ভরদ্বাজ এর কন্যা ছিলেন ইনি ঋক্‌বেদের ১০.১২৭ নং সূক্তোটি রচনা করেন৷

১৭) সিকত নিভাবরী ঃ - সিকত নিভাবরী ঋষি নিভাবরের কন্যা ছিলেন তিনি ঋক্‌বেদের ৯.৮৬.১১-২০ নং সূক্তোটি রচনা করেন৷

১৮) সূর্য্য সাবিত্রী ঃ --- সূর্য্য সাবিত্রী সবিতার কন্যা, ইনি ঋক্‌বেদের ১০.৮৫ নং সূক্তোটির রচয়িতা৷

১৯) ঊবর্বশী ঃ ঊবর্বশী ছিলেন পুরুরবার পত্নী তিনি ঋকবেদের ১০.৯৮ নং সূক্তোটির রচয়িতা৷