আমি চাই, আমাদের যে সব ছেলেমেয়েরা বৌদ্ধিক দিক থেকে উন্নত অথবা বৌদ্ধিক স্তরে আরও উন্নতি ঘটাতে চায়, তারা মানব সমাজের বৌদ্ধিক প্রগতির জন্যে উৎসাহ দান করে চলুক৷ মানুষের বৌদ্ধিক প্রগতি শেষ পর্যন্ত মানব সমাজের সর্বতোমুখী বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে৷ আমি আশা করছি, তোমরা আনন্দমার্গের ছেলেমেয়েরা এ ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারছ তোমাদের উচিত, বৌদ্ধিক প্রগতির গুরুত্বটাকে ভালভাবে বুঝে নেওয়া৷
(‘‘ভাবজড়তা ও মনীষা’’, ‘অভিমত’, ৪থ খণ্ড)
এছাড়া রয়েছে নারী–পুরুষের পার্থক্য৷ নারীরা অনেকেই সামাজিক–রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ তোমরা জান এই মাত্র কয়েক শ’ বছর আগেও পৃথিবীর অনেক দেশে তাদের ভোটাধিকার ছিল না৷ তা কেন তারাও তো মানুষ৷ পুরুষদের মত তাদেরও সমান অধিকার আছে৷ পুনর্জাগরণ আন্দোলনের অগ্রদূতদের সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আন্দোলন শুরু করতে হবে ও নারী–পুরুষগত এই ধরণের বৈষম্যকে দূর করতে হবে৷ মেয়েরা কি গবাদি পশু না কাপড়ের পুঁটুলি যা মানুষ বিয়ের সময় দান হিসেবে দেয় তাদের কি ক্রীতদাসীর মত অন্যের কাছে বিকিয়ে দিতে হবে? যতদিন পর্যন্ত মেয়েদের সাহস ও বুদ্ধির অভাব ছিল ততদিন তারা এই সব সহ্য করেছিল৷ একবার ভাব তো জিনিসটা কতখানি অবমাননাকর তাদের এই অমর্যাদা প্রকাশ্য রাস্তায় চাবুক মারার চেয়েও অনেক বেশী বেদনাদায়ক৷ কাপড়ের পুঁটুলির মত মেয়েদের কি ধোপাবাড়ি পাঠাতে হবে? তাদের অবশ্যই দাবিয়ে রাখা চলবে না৷ সমাজে পুরুষের একাধিপত্য থাকাও উচিত নয়৷ সমাজে উভয়েরই সামবায়িক নেতৃত্ব থাকা উচিত, কেউ কারও অধীন নয়৷ তাই নারী–পুরুষের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তোলা উচিত৷ রেনেসাঁ আন্দোলনের পথিকৃৎদের অবিলম্বে এই সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে হবে৷ তা না হলে সমগ্র জনগোষ্ঠীর অর্দ্ধাংশ এই নারীরা যদি অবহেলিত হয়ে থাকে তাহলে কেমন করে মানব সমাজের সর্বাত্মক প্রগতি হবে? সুতরাং পুনর্জগরণের আন্দোলনে এগুলি দেখা একটা সামাজিক কর্ত্তব্য, একটা সামাজিক দায়িত্ব৷ রেনেসাঁ কর্মীদের এই সব ব্যবধান ও অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করতে হবে – এগুলিকে সমাজ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে৷
(‘‘জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুনর্জাগরণের প্রয়োজন’’, ‘অভিমত’, ৭ম খণ্ড)
এই সেদিন পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বত্র ও সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যে পুরুষই হচ্ছে ঈশ্বরের কৃপাধন্য – নারীরা নয়৷ তোমরা তোমাদের পরিবারেও দেখেছ ... জিনিসটা অনুভবও করেছ, অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে কোন বৈষম্যমূলক মনোভাব পোষণ করেন না৷ তাঁদের কাছে ছেলে–মেয়ে উভয়েই সমান গুরুত্ব – উভয়েই সমান স্নেহের পাত্র৷ আমি বলেছি, আমার কাছে ছেলেমেয়েরা হচ্ছে যেন আমার দুই হাত৷ দুটো ডানা না থাকলে তো কোন পাখী আর উড়তে পারে না
সেই ভ্রান্ত ধারণার দিন আজ ফুরিয়েছে৷ নারী–পুরুষ উভয়ে সমভাবেই ঈশ্বরের কৃপাধন্য৷ যে সমস্ত বুদ্ধিজীবিরা মনে করতেন যে বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে পরম পুরুষকে পাওয়া যায়, তাদের সেই ধারণা যে কেবল ত্রুটিপূর্ণ ছিল তা নয় মূর্খতাপূর্ণও ছিল৷ অনুরূপভাবে, পরম পুরুষকে যে কেবল কর্মযোগের দ্বারা পাওয়া যায়, এই ধারণাটাও ত্রুটিপূর্ণ ছিল৷ কারণ কর্মযোগেও সকলের মর্যাদা সমভাবে স্বীকৃত নয়৷ ধর কোন একটা দুর্বল ছেলে বা দুর্বল মেয়ে তারা শারীরিক অথবা মানসিকভাবে দুর্বল হলেও মুক্তি মোক্ষ লাভে তাদের সমান সহজাত অধিকার৷
এই যে মোক্ষের কথা বললুম – এর অর্থ কী? মোক্ষের অর্থ হল, পরম পুরুষের সঙ্গে একীভূত হওয়া৷ বিশ্বের প্রতিটি শিশুর বিশ্বপিতার কোলে বসার সমান অধিকার৷ এ ব্যাপারে ছেলে–মেয়ের মধ্যে কোন বৈষম্যের অবকাশ নেই৷ (‘আনন্দবচনামৃতম, দ্বাদশ খণ্ড)