নারীর মর্যাদা

নারী ও সামাজিক সুবিচার

(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷         –সম্পাদক)

অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা

এই সমাজে পুরুষেরা বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে৷ পুরুষদের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতার জন্যে পরিত্যক্তা নারীদের একাংশ পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে ক্ষাধ্য হয়৷ যখন সমাজে নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও পুরুষের সমান মর্যাদা পাবে তখন এই ধরণের বৃত্তি ক্ষন্ধ হয়ে যাবে৷ যে সব নারী ওই জঘন্য বৃত্তি পরিত্যাগ করে নিজের চরিত্র শুধরে নেবেন, সেই সব নারীকে উপযুক্ত মর্যাদা সমাজকে দিতে হবে৷ পতিতাবৃত্তি সামাজিক–র্থনৈতিক ব্যবস্থার কুফল৷

শিবজায়া পার্বতী

এবার বলতে হয় পার্বতীর কথা৷ ‘পার্বতী’ শব্দটার মানে কী? কেউ হয়তো বলবেন ‘পর্বতস্য দুহিতা’, ‘পর্বতস্য কন্যা’ ইত্যর্থে পার্বতী (ষষ্ঠী তৎপুরুষ) অর্থাৎ পাহাড়ের মেয়ে৷ এখন প্রশ্ণ হচ্ছে, পঞ্চভূতাত্মক শরীরে কোন নারী কি পাহাড়ের মেয়ে হতে পারে? কোন নদীকে বরং পাহাড়ের মেয়ে বললেও বলতে পারি৷ কোন নারীকে পাহাড়ের মেয়ে বলতে পারি কি?

প্রাগৈতিহাসিক সমাজে নারীর মর্যাদা

প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ–সমাজে নারীর স্থান ছিল অন্যান্য যে কোন জীবের স্বাধীন নারীর মতই৷ পুরুষেরা যেমন প্রকৃতির কোলে নেচে গেয়ে হেসে খেলে জীবন কাটিয়ে দিত নারীরাও তা–ই করত৷ এই অবস্থা চলেছিল যখন মানুষ সমাজ বলতে কোন কিছুই গড়েনি তখন তো বটেই, তার পরেও মাতৃশাসনের যুগেও৷ কিন্তু যখনই পিতৃশাসিত সমাজ ব্যবস্থা এল তখনই নারীর অধিকার ক্রমশঃ সঙ্কুচিত করা হতে থাকল৷ গোড়ার দিকে ঠিক করা হ’ল মেয়েরা ততটুকু স্বাধীনতা ভোগ করবে যতটুকু বিবাহের পরে তার শ্বশুরকুল তাকে ভোগ করতে দেবে বা বিবাহের পূর্বে পিতৃকুল

পত্নী/জায়া/ভার্যা/কলত্র

(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷                 –সম্পাদক)

আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে নারীর স্থান

সম্পতি আমাকে একটি দুরূহ সমস্যার সম্মুখীন হ’তে হয়েছিল৷ সমস্যাটা বা প্রশ্ণটা হয়তো কিছুটা দুরূহ কিন্তু উত্তরটা খুবই সরল৷ প্রশ্ণ ছিল, মহিলারা মুক্তি–মোক্ষের অধিকারী কি না৷

কিছুদিন আগে তোমাদের বলেছিলুম যে তন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘‘দেহভৃৎ মুক্তো ভবতি নাত্র সংশয়ঃ’’৷ আত্মজ্ঞান লাভের ন্যূনতম যোগ্যতা হ’ল এই যে সাধককে মানুষের শরীর পেতে হবে৷ এটাই হ’ল তার ন্যূনতমযোগ্যতা৷ কৈ, এখানে তো উল্লেখ করা হয়নি যে সে সাধক নারী বা পুরুষ হবে৷ এর থেকে এটাই পরিষ্কার যে নারী–পুরুষ উভয়েই মুক্তি–মোক্ষ লাভের সমান অধিকারী৷   

নারীনির্যাতন ও কিছু কথা

শ্রীপার্থ

দিকে দিকে নারী নির্যাতন, নারীর শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধে সর্বত্রই প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবী সকলেই এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সরব৷ মৌন মিছিল, মোমবাতি মিছিল থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার সবই হচ্ছে৷ এসব পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদে পাশবিকতার বিরুদ্ধে জনসাধারণের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ নিঃসন্দেহে একটা ভালো দিক৷ মানূুষের এই শুভ উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি কেউই কিন্তু এই ধরণের জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে যে মূল কারণগুলি নিহিত আছে সেগুলির ব্যাপারে বিশেষ আলোকপাত করতে চাইছেন না বা করছেন না৷ আর এখানেই রয়ে যাচ্ছে ত্রুটি৷ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর অপরাধীর

নারীর প্রতি অবিচার

প্রাক্–মহাভারতীয় যুগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া তেমন কোন বোঝা ছিল না৷ তাই মেয়ের জন্যে আদর একটুও টোল খেত না৷ সেকালে গোরুর দুধ দোয়া মেয়েদের কাজ ছিল৷ ওই কাজকে পবিত্র কাজ বলে মনে করা হ’ত৷ তাই দুহ্+ তৃচ্+ টা করে ‘দুহিতা’ শব্দটি মেয়েদের জন্যে ব্যবহার করা হ’ত৷ দুহিতা> জুহিআ> ঝি> ঝি – ভাশুরঝি, বোনঝি, দেওরঝি, ভাইঝি ইত্যাদি৷ ওড়িয়ায় ‘ঝি’ শব্দ এখনও চলছে৷ ‘দুহিতারুকী’ শব্দসঞ্জাত ‘ঝিউড়ী’ শব্দটিও প্রাচীন বাংলায় ভালভাবে চলত৷ গ্রাম–বাঙলার বর্ণনার দিতে গিয়ে মধ্য বাঙলার বর্ণনায় বলা হয়েছে – ‘‘কত বহু ঝিউড়ী সারি সারি জলে ভেসে যায়’’৷ মহাভারতীয় যুগে মেয়ের কদর কমে এল বিয়েতেও খরচ হতে শুরু হ’ল৷ তবে লোকে ‘দুহিতা’ শব্দ

বলিষ্ঠ ত্রুটিমুক্ত সমাজ চাই

নারী কল্যাণ ঃ সমাজে নারীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, একান্তই দুর্বিসহ৷ সংঘের যারা ‘তাত্ত্বিক’, তাদের কর্ত্তব্য হ’ল অনগ্রসর মহিলাদের মধ্যে কল্যাণমূলক কাজ করা, তাদের কুসংস্কার–নিরক্ষর দূর করা, ধর্মচক্রের বন্দোবস্ত করা ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা৷ দেখা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর নারীরা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন৷ তাই তাঁরা যাতে স্বাধীনভাবে জীবিকার্জন করতে পারেন সে ধরণের সুযোগ তৈরী করতে হবে৷

নারী স্বাধীনতা

রাঢ়ে যখন পৌরাণিক ধর্ম এল, সে একা আসেনি৷ সঙ্গে নিয়ে এল অজস্র সামাজিক ক্ষত, অজস্র সামাজিক আধি–ব্যাধি৷ প্রাচীনকাল থেকে অর্থাৎ এদেশে আর্যাগমনের সময় থেকে বর্ণ–বিভাজন ব্যবস্থা ভারতের অন্যান্য জায়গার মত রাঢ়েও এসেছিল – একথা আগেই বলেছি৷ ক