ভারতবর্ষকে বলা হয় বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ৷ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যষ্টি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মাচরণ৷ এইগুলি প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ কিন্তু মোদির ভারতে এই মৌলিক অধিকারগুলো পদে পদে খর্ব করা হচ্ছে৷ এই নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদি সরকার৷
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে ভারতকে স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ সুইডিশ ইনস্টিটিউট ভি-ডেম (ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি)-এর সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভারতে নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও ভারত এখন স্বৈরাতান্ত্রিক পর্যায়ে রয়েছে৷ দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলেও ব্যষ্টি স্বাধীনতা, আইনের শাসন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ এই সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে উদার নৈতিক গণতন্ত্রের সূচকে ১৭৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০০ নম্বরে৷ ভারত এত পিছিয়ে থাকার কারণ বলা হয়েছে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা, ব্যষ্টিগত স্বাধীনতা ও সংখ্যা লঘুদের অধিকার ক্ষুণ্ণ্ হচ্ছে৷ নির্বাচনী গণতন্ত্রে ভারত আরও কয়েক ধাপ নীচে নেমে ১০৫ নম্বর স্থানে হয়েছে৷ এক্ষেত্রে সূচকের মান ধরা হয়েছে---মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নির্বাচনে স্বচ্ছতা, সংঘটনের অধিকার বিষয়গুলি, এই সব বিষয়ে ভারত ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে৷
ভারতে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ্ হওয়ার আরও যে সব কারণ রয়েছে সেগুলি হল---মত প্রকাশ, সংবাদ মাধ্যম, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিরপেক্ষতা অভাবে ভারত পিছিয়ে পড়েছে৷ ভারতীয় সমাজে যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ক্ষমতা ও সম্পদের বন্টনেও বৈষম্য রয়েছে৷ ওই সমীক্ষার সূচকে ভারতের স্থান ১৩৪তম স্থানে৷ সমীক্ষায় পূর্ব ইয়ূরোপের কোন কোন দেশেও স্বৈরাচারী প্রবণতা বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে৷
কয়েকদিন আগে বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করায় গুজরাট সরকারের কঠোর সমালোচনা করে শীর্ষ আদালত৷ কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপ গাড়ির একটি পোষ্টের বিরুদ্ধে এফ.আই.আর দায়ের করে গুজরাত পুলিশ৷ শীর্ষ আদালতের দারস্থ হন ইমরান৷ শীর্ষ আদালত গুজরাত পুলিশকে তীব্র সমালোচনা করে এফ আই আর খারিজ করে দেয়৷ শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় বাক স্বাধীনতা সুস্থ গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ ইচ্ছে মত কারো কন্ঠ রোধ করা যায় না৷ মতপ্রকাশের অধিকার সভ্য ও সুস্থ সমাজের অঙ্গ--- এছাড়া নিশ্চিন্ত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন সম্ভব নয়৷
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি এ.এস. ওকা ও উজ্জ্বল ভুয়ানের বেঞ্চ জানায়--- স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরের বেশী সময় পার হয়ে গেল এখন আমরা আমাদের মৌলিক নীতির প্রতি দুর্বল হতে পারি না৷ সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার ভার আদালত ও পুলিশের৷ এই অধিকারের মধ্যে বাক্স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ বিভিন্ন কথা বা লেখা আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য৷ মোদি জমানায় বাকস্বাধীনতায় লাগাম বিরোধী কন্ঠরোধ নিয়ে শুধু দেশের মধ্যে নয়, বিদেশেও সমালোচিত হচ্ছে৷