ভারত একটি বহুভাষাভাষীর বিরাট দেশ৷ এখানকার গণতন্ত্র আজ বিভিন্ন দলের নেতানেত্রীদের শাসনাধীনে চলছে ৷ এই গণতন্ত্রের বয়স হলো ৭১ বছর৷ আগামী ২০১৯শে লোকসভার নির্বাচন হবে ১৯ এর প্রথমদিকে৷ আমাদের রাজ্যের লোকসভার আসন ৪২ টি ৷ এই ৪২টি আসনের নির্বাচন আছে৷ এদিকে এই আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে যে কী করবে তার কোন ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার কথা না বলে শুধু দু’দলের মধ্যে তর্জার লড়াই চলছে৷ এদিকে অন্যান্য বিরোধী দল তাদের যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে কর্মসূচী গ্রহণ করবে তার কোন চিহ্ণ দেখা যাচ্ছে না৷ কংগ্রেস শাসনে এলে কৃষিঋণ নাকি ১০ দিনে মকুব করে দেবে৷ সরকারের পক্ষ থেকে শাসকদল বলছে যে কংগ্রেস সারা দেশে বিচ্ছিন্নবাদী, হিংস্রাশ্রয়ী দল যেমন মাওবাদীদের প্রশ্রয় দিয়ে দেশের চরম ক্ষতি করে চলেছে৷ অন্য যে সব দল আছে তারা কেন্দ্রে পরিবর্ত্তন হলে তারা হয়তো মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী করবে৷
আজ আমরা দেশবাসীতো অনেক বছর ধরে দেখে আসছি অতীতের কংগ্রেসী শাসন পরে বিজেপি শাসন৷ সেখানে একটি জিনিস দেখেছি তা হলো গণতন্ত্রের নামে সেই ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সাধারণ নাগরিক যারা মধ্যবিত্ত,নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র ব্যষ্টিদের উপর নানা কর চাপিয়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার দর না নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ এর রক্ত মোক্ষণ করে ধনীদের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি করে শাসন চালাত৷ সব দলই মূলতঃ ধনীর পৃষ্ঠ পোষক৷ কারণ সেই একটা জিনিস দেখেছি তা হলো গণতন্ত্রের নামে সেই ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সাধারণ নাগরিক যারা মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র ব্যষ্টিদের উপর নানা কর চাপিয়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার দর না নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ-এর রক্ত মোক্ষণ করার নানান কৌশল৷
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী প্রধানমন্ত্রীত্ব করে গেছেন৷ এতে সত্যসত্যই লাভ হয়েছে কোন চাষীর? সেই চাষী যারা ধনী তাদেরই লাভ হয়েছে৷ কিন্তু যে সব হতভাগ্য প্রান্তিক চাষী ঋণভারে জর্জরিত তারা প্রাণ হারিয়েছেন৷ এতো বছর দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু কৃষিপ্রধান ভারতের বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষাবাদের কোন সুষ্টু সুরাহা সরকার করেছে কী? ভূমি খণ্ডীকরণ নীতির কোন সংস্কার করেছে কি? ভূমিনীতির কোন পরিবর্ত্তন হয়েছে কি? চাষীদের চাষে উপযুক্ত জল সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে কি? নদনদীগুলির বড়ো বড়ো পুষ্করিনীর সংস্কার হয়েছে কি ? হয়নি৷ কিন্তু কোটি কোটি টাকা নানা খাতে বরাদ্দ হয়েছে তার যৎসামান্য কাজে লেগেছে বাকিটা কোথায় হারিয়ে গেছে৷ চরম বেকার সমস্যায় দেশের শাসরোধ হচ্ছে৷ ডিভিসির ব্যারেজগুলিতে পাকে-পানায় অকেজো৷ তাতে জল ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে৷ কৃত্রিম বন্যায় এ রাজ্যের অনেক জেলা প্রতিবছর ভেসে যায়৷ গঙ্গা নদী তো জলধারণের ক্ষমতা হারিয়ে বসেছে৷ যার দরুণ নদীর তীরের বাড়িঘর নদী গ্রাস করছে৷ এই তো দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা৷ মোদ্দা কথা হ’ল কংগ্রেস মৃতপ্রায় ব্যর্থ একটি দল৷ ব্যর্থতাই বিজেপি ধনীর (দেশীয়) দল আজ শাসনে৷ মোদীজী যেগুলিতে হাত দিয়েছেন সবগুলি ব্যর্থ৷ বিমুদ্রাকরণ অর্থাৎ নোট বাতিলে দেশ পঙ্গু হয়েছে৷ নতুন টাকার নোটগুলির আকার প্রকার যেন ছোট ছেলেমেয়েদের খেলার নোট৷ বাজারে খুচরো যেমন এক টাকা, দু’টাকা সরকার অচল ঘোষণা করেননি তবু লোকে বিশেষ করে কারবারিরা অচল করে দিয়েছে৷ তাতে সাধারণ মানুষেরই দুর্গতি বেড়েছে৷ সে ব্যাপারে কেন্দ্র রাজ্য প্রশাসনের যেন কোনও নজরই নেই৷ তারা শুধু গদী লাভে ভোটে জেতাতেই ব্যস্ত৷ আইন-শৃঙ্কলা বলতে কিছু নেই৷ এ কেমন যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা৷ এ যেন জমিদার রক্ষায় জমিদারদের বংশধররা উঠে পড়ে লেগে গেছে৷ দেশের আর্থিক উন্নতি ও সামাজিক কল্যাণ একেবারে পঙ্গু৷ দুর্নীতির উন্নতির শেষ চূড়ায় এসে পৌঁছেছে দেশ৷ শাসক দল যারা শাসনে যায় তারাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে৷ আত্বজ গণতন্ত্রে তোলাবাজিটাই যেন গণতান্ত্রিক অধিকার৷ গণতন্ত্রে জোর যার মুলুক তার নীতিটাই হয়েছে মূল লক্ষ্য৷ এতদিন বলা হতো গণতন্ত্র মন্দের ভালো৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা হ’ল সুনাগরিক না হলে গণতন্ত্র বাঁচে? রাজনীতিতে আজ যারা এসেছে তাদের অধিকাংশই ধান্দাবাজ, দলছুট ও দুর্নীতিগ্রস্ত লোক৷ ভারতে এমন কোনও রাজ্য নেই যে রাজ্যে শাসকদলগুলির বিখ্যাত দুর্নীতিগ্রস্ত নয়৷ সেই দক্ষিণ ভারত থেকে উত্তর ভারত আর পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিম ভারত পর্যন্ত৷ কিন্তু যারা শাস্তি পেয়েছে তারাই দেখা যাচ্ছে আবার মাথাচারা দিচ্ছে ও তাদের সন্তান-সন্ততিকে রাজনৈতিক দলের যে কোম্পানী তার প্রধান করে নির্বাচনের লড়াইয়ে নামাচ্ছে দলগুলি প্রচুর টাকা নিয়ে প্রার্থী দিচ্ছে৷ এটা দারুণ টাকার খেলা৷ যে খেলাতে কোটি কোটি হতভাগ্য ভোটার এক-একটি মাত্র বোটের অধিকারী৷ ভাগ্যবানরা বোট দেবার সুযোগ পায় আর হতভাগ্যদের ভোট অন্যেরা দিয়ে দেয়৷ এটা এদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে করুণ দুরবস্থা৷ এটার আর সংশোধন হ’ল না৷
জনগণ আশা করে দলগুলি সৎ, নীতিবাদী প্রার্থী দিক৷ যারা নির্বাচিত হবেন তারা যেন বৃহত্তর জনগণের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে যত্নবান হন৷ জনগণের আশা এন. আর. সি-র মত কালাকানুনকে হাতিয়ার করে বাঙালীদের যারা ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব থেকে বাস্তুচূ্যত করছে৷ নতুন সরকার যেন মৃত্যুপথে তাদের যেন ঠেলে না দেয়৷ দেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না ঘটান৷ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে ব্লকভিত্তিক উৎপাদন ঘটিয়ে সমবায় পদ্ধতিকে বাস্তবায়িত করে বেকার সমস্যা দূরীকরণে এগিয়ে আসেন৷ টাকার মূল্যমানকে নিয়ন্ত্রিত রাখার ব্যবস্থা করেন৷ সু-শিক্ষার ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশে সৎ নাগরিক সৃষ্টির দিকে দৃষ্টিদান করেন৷ ভারতের প্রকৃত অধ্যাত্মবাদকে সঠিক মূল্য দেন৷ দলীয় নোংরা রাজনীতি থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার পথে অগ্রসর হন৷ বিরোধী শূন্য মানসিকতা শাসক দলকে অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে৷ গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মত জনকল্যাণমুখী করাটাই শাসক দলের ও বিরোধী দলের পবিত্র কর্তব্য ও লক্ষ্য৷ ভারতের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে নির্বাচনে টাকার খেলাটা অত্যন্ত নিন্দনীয় জনগণকে মতামত দেবার সুযোগ দেওটাই হ’ল অতীব কাম্য৷
- Log in to post comments