অগ্ণিকন্যা

লেখক
পথিক বর

সন্ধ্যায় পড়তে বসেছে ভাইবোনেরা৷ দাদা মধু ছোট বোন রাণীকে বলল---শুনেছিস, শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার পড়েছে৷ ডাকাত ধরিয়ে দিতে পারলে দশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে৷

দুদিন আগেই রেল কর্মীদের টাকা ঘোড়ার গাড়ী করে নিয়ে যাচ্ছিল সিপাহীরা৷ চার যুবক এসে ওই সিপাহীগুলোকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে টাকা ও গাড়ী নিয়ে চলে যায়৷ বন্দুকধারী সিপাহীকে এইভাবে বিনা অস্ত্রে ঘায়েল করে চার যুবক টাকা নিয়ে চলে যাওয়ায় শহরে হৈ চৈ পড়ে যায়৷ সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় ডাকাত ধরিয়ে দিলে দশ হাজার টাকা পুরস্কার৷ সেই কথাই বলছিল দাদা মধু তার ছোট বোন রাণীকে৷ মধুর ইচ্ছা ডাকাত ধরিয়ে দশ হাজার টাকা পাওয়া৷ সে রাণীকে বলে---দশ হাজার টাকা কত জানিস? ডাকাত ধরতে পারলে তোকে একটা লাল ফিতে কিনে দেব৷ ছোট বোনের মুখ ভার হয়ে যায়৷ গম্ভীর হয়ে দাদাকে বলে--- দরকার  নেই তোমার লাল ফিতের৷ ওরা ক্ষুদিরামের দলের লোক৷ দেশের ভালর জন্যই ওরা কাজ করছে৷ ওদের সঙ্গে দেখা হলে আমি ওদের সাবধান করে দেবো৷

রাণীকে তার স্কুলের শিক্ষিকা ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাঈ বইটি পড়তে দিয়েছিল৷ এই বই পড়ে সে দেশপ্রেমের প্রেরণা পায়৷ এরই মধ্যে পাড়া সম্পর্কে এক দাদা রাণীর বাড়ীতে এসে বলে---আমার কিছু গোপন বই লুকিয়ে রাখতে হবে৷ তুমি পারবে? রাণী বলে---নিশ্চয়ই পারবো৷

একদিন কি মনে করে রাণী বইয়ের প্যাকেটটি খুলে ফেলে৷ দেখে প্যাকেটে চারটি বই---ক্ষুদিরাম, বাঘাযতীন, কানাইলাল ও দেশের কথা৷ বইগুলি দেখে আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷ প্রচণ্ড আগ্রহে বইগুলি পড়ে শেষ করে৷ স্কুলের মেধাবী ছাত্রী ১৯২৯ সালে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়ে আই.এ. পাশ করে৷ ক্রমে বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন৷

১৯৩২ সাল ২৪শে সেপ্ঢেম্বর৷ সারা চট্টগ্রাম শহর জুড়ে চলছে ব্রিটিশ পুলিশের নির্মম অত্যাচার৷ ইংরেজ নরনারীরাও বাঙালীদের সঙ্গে অপমানকর ব্যবহার করত৷ তাদের এই আচরণে রাণী ছিল প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ৷ যখন ঘরে ঘরে আতঙ্ক ও অনাহার নিয়ে দিন কাটাচ্ছে দেশের মানুষ তখন মধ্যরাত পর্যন্ত শহরের ইয়ূরোপীয়ান ক্লাবে ইংরেজ নরনারীদের চলত হৈ-হুল্লোর ও মদ্যপান৷ রাণী মনে মনে ভাবল এর জবাব দিতেই হবে৷ ২৪শে সেপ্ঢেম্বর মধ্যরাতে সামরিক পোষাকে সজ্জিত হয়ে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ওই ক্লাব আক্রমণ করে রাণী৷ মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে বোমা, গুলির আবাজ  ভেসে গেল অনেক দূর পর্যন্ত৷ বেশ কয়েকজন ইংরেজ নরনারী হত ও আহত হয়৷ রাণীও পটাসিয়াম সায়নাইড খেয়ে আত্মহত্যা করে৷ এই রাণীই হলেন চট্টগ্রামের অগ্ণিকন্যা  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার৷