ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এন.আর.সির সংকীর্ণতা রুখে বিশ্বৈকতার জাগরণে এগিয়ে চলো

লেখক
প্রভাত খাঁ

আমাদের অতিপ্রিয় পৃথিবীর অপর নামই হলো বসুন্ধরা৷ তিনি সবদিক থেকে সম্পদ ও ঐশ্বর্য্যশালিনী৷ মহান স্রষ্টার এই যে সৃষ্ট বিশ্ব তা তিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর সৃষ্টিকে সব দিক থেকে পরিপূর্ণ করে তুলতেই৷ আর তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্টতম জীব হলো মানুষ৷ সেই মানুষ এই বসুন্ধরাকে একদিকে যেমন ভোগ করবে তার পাশাপাশি তাকে রক্ষা করবে যাতে অন্যান্য তাঁর সৃষ্ট জীবজন্তু গাছপালাও এই পৃথিবীর বুকে সুরক্ষিত হয়ে সকলকে সেবা দিয়ে যেতে পারে৷

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মানুষই তাঁর সৃষ্টিকে এমনভাবে ধবংস করে চলেছে যার জন্য বর্তমানে চরমভাবে সারা পৃথিবী দূষিত হয়ে পড়েছে৷ আর মানুষের লোভের শিকার হয়ে এই সুন্দর পৃথিবীর বহু গাছপালা জীবজন্তু ধবংস হয়ে গেছে ও যাচ্ছে৷

এছাড়া আজকে সুন্দরী বসুন্ধরা কিছু স্বার্র্থন্বেষী নেতা ও নেত্রীদের দলবাজি ও সংকীর্ণতার জন্য চরম ধবংসের পথে এগুচ্ছে৷ মাটির জীবজন্তু, গাছপালা ও মানুষকে ধবংস করে তারা ছলবল কৌশলে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতাকেই হাতিয়ার করে বংশপরম্পরায় দেশে শাসন ক্ষমতা কায়েম করে জঘন্য স্বৈরাচারিতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে৷ আর সেই ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদকেই আশ্রয় করে মেকী গণতন্ত্রের নামে চরম আর্থিক ও সামাজিক শোষণ করে কোটি কোটি মানুষকে রক্তশূন্য করে ছাড়ছে৷ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পাকিস্তান ও ভারত যুক্তরাষ্ট্র৷ দুটো দেশই সৃষ্টি হয়েছে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারাই৷ আর আজও তারাই দাদাগিরি করছে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে৷

৭২ বছর ধরে এই এলাকায় অর্থাৎ ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক দলের ব-কলমে দেশীয় পুঁজিপতিরা দেশ শাসন করছে৷ আজ ভারতের মতো বিরাট দেশে কয়েকটি ধনী পরিবারই দেশের প্রায় সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে৷ তাদেরই সেবাদাস হয়ে দলগুলো দেশে শাসন ক্ষমতায় বসে আছে৷ অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে ভারতের কেন্দ্র সরকার হঠাৎ এন.আর.সি  জাতীয় নাগরিকপঞ্জী করতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ মনে হয়, তারাই যেন ভারতের মতো দেশে বিশেষ এক সম্প্রদায়ের দেশ গড়তে আদা জল খেয়ে এমনভাবে উঠে পড়ে লেগেছে যে  গণতন্ত্র বাঁচে না৷ গণ অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা ছাড়া গণতন্ত্র যে বাঁচে না সেটা সরকারের মাথায় আসে না৷ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অর্থ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয় মুষ্টিমেয় ধনীর হাতে৷ অর্থের বিনিময়ে রাজনৈতিক দলগুলো এদেরই অঙ্গুলীহেলনে চলে৷ যে গণতন্ত্রে জনগণের নির্বাচিত সরকার পুঁজিবাদের স্বার্থ রক্ষা করে সেই গণতন্ত্রের দরকারটা কিসের!

আজ সাধারণ গরীব মানুষ চরমভাবে শোষিত হচ্ছে৷ তাদের বিকাশের কোন চিন্তা না করে শাসকরা সংবিধানকেই অস্বীকার করে চলেছে গায়ের জোরে৷ ভারতের সংবিধান ধর্ম নিরপেক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যদিও সেটা ধর্মমত নিরপেক্ষ হবে৷

কিন্তু বর্ত্তমানে সারা পৃথিবী হয়ে গেছে এক বৃহৎ পরিবারের মতো৷ ভৌগোলিক আবিষ্কার ও শিল্প বিপ্লবের দরুন এক বিশ্বরাষ্ট্র-এর জন্মের সূচনা হয়েছে ইউ এন ও এর প্রতিষ্ঠার পর৷

আজ প্রত্যেক মানুষ হলো পৃথিবীর নাগরিক ৷ প্রত্যেক মানুষকে নাগরিকত্ব দিতে হবে যে যেখানে স্থায়ীভাবে বাস করছে৷  এই পৃথিবীর বুকে ইউ.এন ও এর মতে কেউই যেন নাগরিকত্ত্বহীন না হয়ে থাকে৷ ভারতবর্ষ সারা পৃথিবীর আদর্শ স্থানীয় ছিল একদিন৷ কারণ বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাম ঠাকুর বলেছেন---‘‘দেবে আর নেবে মেলাবে মিলিবে এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে৷’’

আজ ভারতের বুকে শাসকগণ ভুলে গেছে নজরুলের কথা৷

‘‘হিন্দু না ওরা

মুসলীম ঐ জিঙ্গাসে কোনজন?

কান্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ,

সন্তানমোর মার৷’’

দেশ শাসনে দলগুলি ব্যর্থ হয়ে এক জঘন্য কাজে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার! যে দল শাসনে আসে সেই ভারতের সংবিধান সংশোধন করে সংবিধানকেই দুর্বল করে দিয়েছে৷ ১৬৭৮ সালে ইরাবতী নদীর উপতক্যা থেকে ভাগ্যান্বষণে বার্মার অধিবাসী অহমরা ভারতবর্ষে আসে ব্রহ্মপুত্র উপতক্যায়৷ এরাই কালক্রমে এখানে বসবাস করে স্থায়ীভাবে৷ তাদের সংখ্যা বেশী ছিলনা ৷ ধীরে ধীরে এই বৃষ্টি বহুল এলাকায় রাজত্ব করতে থাকে৷ এদিকে ভিনদেশী ইংরেজ বণিকরা এদেশে বাণিজ্য করতে এসে দেশীয় কিছু বিশ্বাস ঘাতকদের সহায়তায় বাংলাদেশে রাজত্ব গড়ে৷ যাদের আজও মীরজাফর বলা হয়৷ এই বাংলা ভূখণ্ডের বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা বরাক উপত্যকা ও তৎকালীন রংপুর জেলার একাংশ ইংরেজ অসমের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে অসম রাজ্য গড়ে তোলে৷ সেটাকে ইংরেজ শাসনে আনে৷ এরা সংখ্যায় নগণ্য ছিল৷ এদের মাথায় তুলতে ভারতের স্বাধীন সরকার বাঙালী বিতাড়ন ফন্দী আটে৷ তাই বঙ্গাল খেদা আন্দোলনে মদত দিয়ে এসেছে নামে প্রথম থেকেই দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার অসমে ৷ তাই বর্ত্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার এন.আর.সি করে বাঙ্গালী খেদা আন্দোলনে মত্ত হয়েছে৷ আর বাঙালী সমাজ হলো হিন্দু মুসলমানের মিলিত সমাজ৷ দেশভাগের পর উদ্বাস্তু হয়ে যায় প্রায় দু কোটি হিন্দু ও মুসলমান, কারণ পূর্ব বাংলার বেশ কিছু এলাকা অসমে চলে যায়৷ এদের সংখ্যা অসমীয়াদের থেকে বেশী ছিল৷ তাই ঐ বিদেশীর নামে বাঙালী হল মুখ্য লক্ষ্য৷ (ওদিকে বার্মার বর্তমান মায়ানমার এর রোহিঙ্গা যারা স্থায়ী বাসিন্দা বার্মার তাদেরও বিতাড়ন করে ও দেশের সরকার৷ তারাও আজ ভাসমান হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছে৷ রোহিঙ্গারা মূলতঃ বাঙালী ধর্মান্তরিত মুসলমান ও বৌদ্ধ৷ আজ মানবতাই অস্বীকৃত৷ সেই বিদেশী অহমদের জন্য এদেশের স্থায়ী বাসিন্দাদের তাড়াবার ফন্দি৷

মোদ্দাকথা বাঙালী জনগোষ্ঠীই হলো অসমের মাটির সন্তান৷ তাদের সংখ্যালঘু করতেই নানাভাবে বিতাড়িত করার কৌশল নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷

১৯১২ সালে ইংরেজ বাংলার এলাকাকে অসমের সঙ্গে জুড়ে দেয়৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে হিন্দু ও অমুসলমানদের নির্মমভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় এক বস্ত্রে উদ্বাস্তু করে তাদের জমিজমা কেড়ে নিয়ে৷ তারা আসে ভারতে নিঃস্ব হয়ে৷ তারা বৈধ কাগজপত্র পাবে কোথায়? যা তারা দেখাবে এদেশের সরকারকে৷

গণতন্ত্রে কবে কোথায় কোন সরকার ডিটেনশন ক্যাম্প করে নাগরিকদের আটক করে রেখেছে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে? এই সরকার গণতন্ত্র বিরোধী কাজ করছে৷ ডাউটফুল বোটার আবার কী? যারা এসব করছে তারাতো সংবিধান বিরোধী কাজ করছে৷ মানুষকে বেকার রেখে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ না করে, ধনীদের তোষণ করে এরাতো দেশটাকে একেবারে শ্মশানে পরিণত করে চলেছে ৷ তাই চিন্তাশীল সচেতন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে তীব্র প্রতিবাদ করতে হবে৷

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা চলে, কোন সংকীর্ণ সম্প্রদায়ের দেশ এটা নয়৷ তাই নব্য মানবতার লক্ষ্যে সারা ভারতকে এগুতে হবে ঐক্য বদ্ধভাবে৷ প্রত্যেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকে নজর দিয়ে ব্লকভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ণের পরিকল্পনা নেওয়া হোক৷

দীর্ঘ ৭২ বছরে সিংহভাগ মানুষকে চরম দারিদ্র্যসীমার নীচে রেখে শাসকদল এন.আর.সি-এর নামে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশটার সর্বনাশ করতে এগুচ্ছে নিজেদের চরম ব্যর্থতাকে ঢাকতে৷ তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণ এর তীব্র প্রতিবাদে মুখর হোক৷

ভারতের প্রায় ৪৪টি সমাজকে রাজনৈতিক দলগুলো ধবংস করে নোংরা দলবাজিতে মেতেছে ৷ তাই প্রতিটি সমাজকে স্বনির্ভরশীল করতে সচেতন নাগরিকগণ কাজ করে যান৷ দেশ বর্তমানে চরম দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে৷ আজ সৎ ও নীতিবাদী জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে দেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসুক ৷

আজ বাঙালী সমাজ বাঁচলে ভারত বাঁচবে  আর সারা বসুন্ধরা বাঁচবে৷ কারণ বাঙালী জনগোষ্ঠীর শ্রেষ্টতম দায় হলো---মিলনের মহামন্ত্রে মানবে দীক্ষিত করা৷ এটা রূঢ় বাস্তব কারণ বঙ্গ জননীই ভারতকে যুগে যুগে বিশ্ববরেণ্য প্রতিভাবান সন্তান দিয়ে গেছেন ও দিচ্ছেন৷ তাই বাঙালী সমাজের দায়িত্ব হলো আজ ভারত তথা বিশ্বকে সকল সংকীর্ণতামুক্ত করে বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুদ্ধ করে এক নোতুন পৃথিবী গড়ার কাজকে প্রশস্ত করা, আর সংকীর্ণ জঘন্য এন.আর.সিকে রুখে দেওয়া৷ এন আর সি-র নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষছড়ানো অবিলম্বে বন্ধ হোক৷ ভারতবাসীর শুভকর্ম হোক ভারতকে কুসংস্কার মুক্ত করে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণে উপযুক্ত করে তোলা৷

এটাই সকল অমৃতের সন্তানের শুভকর্ম ও দায়৷