মহাকালের পরিমাপক স্কেলে পঞ্চাশ বছর খুব দীর্ঘ সময় নয়। অথচ বিগত পঞ্চাশ বছরে প্রকৃতি স্বাভাবিক সুস্থতা থেকে আজ অস্বাভাবিক সংকটে । কথায় বলে, বেহিসেবী জীবন, শেষ করে সাত রাজার ধন। ছোট বেলায় অর্থাৎ সাতের দশকে খাল বিল নদী নালা পুকুর ভর্তি জলে টইটম্বুর হয়ে থাকত। গ্রামগঞ্জের যে কোনো পুকুরে তখন ডুব সাঁতার জল।
ভূগোলে তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল বললেও সমুদ্রের এক আঁজলা জলও মানুষ পান করতে পারে না। নদী নালা খাল বিল পুকুরের জলও অপেয়। মানুষের পেয় জল বলতে পৃথিবীর কোখে অতি যত্নে লুকিয়ে রাখা একমাত্র ভূগর্ভস্থ জল।
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার হাত ধরে মানব সভ্যতার বিকাশ শুরু হলে প্রথমেই ভূগর্ভস্থ জলে কোপ পড়ে। কৃষিক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থায়, নতুন নতুন শিল্প কারখানায়, নগর সভ্যতায় ও গৃহস্থালীর দৈনন্দিন প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার ব্যপক ভাবে বৃদ্ধি পায়।
১৯০০ সালে বছর প্রতি ৬০০ ঘনকিমি জল তোলা হতো। আজ বৃদ্ধি পেয়ে সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮৮৫ ঘনকিমি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিগত পঞ্চাশ বছরে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ১০ মিটারের বেশি নেমে গেছে।
আজ গ্রামগঞ্জের কোনো পুকুরে একফোঁটা জল নাই। পঞ্চাশ বছর আগে যে পুকুরে ডুব সাঁতার জল ছিল, আজ সেই পুকুরে গোরু ছাগল চরে। কেবল পুকুরে জল নাই এমন নয়। বহু নলকূপেও জল নাই। মানুষ গভীর সংকটে। জলের জন্য মানুষ দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সামর্থবান মানুষেরা সাব মার্সিবল বসাচ্ছে। এ অনেকটা বুক পকেটে টাকা হাতড়ানোর মতো।
কেন হলো এমন অবস্থা? আমরা ভূগর্ভস্থ জলের ৮৫.৩ শতাংশ সেচের কাজে ব্যবহার করেছি। শিল্পে ভূপৃষ্ঠের জল ব্যবহার করা যেত। আমরা করিনি।একমাত্র পেয় জল, ভূগর্ভস্থ জলকেই ব্যবহার করেছি।
দৈনন্দিন জীবনে স্নান করতে, কাপড় কাচতে, বাসন মাজতে, বাথরুমে সেই ভূগর্ভস্থ জলকেই ব্যবহার করে চলেছি। জল ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ে কেউ কি কোনো দিন ভেবেছি? বাথরুমে প্রতিদিন কত জল খরচ করি, কেউ হিসেব রেখেছি? পরিণাম আজ কি ভয়ঙ্কর! ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে গেছে। খাল বিল নদী নালা পুকুর শুকিয়ে কাঠ। চারিদিক মরুভূমির মতো ধূধূ করছে। ভূপৃষ্ঠ অল্পতেই উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। তীব্র তাপদাহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এদিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন, উন্নয়নের নামে অরণ্য ধ্বংস। কয়েক দশক ধরে বৃষ্টিপাত কমতে কমতে আজ আর নেই বললেই চলে। গত আট মাস দুএক ছিটে ফোঁটা ছাড়া প্রায় বৃষ্টি নাই। ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জ বা রিফিলিং হবে কোথা থেকে? জীবকূলের অস্তিত্বের জন্যই ভূগর্ভস্থ জলস্তর নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রতি ফোঁটা পেয় জল হিসেব করে ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব হলে আজ থেকেই। বিকল্প কোনো পথ আর খোলা নাই। আমাদের সরকার ইডি, সিবিআই, কারাগার, আইন আদালত নিয়ে ব্যস্ত। প্রকৃতি নিয়ে ভাববার অত অবকাশ কোথায়?
- Log in to post comments