অখণ্ডতায় জাগো

লেখক
জিজ্ঞাসু

এই আপেক্ষিক জগতে  মানুষ  অখণ্ড মানুষ হবার তাগিদে  পথ চলতে শুরু করেছে৷  হাজার হাজার বছর  কত সভ্যতা এল ও কত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলল,  ভয় অজ্ঞতা, কত যুদ্ধ কত হিংস্রতা  কত লোভ লালসা এল গেল আজকের বিজ্ঞানের এত গতি ও শক্তির পৃথিবীতেও মানুষের ভয় গেল না৷  ক্ষমতায় থাকা মানুষ  বিনম্রতাকে  দুর্বলতা ভাবল,  অহংকারে অটল  গ্রাণাইট পাথর হয়ে থাকাটাকেই একমাত্র সঠিক মত ভেবে নিল৷  যতদিন যাচ্ছে,  মানুষের মন ভয় ও সন্দেহের পাহাড়, বিচ্ছিন্নতার পাহাড় , অজ্ঞতার পাহাড়ে ঢেকে যাচ্ছে৷ বিদ্যা বিনম্রতা জিজ্ঞাসা কোথায়? ক্ষমতার দম্ভে আঘাত পড়লে আধুনিক মানুষ হিতাহিত  জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, সাপের থেকেও বিষাক্ত রূপ নেয় মনের ভেতরে বাইরে সরলতার হাসি আনে চোখে মুখে৷  সামাজিক রাজনৈতিক ধার্মিক মানুষের মুখোশটা থাকে সামনে পেছনে থাকে রাবণ, স্ট্যালিন, হিটলার৷  বেশিরভাগ পরিবার ক্ষেত্রে বা দলের ক্ষেত্রে এখনো জোর যার মুল্লুক তার অথবা অর্থ যার বল তার৷  এখনো তাই বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে৷ একদিকে মুখে বলছে মানুষ মানুষ ভাই-ভাই, কিন্তু ওসব বচন মাত্র৷  বেশিরভাগ পরিবারেই সবাই গোপনে ছিন্নভিন্ন৷  কি রাজনৈতিক, কি সামাজিক, কি ধর্মমতের ক্ষেত্রে আত্মঘাতী , ভাতৃঘাতী লড়াই প্রমাণ করে যে আজও মানুষ ভয় ও অহংকারের কূপ থেকে মুক্তি পেল না৷  মিথ্যাভয়ের সামনে ক্ষমতার গদি আঁকড়ে বাঁচতে চায়৷ প্রত্যাশার মিথ্যা স্বপ্ণে বাঁচতে চায়৷  বিরুদ্ধতায় বিদ্রোহের স্বপ্ণে বাঁচতে চায়৷ বিচ্ছিন্নভাবে আমরা আর ওরার যুদ্ধে  ভাগাভাগি মারামারির স্বপ্ণে থাকতে চায়৷  আসলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে অজস্র ঘটনার মাধ্যমে শিখছে আবার ভুলে যাচ্ছে, কারণ  লক্ষ বছরের আদিম মৃত্যু, ক্ষুধা , যন্ত্রণার ভয় ও ভুল অভ্যাসের অন্ধকূপ থেকে মুক্তি পাবার ইচ্ছা আজও তীব্রতর হয়নি৷  তাই পৃথিবীতে আজ বিজ্ঞান মানব জীবনে দ্রুতি আনলেও,  এই গতির পরিণাম ও দূরদৃষ্টি বিষয়ে  সে এখনো অন্ধ৷ ওই গতি যে সর্ব প্রাণীন ও অপ্রাণীন সত্তাকে  অতি পারমাণবিক স্তরে  আন্তরিকভাবে অনুভব করার জন্য, ভবিষ্যৎ  মানুষকে তা স্বীকার করে নিতে হবে৷ মানবিক  প্রেমিক নান্দনিক মানুষ হতে হবে৷ যেখানে প্রেম থাকে সেখানে অহংকার থাকে না৷  কিন্তু ক্ষমতার অহংকার অত সহজে যায় না৷ যান্ত্রিকভাবে বিনম্রতায় ভণ্ডামি থেকেই যায়৷ তবু উপায় আছে৷ সাঁতার শেখার মত যদি তুমি জলে ভেসে থাকতে  চাও হাত পা মাথা দেহ হারিয়ে জল হও৷  ভয়ে হাত পা যত নমনীয়তা হারাবে, যত বিচ্ছিন্ন হবে ততই ডুববে৷ জীবন সমুদ্রে একই নিয়ম৷  যুক্তি বুদ্ধিতে মানুষকে  তার অহংকার ও ভয়ের আমি তে সদর্থক রূপান্তর আনতে হবে৷  সেটাই হবে তার আমি হারা অবস্থা৷  তার জন্য অসহায় পশুপাখি মানুষের যত্ন নিতে হবে৷ তার সাথে যম নিয়মের নিরন্তর অনুশীলন চলবে৷ তাঁর সাথে সর্ববস্তু ও প্রাণে  থাকা অন্তহীন আকাশ যে তোমার মধ্যেও আছে, তুমি আকাশ ব্রহ্ম সেই অখণ্ড সত্যে জাগরিত হও৷ মিথ্যা স্বপ্ণ থেকে জাগো৷