(পূর্বপ্রকাশিতর পরেরাংশ)
ভোগ্যদ্রব্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে--- মানে যখন ভোগ্যদ্রব্যের হাত বদল হয় বা অদল বদল হয়( কোনকিছু পেতে যেটা দেয় তা হল 'অদল' , আর তার পরিবর্তে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে 'বদল' ) বা টাকার বিনিময়ে বা অন্য কোন কিছুর বদলে উৎপাদক বা প্রতিনিধি স্থানীয় কেঊ তার পণ্যকে অন্যের হাতে বা ভোক্তার হাতে তুলে দেয়--- এর পোষাকী নাম 'বিক্রয়' , সোজা বাংলায় 'বেচা' ; আর টাকার বিনিময়ে বা কিছুর মাধ্যমে দাতার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহকারী গ্রহীতার কাজটাকে বলে 'ক্রয়' , সোজা কথায় 'কেনা' । এই বেচা-কেনা বা ক্রয়-বিক্রয়ের স্থান বা ক্ষেত্রটা হচ্ছে হাট , বাজার ( সেটা স্থানীয় , দেশীয় বা বৈদেশিক -- সে যাই হোকনা কেন )। ক্রেতা-বিক্রেতার আসা -যাওয়া ও বেচা-কেনায় কোন প্রকার ( বা সরকারী) নিয়ন্ত্রণহীন বাজারকে বলে খোলা বাজার ( ওপেন মার্কেট ) । খোলাবাজার ছাড়াও রেশন ব্যবস্থার মতো সমাজ নিয়ন্ত্রিত বিক্রয় ব্যবস্থাও সমাজে প্রচলিত ; অন্ধকার জগতে সমাজের ন্যায়-নীতি বিরুদ্ধ চোরাবাজার , কলোবাজারও আছে । অবশ্য আমাদের দেশে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে বেচা কেনার রেওয়াজও আছে । এই পেশাকে লোক-বাংলায় বলে 'গামাল' করা বা 'ফেরি' করা । এর থেকেই এসেছে 'ফেরিওয়ালা' ,'গামালী শব্দ । তবে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই উৎপাদিত দ্রব্য বা ভোগ্যদ্রব্য সরাসরি ভোক্তার কাছে আসেনা , বা বাজারেও পৌঁছায় না । বিভিন্ন হাত ঘুরে বা বিক্রেতার বিভিন্ন স্তর পার হয়ে তবে তা বাজারে আসে, ভোক্তার কাছে পৌঁছায় । উৎপাদক ও ভোক্তার মাঝের হাতগুলোকে , অর্থাৎ দাতা-গ্রহীতাদের - উৎপাদক-ভোক্তার মাঝ পর্বে লাভের গুড় খাওয়া মাধ্যমকে চিহ্নিত করা হয় 'মধ্যসত্ত্ব-ভোগী' নামে । অর্থনৈতিক শোষণের লীলাক্ষেত্র তথা মানুষের অর্থ কেন্দ্রিক দুঃখের সায়র এই মধ্যসত্ত্ব-ভোগব্যবস্থা । আবার উৎপাদন - বণ্টন - পরিষেবা-ভোগ -- এই যে মানুষের অভাব মেটানোর , দুঃখ নিবারণের চলনবৃত্ত ---এরই প্রায় প্রতিটি ধাপে কর (ট্যাক্স)বসিয়ে সব দেশের সরকার রাজস্ব সংগ্রহ করে । এটা সরকারের আয় । আর এই আয় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা ,সুরক্ষা ও নাগরিকদের কল্যাণে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার খরচা -অনুদান হচ্ছে সরকারী ব্যয় । এসব থেকে একটা ব্যাপার উঠে আসছে যে উৎপাদন-বণ্টন-পরিষেবা-ভোগ ব্যবস্থা অবশ্যই একটা নিয়ম বা বিধি-ব্যবস্থা মেনে চলে ।
তাত্ত্বিক পরিভাষায় একে বলে 'শাস্ত্র' ( শাসনাৎ তারয়েৎ যস্তু সঃ শাস্ত্র পরিকীর্তিতঃ ) । মানুষের জাগতিক দুঃখ মোচনের , অভাব দূর করার এই শাস্ত্র অর্থ সর্বস্ব । তাই এই শাস্ত্রের নাম দেয়া হয়েছে 'অর্থশাস্ত্র' । আবার এর মধ্যে একটা গতি আছে যার অভিমুখ অভাব থেকে অভাব-নিবারনের দিকে । অর্থাৎ লক্ষ্যটা পেছন থেকে সামনের দিকে । পেছন থেকে সামনের দিকে নেওয়ার নিয়ম-বিধিকে এক কথায় বলে 'নীতি' । তাই অর্থশাস্ত্রের আর এক নাম অর্থনীতি । অর্থনীতিতে কার্যকারণ সম্পর্কে আগত ধনাত্মক ফলকে বলে প্রবৃদ্ধি ( গ্রোথ্ ) , আর সমাজে , নাগরিকদের ওপর তার ধনাত্মক ফলটাকে বলা হয় 'উন্নয়ন' । অবশ্য এর সঠিক হিসাব ও পরিচয় নিয়ে বিতর্ক এবং ধোঁয়াশা দুই-ই আছে । যাই হোক , এবার দেখাযাক অর্থনীতি ব্যাপারটা কী ?
'অর্থশাস্ত্র'ই নীতির প্রেষণায় 'অর্থনীতি' ( ইকোনমিক্স্ )নামেই সমধিক খ্যাত । ইকোনমিক্স্ শব্দটা এসেছে গ্রীক শব্দ 'ঐকনোমিয়া' (oikonomia < oikos + nomos ) থেকে --- যার মানে হল দিনের পরিচালনা । বিশিষ্টার্থে ,সম্পদের উৎপাদন ও বণ্টন সংক্রান্ত বৈবহারিক বিজ্ঞান ---যা রাষ্ট্রের জাগতিক সমৃদ্ধির পরিচয় দেয় । তাই অর্থনীতি ব্যাপারটা কি -- এ বিষয়ে সাধারণ ভাবে অর্থনীতির পণ্ডিতেরা বলেন--অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটা শাস্ত্র ( স্টাডি) যেখানে শ্রমিক , জমি , অর্থের বা মূলধনের বিনিয়োগ , আয় , উৎপাদন , কর ব্যবস্থা ও সরকারী আয় ব্যয় আলোচনা করা হয় । তবে আধুনিক কালের অর্থশাস্ত্রের পণ্ডিতেরা বিশেষভাবে বলছেন যে সীমিত সম্পদ দিয়ে কিভাবে সীমাহীন অভাব বা চাহিদা পূরণ করা যায় তারই বৈবহারিক বিজ্ঞান হচ্ছে অর্থনীতি । অর্থনীতিবিদগণ অর্থনীতিকে নানান ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন এবং অর্থনীতির অনেক ভাগ উপভাগের কথাও বলেছেন । যথা ঁ-- ১) প্রথাগত দৃষ্টিতে অর্থনীতির দুটি শাখা ---ক) মাইক্রোইকোনমিক্স্ -- মানে ক্ষুদ্র ক্ষেত্র । যেমন ভোক্তা , ব্যবসায়ী , গার্হস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্পতার প্রভাব প্রতিক্রিয়াদি । খ) ম্যাক্রোইকোনমিক্স্-- মানে হল----অর্থনীতির বৃহত্তর ক্ষেত্র । যেমন জাতীয় আয় , বেকারত্ব , দারিদ্র্য , মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি । ( ক্রমশঃ )
- Log in to post comments