(৪) ‘ঢামর’ শব্দের উত্তর ‘স্ত্রিয়াম আপ্’ করে আমরা ‘ঢামরা’ শব্দ পাচ্ছি৷ এটি একটি স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ (‘লতা’ শব্দের মত রূপ)৷ ‘ঢামরা’ শব্দের ভাবরূঢ়ার্থ হচ্ছে- যারা দলবদ্ধ হয়ে থাকে৷ ৰালিহাঁসকে ‘ঢামরা’ ৰলা হয়৷ ৰালিহাঁসের ৰাংলা পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে ৰালিহাঁস, বেলে হাস, ৰলাকা কালি দিঘড়ী, মেটে দিঘড়ী, নারুলি প্রভৃতি৷ শেষোক্ত তিনটি শব্দ মধুমতীর উভয় পারেই প্রচলিত)৷ এই ‘ঢামরা’ বা ৰালিহীস অর্থে ‘ঢম্+ ড্ প্রত্যয় করে আমরা যে ‘ঢ’ শব্দটি পাচ্ছি তার একটি অর্থ হচ্ছে এই ‘ৰলাকা’ বা ‘ৰালিহাঁস’৷
পাতিহাঁসেরাও দল বেঁধে থাকে, রাজহাঁসের মত তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে না৷ এই পাতিহাঁসকেও ‘ঢামরা’ ৰলা হয় আর তাই ‘ঢম্’ ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাই তাঁর একটি মানে ‘পাতিহাঁস’৷ দেশজ ৰাংলায় ‘পাতি’ শব্দের অর্থ দেশী বা দেশজ৷ পাতিহাঁস, (হিন্দুস্তানীতে ‘ৰত্তখ’) মানে যে হাঁস ৰাঙলার নিজস্ব অর্থাৎ বাইরে থেকে আসেনি অনুরূপভাবে পাতিনেবু পাতি-আমড়া (যা বিলিতি আমড়া নয়)৷
(৫) ঢম্ ধাতুর অর্থ একত্রিত হওয়া বা একত্রিত করা৷ প্রাচীনকালে রেডিও, টেলিবিশন তো ছিলই না, জনসংযোগের কোন ভাল মাধ্যমই ছিল না৷ তাই সেসময় ৰড়ৰড় ঢাক (জয় ঢাক) পিটিয়ে লোককে জড়ো করা হত৷ যেহেতু জয়ঢাকের আবাজে লোক একত্রিত হত সেইহেতু ‘ঢম্+‘ড’ করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি অর্থ ‘জয়ঢাক’৷ প্রাচীন সংস্কৃতে দুন্দুভি, কাড়া ও নাকাড়া অর্থেও ‘ঢ’ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়৷ গড়ে বা কেল্লায় বা দুর্গে সৈন্যদের জরুরী অবস্থায় ডাকবার জন্যে দুর্গের প্রাকারের ওপর থেকে সেকালে নাকাড়া ৰাজানো হ’ত৷ সেই ধবনি শুণে দূর দূরান্তর থেকে সৈন্যরা দুর্গে ছুটে আসত ও সংগ্রামার্থে প্রস্তুত হয়ে যেত৷
‘‘বেলা দ্বিপ্রহরে যে যাহার ঘরে
সেঁকিছে জোয়ারী রুটি৷
দুর্গ তোরণে নাকাড়া ৰাজিতে
বাহিরে আসিল ছুটি৷’’
(৬) ‘ঢম্’ ধাতুর একটি অর্থ বক্রতা প্রাপ্ত হওয়া বা স্বভাবগতভাবে বক্র হওয়া৷ তাই ভাবারূঢ়ার্থে ‘ঢম্+ ‘ড’= ঢ শব্দের অর্থ ‘যা স্বাভাবিক নিয়মে বক্র’৷ কুকুরের ন্যাজ স্বাভাবিক নিয়মেই বক্রু৷ তাই যোগারুঢ়ার্থে ‘ঢ’ মানে ‘কুকুরের ন্যাজ’*৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)