আর্থিক বিকাশ হোক সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

প্রাউট প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বর্তমান অর্থনীতি প্রসঙ্গে বলেছেন--- ‘আজ অর্থনীতি বস্তাপচা তত্ত্ব কথার কচকচানি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ একে অধিকতর বাস্তবমুখী করতে হবে৷’’ তাই প্রাউটের দৃষ্টিতে অর্থনীতি হবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও প্রয়োগ ভৌমিক বিজ্ঞান৷ বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষ সর্বজীব ও সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে অর্থনীতিকে বিকশিত করতে হবে৷

আর্থিক পরিকল্পনার সুফল সব শ্রেণীর মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে প্রাউট পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীত অর্থনীতির খোল-নলচে পাল্টে বিকেন্দ্রিত অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়৷ বিকেন্দ্রিত আর্থিক ব্যবস্থা সর্বনিম্নস্তর থেকে শুরু করতে হবে৷ প্রাউটের আর্থিক সংরচনার ভিত্তিভূমি হবে ব্লক স্তর৷ প্রাউটের এই বিকেন্দ্রিত আর্থিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলেই সমাজ থেকে আর্থিক ও মানস-আর্থিক শোষণের মূলচ্ছেদ হবে ও ধনী-দরিদ্র্যের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য কমবে৷ এই বিকেন্দ্রিত আর্থিক ব্যবস্থার প্রথম লক্ষ্য হবে কেন্দ্রিত অর্থনীতির অস্বাস্থ্যকর প্রভাব থেকে মুক্ত করে প্রতিটি মানুষের হাতে জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন (অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) পূর্তির ক্রয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া৷ প্রাউটের এই আর্থিক ব্যবস্থার সার্থক রূপায়নের জন্যে একাধিক সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে৷ প্রত্যেক সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমস্ত প্রকার সম্পদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে স্থানীয় মানুষের হাতে৷ প্রাউটের দৃষ্টিতে একটি সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ তারাই যারা নিজেদের ব্যষ্টিগত সামাজিক আর্থিক স্বার্থকে সেই অঞ্চলের সামাজিক অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে একাত্ম করে দিয়েছে৷ স্থানীয় মানুষ সম্বন্ধে প্রাউটের এই ধারণার সঙ্গে জাত পাত শ্রেণী সম্প্রদায় ধর্মমত, ভাষা, জন্মস্থানের কোন সম্পর্ক নেই৷ এরফলে কোন অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভাসমান জনসমুদয় থাকবে না ও অর্থের বহিঃস্রোত হবে না৷

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি গড়ে তোলা হবে পাঁচটি উপকরণের ভিত্তিতে৷ একই ধরণের অর্থনৈতিক সমস্যা, একই ধরণের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, জাতিগত তথা নৃতাত্বিকগত সাদৃশ্য, সাংবেদিক উত্তরাধিকার, সাধারণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য৷ প্রাউটের অর্থনৈতিক কাঠামো যারা গড়ে তুলবে তাদের শুধু অক্সফোর্ড ক্রেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকলেই চলবে না, উপরোক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলে কারোপক্ষে সার্থক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়৷ সর্বজীবের সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে স্বার্থক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গড়ে তুলতে তাই প্রাউটের মন্ত্র হলো--- এলাকাকে জানো, পরিকল্পনা তৈরী করে, জনগণের সেবা করো৷ অর্থাৎ আর্থিক ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ নীতি রূপায়ন করতে হলে সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে আত্মিক যোগ থাকা চাই৷ হাজার মাইল দূরের কোন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে সার্থক পরিকল্পনা রচনা কখনই সম্ভব নয়৷ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভৃপ্রকৃতি জল হাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থান, নদ-নদীর অবস্থান, স্থানীয় মানুষের কৃষ্টি সংস্কৃতি, থাকতে হবে পরিকল্পনা রূপায়ন কারীকে৷ তার জন্যে স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, বৈবহারিক জ্ঞানের সহায়তা নিতে হবে৷ তবেই সম্ভব একটি সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের আর্থিক সমস্যার সমাধান করে সকল অধিবাসীর কল্যাণ করা৷