অর্থের মূল্য বেড়ে চলে তার চলমানতায় অর্থাৎ টাকা যত হাত ঘুরতে থাকে ততই তার মূল্য বাড়তে থাকে। টাকা যত সিন্ধুকে বন্ধ থাকবে তত মরচে পড়বে, ছাতা ধরবে, তার মূল্য কমে যেতে থাকবে। এইটাই অর্থনীতির মৌলিক কথা।এই জনকল্যাণের কথা ভেবে কৌশীদব্যবস্থা রাখতে হয় ও জনগণের সামগ্রিক আর্থিক উন্নতির কথা ভাবতে গেলে কৌশীদব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে যায়। Keep the wagons moving এর মত ক keep coins (money) moving--কথাটা সমভাবে সত্য। তবে কৌশীদকে এ ব্যাপারে দুটি জিনিসের দিকে নজর রাখতে হবে। একটা হচ্ছে কৌশীদব্যবস্থা এমন যেন না হয় যার রাক্ষসী ক্ষুধায় সাধারণ মানুষের জীবন কুশীদ যোগাতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে...... পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এককালে যা হয়েছিল ও আজও কিছু কিছু শুধু অনুন্নত দেশেই নয়, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশেও হয়ে থাকে।
কৌশিদব্যবস্থার দ্বিতীয় ত্রুটি হচ্ছে অবিবেকী রাষ্ট্র পরিচালকেরা বা রাষ্ট্র-পরি- চালন ব্যবস্থা অনেক সময় রাজকোষে বা কৌশীদে উপযুক্ত মূল্যের বিত্তকোষ (Bullion) না রেখে যথেচ্ছভাবে নোট ছাপিয়ে যায়। প্রথমোক্ত ত্রুটিটা কেবল মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারকে ই যে ধ্বংস করে তাই নয়, যারা ধনী পরিবার তাদেরও পথে বসায়। দ্বিতীয় ত্রুটিটা হচ্ছে এই যে সমগ্র পরিমাণ বিত্তকোষ জমা না রাখলে সমস্ত সমাজ জীবন ধস্ত-বিধস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাপকভাবে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় যা আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ব্যবস্থা ও বৈদেশিক বাণিজ্যিক আদান-প্রদান দুইকেই বিপন্ন করে দেয়। শেষে দেশে উৎপাদন যত বেশিই হোক না কেন সাধারণের ভোগে তা' লাগে না। তাতে ধনী আরো স্ফীতোদর হয়, আরো নির্মমভাবে তাদের শোষণ যন্ত্র চালাবার সুযোগ পেয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় (state capitalism) জনগণের ওপর রাষ্ট্রশাসক শোষকের ভূমিকায় আরো দৃঢ় ভাবে জগদ্দল পাথরের মতো বুকের ওপর চেপে বসে। এই রাষ্ট্রীয় ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা (state capitalism) নিজেকে ধনতান্ত্রিক (capitalism), সমাজতান্ত্রিক (socialism), ধনসাম্যবাদী(communism), যাই বলুক না কেন জনসাধারণের কাছে তা রাক্ষসী পিশাচারী চেয়েও ভয়ানক ও রক্তমোক্ষক।
কুশীদব্যবস্থা বা কৌশীদ রাখতেই হবে, নইলে অর্থের চলমানতা ব্যাহত হবে। ব্যষ্টিগত ভাবনা বা অন্য কোন ভাবনায় প্রেষিত হয়ে যদি কৌশীদ বা কুশীদ ব্যবস্থার বিরোধিতা করে তবে তাকে আর্থিক ব্যাপারে অন্ধকার যুগেই থেকে যেতে হবে।
প্রাপঞ্চিক লোকে (physical sphere) সে তার প্রমা হারিয়ে ফেলবে ও একতরফা বা একপেশে (lopsided) হয়ে মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগতেও অন্যের কাছে উপহাসের পাত্র হয়ে দাঁড়াবে। এমন অবস্থাটি কারো হোক তা ভাবতেও পারা যায় না। তাহলে বুঝলে কৌশীদ বা কুশীদ ব্যবস্থার মোদ্দা কথা হ'ল টাকাকে ঘুরতে দাও, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সচল করে তোল, চাল, ডাল, নুন, তেল টাকা দিয়ে কেন....... কেন যত পারো। টাকাটা যাক মুদির দোকানে (রাঢ়ী বাংলায় লটকনের দোকানে), সেখান থেকে যাক আখের গুড়ের শালে..... সেখান থেকে যাক ময়রার দোকানে.... সেখানে থেকে যাক কারখানায়...... সেখান থেকে যাক মজুরের হাতে..... সেখান থেকে যাক হাটে শাড়ি বেচা তাঁতির কাছে। তাঁতির কাছ থেকে সে যাক নববধূর রঙিন শাড়ীতে..... রঙিন শাড়ী সমাজে এনে দিক বর্ণাঢ্যতা।
(শব্দচয়নিকা' দশম খন্ড)