আসল শত্রুকে চিনুন

লেখক
শঙ্কর দাস

ত্রিপুরার উপজাতি  যে সকল ভাই-বোনেরা আপনাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে অক্লান্তভাবে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, আমার সেই সহযোদ্ধাদের প্রতি আজকের এই নিবেদন৷ প্রথমে প্রশ্ণ দিয়ে শুরু করি৷ ত্রিপুরার সার্বিক উন্নয়নে আসলশত্রু কে?

আপনারা মনে করছেন, বাঙালীরাই হল আপনাদের আসল শত্রু৷ এটা মনে  করার সঙ্গত কারণও আছে৷ বর্বর,অসভ্য, বজ্জাত, মিথ্যাচারী,১৯৮০’র গণহত্যার রূপকার খুনী কম্যুনিষ্টরা এতো বছর ধরে প্রচার করে করে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে যে, বাঙালীরা এখানে উদ্বাস্তু৷ বাঙালীরা আপনাদের শোষণ করছে৷ তাই ত্রিপুরা থেকে বাঙালী খেদাও৷ অথচ মজার কি জানেন!  নির্লজ্জ, কম্যুনিষ্ট অনিল সরকার ও তার বংশধর,   মানিক সরকার ও তার পরিবার, বাদল চৌধুরী ও তার পরিবাররা উদ্বাস্তু হয়েও নিজেরা  কিন্তু  এখনও ত্রিপুরা পরিত্যাগ  করেনি৷ এখন তো মনে হয়, তারা আরও শক্ত ঘাঁটি গেঁথে বসেছে৷ এদের কে  আগে ত্রিপুরা ত্যাগ করতে বাধ্য না করে আপনারা তাদেরই কথায় সাধারণ বাঙালীদের টার্গেট করলেন৷ যে বাঙালী বাংলা ভাষায়  বলছে  বাঙালীরা ত্রিপুরাতে উদ্বাস্তু, তাহলে সেই বাঙালী উদ্বাস্তুকেই সর্বপ্রথমে ত্রিপুরা ছাড়ার দরকার ছিল৷ তাই নয় কি? কিন্তু  আপনাদের খুশী করা এই বর্বর কম্যুনিষ্টদের সুচতুর চালের শিকার হলেন অতি সাধারণ বাঙালীরা৷ বাঙালীরা আপনাদের উন্নয়নের শত্রু-এই কথার অর্থ দাঁড়ায়, ১৯৭১ বা ১৯৫১ সালের আগে ত্রিপুরা আজকের চেয়ে বহুগুণে উন্নত ছিল ও এই দাবী ঐতিহাসিকভাবে যে মিথ্যা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷

এবার আসি টিটিএএডিসি তথা এডিসি প্রসঙ্গে৷ ১৯৭৯ সালে টিটিএএডিসি গড়ে ওঠে যা মূলতঃ ত্রিপ্যাল্যাণ্ডই৷ এই এডিসি ঘটিত হওয়ার  পর থেকে তার জন্যে আলাদা প্রশাসন, আলাদা বাজেট, যা একটি আলাদা রাজ্যের সমতুল্য৷ এই বাজেটের ছিটে ফোটাও কোন বাঙালীর জন্যে নয়৷

এখানে খুবই প্রণিধানযোগ্য প্রশ্ণ হল, আজ  ৪০ বছর ধরে আলাদা করে শুধুমাত্র এ ডিসির জন্যে স্বতন্ত্র বাজেট হওয়া সত্ত্বেও আজকের  জনজাতিদের এতো অর্থনৈতিক দুরাবস্থা কেন? জনজাতিদের  এই দুরাবস্থার চিত্র আমার মর্মমূলে ভীষণ বেদনা দেয়৷ এই ৪০ বছরে যে পরিমাণ বাজেট হয়েছে, সেই অর্থগুলো কোথায় ব্যয়িত হয়েছে/হচ্ছে? এডিসির হেডকোয়ার্টার খুমুলুঙ’র কাছে কি সেই জবাব চাওয়া যায় না?

এখানে আরেকটা মজার বিষয় কি আপনারা লক্ষ্য করেছেন? টিটি এএ ডিডিসির হেডকোয়ার্টার খুমুলুঙ হওয়া সত্ত্বেও এডিসির অধিকাংশ এম.এল.এ মন্ত্রী, নেতাগণ খুমুলুঙ-এর চেয়ে রাজধানী আগরতলা স্থায়ী বাসিন্দা হতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন৷ তাদের বিত্ত বৈভবের দিকে একবার কেউ তাকিয়ে  দেখেছেন কি, তারা  কি ছিলেন আর আজ কী হয়েছেন? ভোটের সময় বাঙালীদের বিরুদ্ধে আপনাদের তাতিয়ে দেওয়ার জন্যে ছাড়া তারা নিজ পাড়ামুখো বেশী একটা হতে দেখেন কি? এবার আসি ত্রিপুরাতে বহিরাগত অস্থায়ী তথা ভাসমান ব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে ৷ ত্রিপুরার অস্থায়ী বাসিন্দা যারা ত্রিপুরাতে ‘‘জাতীয়তাবাদের’’ ধোয়া তুলে  এখানে অবাধে ব্যবসা করছে আর ত্রিপুরার প্রায় তিনভাগের দুইভাগ অর্থ বহিঃরাজ্যে পাচার করে দিচ্ছে৷ এই ছোট্ট একটা রাজ্যের তিন ভাগের দুই ভাগ টাকা বহিঃরাজ্যে পাচার হয়ে গেলে বাকী এক ভাগ টাকায়  আমাদের সার্বিক উন্নয়ন কী করে সম্ভব, বলুন? আর স্থায়ী বসবাসকারী বাঙালীগণ তাদের শ্রম, শক্তি, বুদ্ধি উপার্জিত অর্থ, সবই এখানের উন্নতির জন্যে অকাতরে ব্যয় করছেন৷ কোথায়ও পাচার করছেন না৷  আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করুন, মিশ্রবসতি বা বাঙালী এলাকার কাছাকাছি উপজাতিগণ বৌদ্ধিকভাবে ও আর্থিকভাবে এডিসির ভিতরের লোকদের তুলনায়  অনেক বেশি এগিয়ে আছেন৷ আর যতই এডিসির ভিতরে যাওয়া যাবে ততই অবস্থা খারাপ হতে থাকে৷ ৪০ বছরে খুমুলুঙ কী উন্নয়ন করল বাঙালীশূন্য এডিসিতে? এখানে তৃতীয় মজার ব্যাপারটি কী জানেন? রাজ্যের অর্থের এই বহিঃস্রোত অবাধে, শান্তিপূর্ণভাবে ও মসৃণভাবে হওয়ার জন্যেই পাহাড়ী-বাঙালী একটা গেম, একটা খেলা রাজনৈতিক ধুরন্ধরেরা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কারণ, ওই বহিরাগত ব্যবসায়ীদের  কালো টাকাতেই যে এনারা ভোট ভোট নামক খেলা খেলেন৷ আর অহেতুক ঝগড়াঝাটি করে মরছি আমরা অর্থাৎ জাতি-উপজাতির অতিসাধারণ মানুষেরা৷ সুতরাং ত্রিপুরার আসল শত্রুই হল অর্থের এই বহিঃস্রোতকারীগণ ত্রিপুরার অর্থের এই বহিঃস্রোত বন্ধ করা না গেলে ত্রিপুরার সার্বিক উন্নয়ন কোন দিনই সম্ভব হবে না--- এ কথা হলফ করেই বলতে পারি৷ তাই আসুন আমরা  সমগ্র ত্রিপুরাবাসী মিলিতভাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সার্বিক শত্রুদের বিরুদ্ধে  লড়াই করি৷

আমাদের শ্লোগান হবেঃ---

১. জাতীয়তাবাদের নামে ত্রিপুরার অর্থ বহিঃরাজ্যে পাচার করা চলবে না৷

২. হয় ত্রিপুরাতে স্থায়ীভাবে বাস করো, নয়তো ত্রিপুরা ছাড়ো৷