বৈশাখের পয়লা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বাঙালী হিন্দুর নববর্ষ পয়লা বৈশাখ৷ প্রাচীনকালে হত অগ্রহায়নে৷ হায়নের অর্থ বৎসর৷ অগ্র হচ্ছে প্রথম৷ অর্থাৎ বৎসরের প্রথম মাস৷ গীতায় অগ্রহায়নকে বলা হয়েছে মার্গশীর্ষ৷ এককালে এই মার্গশীর্ষ বা অগ্রহায়ন ছিল বছরের প্রথম মাস৷ মার্গশীর্ষ নক্ষত্রে পূর্ণ চন্দ্রের উদয় হলে সেই পূর্ণিমাকে বলে মার্গশীর্ষী পূর্ণিমা৷ এই মার্গশীর্ষী পূর্ণিমার জন্যই মাসটির নাম মার্গশীর্ষ৷ অগ্রহায়ন মাসে সূর্যাস্তের পর এই নক্ষত্রে পূর্ণচন্দ্রের উদয় হয়৷ অতএব, বছরের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ৷

আর্যগণ উত্তরায়ন আরম্ভের দিনটিকে নববর্ষ মনে করতেন৷ উত্তরায়ন আরম্ভ হয় ২২ ডিসেম্বর বা ৭ পৌষ৷ তাহলে আর্যগণ ৭ই পৌষ নববর্ষ পালন করতেন৷ সেদিন তাঁরা সূর্যের পূজা ও যজ্ঞ করতেন৷

আজ থেকে ১৬০০ বছর আগে পৌষ মাসের শেষ দিনে উত্তরায়ন আরম্ভ হত৷ অতএব পরদিন ১ মাঘ ছিল নববর্ষের দিন৷ সেদিনকার পুণ্য তিথিটি সাগর-সঙ্গমে স্নান অর্থাৎ মকর স্নানের মধ্য দিয়ে আজও পালিত হয়৷

উত্তর ভারতে বর্ষ আরম্ভ (বিক্রম সংবত) হয় চৈত্র মাসের শুক্লা প্রতিপদে৷ ঐদিন সেখানে ধবজা রোপণের প্রথা আছে৷ মোগল আমলে উত্তর ভারতে ফসলী বর্ষ প্রচলিত৷ ফসলী বর্ষ শুরু হত ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে৷ উড়িষ্যায় চালু ছিল আমলী ও বিলায়তী অব্দ৷ আমলী অব্দ শুরু হত ভাদ্রমাসের শুক্লা দ্বাদশী থেকে আর বিলায়তী আশ্বিন থেকে৷ দক্ষিণ ভারতে বার্হস্পত্য বর্ষ শুরু হয় বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে৷ কেরলে কোল্লাম বর্ষ আরম্ভ হয় ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা নবমী থেকে৷ গুজরাতিরা দেওয়ালীর দিন নববর্ষ পালন করে৷ সেদিন তারা জুয়া খেলে নতুন বছরের ভাগ্য পরখ করে নেয়৷

পয়লা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের হালখাতার উৎস খুঁজতে হলে যেতে হবে সেই মোগল আমলে৷ আকবরের আমল থেকে হিজরী সন অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন রাজস্ব আদায় করা হত৷ প্রজারা তখন রাজস্বরূপ ফসল দিত৷ তাই আজকের হালখাতার তখনকার নাম ছিল ‘ফসলী’৷ সংসৃকত ভাষায় এর নাম ছিল ‘পুণ্যাহ’ অর্থাৎ পুণ্যের দিন! পুণ্যের লোভে যাতে প্রজারা রাজস্ব দিতে আগ্রহী হয় তাই বুঝি এই নামকরণ৷