করদাতৃগণ, নেতৃগণ, ভ্রাতৃগণ, বত্তৃণগণ, ভ্রাতৃবর্গ / করদাতাগণ, নেতাগণ, ভ্রাতাগণ, বক্তাগণ, ত্রাতাবর্গ–যৌগিক পদে অনেক সময় দেখা যায় লোকে বলবার সময় বা লেখবার সময় পূর্ব পদস্থিত ‘তৃচ’ প্রত্যয়ান্ত শব্দটিতে মূল শব্দরূপ না রেখে প্রথমার একবচন ব্যবহার করে থাকেন৷ যেমন, ‘কর্ত্তৃগণ’ না লিখে লেখেন ‘কর্ত্তাগণ’৷ মনে রাখতে হবে মূল শব্দটি ‘কর্ত্তৃ’ যার প্রথমার একবচনে ‘কর্ত্তা’৷ তাই নিয়মানুসারে যৌগিক পদে মূল শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ অর্থাৎ ‘কর্ত্তাগণ’ না লিখে লিখতে হবে ‘কর্ত্তৃগণ’৷ অনুরূপভাবে ‘করদাতাগণ’, ‘নেতাগণ’, ‘ভ্রাতাগণ’ ‘বক্তাগণ’, ‘ত্রাতাবর্গ’, শব্দগুলির শুদ্ধরূপ হ’ল ‘কর্ত্তৃগণ, ‘করদাতৃগণ’, ‘নেতৃগণ’, ‘ভ্রাতৃগণ’, ‘বত্তৃণগণ’, ‘ত্রাতৃবর্গ’৷
ঠিক একই নিয়মে ‘পিতাসদৃশ’ না লিখে লেখা উচিত ‘পিতৃসদৃশ’৷
কাঁটাল/কাঁঠাল–সংস্কৃত ‘কণ্ঢকীফলম্’ থেকে এসেছে ‘কাঁটাল’৷ ‘কণ্ঢক’ বা ‘কাঁটা’ শব্দে ‘ট’অক্ষরটি রয়েছে৷ তাই বানান লিখতে হবে ‘কাঁটাল’–কাঁঠাল’ নয়৷ একে অসমীয়াতে বলে কাঁটাল’, বিহার ও উত্তর ভারতে ‘কটহল’৷ পাকা কাঁটালকে সংস্কৃতে বলা হয় ‘পনস’৷ দ্রড়িয়া, মাঠী ও মধ্যপ্রদেশের দক্ষিণাংশে ‘পনস’ শব্দটি বেশ প্রচলিত৷ কাঁচা কাঁটালকে বাংলায় ‘এঁচোড়’ বা ‘ইঁচড়’ বলে৷ এটি দেশজ বাংলা শব্দ৷ কম বয়সের ছেলে বেশী পাকা হলে আমরা বলি ‘ইঁচড়ে পাকা’৷
ছাত্রা/ছাত্রী–‘ছদ্’ ধাতুর অর্থ আচ্ছাদন দেওয়া৷ যে বস্তু আচ্ছাদন দেয় তা–ই ‘ছত্র’৷ গুরুর ছত্রছায়ায় যে আশ্রিত তাকে ছত্র অণ করে ‘ছাত্র’ বলা হয়৷ ‘ছাত্র’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে দু’টি রূপ রয়েছে–‘ছাত্রী’ ও ‘ছাত্রা’৷ ‘ছাত্রী’ মানে ‘ছাত্রের পত্নী’৷ তিনি নিজে পড়ুয়া হতেও পারেন, নাও হতে পারেন৷ ‘ছাত্রা’ মানে যিনি নিজে পড়ুয়া কিন্তু তিনি কারও স্ত্রী হতেও পারেন, নাও পারেন৷
জাদুগর/জাদুগর/––‘গর’ প্রত্যয়যুক্ত ফারসী শব্দ ‘সওদাগর’ অর্থাৎ যিনি সওদা বোঝেন৷ ‘জাদুগর’ অর্থে যিনি জাদু জানেন, বোঝেন৷ এখানে বলে রাখা ভাল যে কেউ কেউ ‘জাদুগর’ বানানের পরিবর্ত্তে ‘যাদুকর’ এইরকম বানান লেখেন৷ তাঁরা শব্দটিকে ‘যাদু’ শব্দের উত্তর কৃ অল্ করে দেখাতে চান৷ কিন্তু তা ঠিক নয়৷ ‘জাদু’ ফারসী শব্দ৷ ‘জাদু’ জানেন, বোঝেন এই অর্থে ফারসী প্রত্যয় ‘গর’ যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘জাদুগর’৷ তাই ‘যাদুকর’ বানানের টিকি থেকে ন্যাজের ডগা পর্যন্ত ভুল৷ ‘জাদুগর’ শব্দের সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘বাজিকর’৷ ‘কর’ সংস্কৃত প্রত্যয়৷ ফারসীতে ‘কর’ প্রত্যয় নেই৷ ‘কার’ বলে যে শব্দটি রয়েছে তা প্রত্যয় নয়৷ ‘কার’ মানে ফারসীতে ‘কাজ’৷ ‘জাদু’ শব্দের সংস্কৃত প্রতিশব্দ ‘বাজি’ বা ‘ভোজবাজি’, খাঁটি বাংলায় ‘ভেল্কি’৷ প্রাচীন ভারতে রাজা ভোজদেব ও তাঁর স্ত্রী ভানুমতী জাদুবিদ্যায় অভিজ্ঞ ছিলেন৷ তাই থেকেই ‘ভোজবাজি’, ‘ভানুমতী কা খেল’ প্রভৃতি শব্দ আসছে৷