বাংলা ও বাঙালী কে বাঁচাতে বাঙালীকেই  হাল ধরতে  হবে

লেখক
এইচ. এন. মাহাতো

বিজেপির মাথার মণির কণ্ঠে আমরা বারবার শুনে এসেছি স্বচ্ছ ভারত গড়ার আহ্বান৷ আর বঙ্গ বিজেপিতে যত তৃণমূলের অস্বচ্ছ লোকেরা দলে ভিড়ছে৷ তেমনি একজন ব্যারাকপুরের মাফিয়া ডন মণিশ শুক্ল৷ যার মৃত্যু ঘিরে বিজেপি বাজর সরগরম করছে৷ এই মণিষ সিপিএম-এর খুনের রাজনীতিতে হাতে কড়ি দিয়ে খুন, জখম, তোলাবাজ, মাফিয়ারাজে  সিদ্ধ হস্ত ছিলেন৷ অবাঙালী মাফিয়া বর্তমান সাংসদ অর্জুন সিং-এর হাত ধরে তৃণমূলের মধ্যে ভাঙ্গন ধরিয়ে এই দুই মাফিয়ার বিজেপিতে প্রবেশ৷ সেই বিজেপির রাজনৈতিক নেতাদের  স্বচ্ছতার বড়াই করা মানায় কী?

বাঙলার শিল্পাঞ্চল আজ অবাঙালী মাফিয়াদের দ্বারা ধবংসের স্তুপে পরিণত হয়েছে৷ বাঙলার কংগ্রেস সিপিএম বিজেপি তৃণমূল সকলেই এই অবাঙালী মাফিয়াদের নিয়ে  ভোট ব্যাঙ্ক তৈরী করেছে৷ এই মাফিয়ারাজ বন্ধ করতে গিয়ে কত প্রতিভাবান বাঙালী দরদী বাঙলার দামাল ছেলেরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছে ওই অবাঙালীদের হাতে৷ কত  বাঙালী মায়ের সন্তান, ভাই, স্বামী এদের হাতে প্রাণ দিয়েছে৷ সেই সময় কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটুও দুঃখ হয়নি৷ আজ সমগ্র শিল্পাঞ্চল জুড়ে বিজেপির ঠেঙ্গাড়ে বাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছে৷ এরজন্য ‘‘আমরা বাঙালী’’ এই রাজনীতিকে ধিক্কার জানায়৷

রাজ্য সরকারের উচিৎ এই মূহুর্তে বাঙলা থেকে বাংলা ও বাঙালী বিদ্বেষী অবাঙালী মাফিয়াদের তাদের দেশে বা রাজ্যে ফেরত পাঠানো৷ বাঙলার সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারাকে বিকৃত করতে ও বাঙালীর মাতৃভাষাকে লুপ্ত করতে তারা বাঙালীদের ওপর হিন্দি ভাষাকে চাপাতে চলেছে কেন্দ্রের হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের মদতে৷ এই অবাঙালীরা নিজেদের মধ্যে মাতৃভাষা (ভোজপুরী, মগহী ইত্যাদি ইত্যাদি) ব্যবহার করেন কিন্তু  বাঙলায় থেকেও  বাঙালীদের সঙ্গে কথা বলার সময় হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেন৷ অন্যদিকে বাংলা ভাষা ও বাঙালীদের ঘৃণার  চোখে দেখে৷ বাঙলায় থেকেও বাঙালী ও বাংলার সংসৃকতিকে সম্মান তো দুরের কথা তারা বিমাতৃসুলভ আচরণ করে৷ শুধু তাই নয় বৈদিক মতবাদ ও সংসৃকতি আমাদের ওপর চাপিয়ে  দেওয়ার নানা প্রকারের ফন্দি আঁটে৷ বাংলা সংসৃকতি মূলতঃ তন্ত্র সাধনার  সংসৃকতি, অন্তর নিহিত ধর্মবোধ  ও সাধনার স্থান, যেখানে কোনো প্রকারের কুসংস্কার ও বুজরুকিতে বিশ্বাস নেই৷ বর্তমান বাঙালীরা  সেই অবাঙালীদের সঙ্গে  তাল মেলাতে গিয়ে নিজেরাই মেরুদণ্ডহীন হয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেছে৷

এছাড়াও এই অবাঙালীরা বাঙলার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অর্থ ও সম্পদের বিশাল পরিমাণ বর্হীস্রোত ঘটিয়ে বাঙলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে চলেছে৷ আজ বাঙলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই অবাঙালীরা সুপরিকল্পিতভাবে তাদের বংশধরদের রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্যে বসতি স্থাপন করিয়ে বাঙালীর ভাষা ও সংসৃকতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে৷ আর বাঙালীরা দরাজকণ্ঠে  মহানুভবতা দেখিয়ে সেই অবাঙালীদের স্বাগত জানাচ্ছে৷ আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাঙলায় বাঙলীরা সংখ্যা লঘু হতে বাধ্য হবে৷ তাহার জলজ্যান্ত উদাহরণ হাওড়া, হুগলী, ব্যারাকপুর, দুর্গাপুর ও আসানসোল  শিল্পাঞ্চলগুলি , এমনকি দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার তরাই অঞ্চলের বিস্তারিত ভূমি৷ কয়েক দশক আগে কংগ্রেসের এক অবাঙালী এম.এল.এ বাংলার বিধানসভায় উপরিউক্ত অঞ্চলগুলি কে নিয়ে কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন৷ আজ তার বাস্তবে প্রতিফলন ঘটতে চলেছে৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রথম কাজই হলো বাঙালী  জাতিসত্তাকে ধবংস করতে গোর্খাল্যাণ্ড, ত্রিপুরাল্যাণ্ড, অসমল্যাণ্ড, কামতাপুরিল্যাণ্ড ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল তৈরী করে বাঙালীর জন জীবনকে অন্ধকারে অন্ধগলির পথে ঠেলে দেওয়া৷ বাংলার সামাজিক অবক্ষয় চরমভাবে আজ অবাঙালী মাফিয়াদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে৷ এর থেকে মুক্তি পেতে হলে চাই ভারতের ৩নং ধারায় বাঙালীর মাতৃভূমি বাঙালীস্তান৷ আজ সারা বাঙলার তথা কথিত বুদ্ধিজীবিরা (যারা বুদ্ধিকে সমাজ কল্যাণে ব্যবহার  না করে বুদ্ধিকে  জীবিকা করেছে) কেন নীরবতা পালন করছেন বোঝা মুসকিল নাহলেও এটা বোঝা যায় রাজনৈতিক নেতাদের তাঁবেদারী না করলে বড় কোন পুরস্কার পাওয়া যাবে না৷ এটাই তাদের নীরবতার কারণ ৷ অতীতে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বাঙলার বুদ্ধিজীবি যে ভাবে সরব হয়েছে আজ তার বিন্দু মাত্র সরবতা কোন প্রকারে এই ধান্দাবাজ বুদ্ধিজীবি মধ্যে  দেখা যাচ্ছে না৷

বাঙালী জাতিসত্তার জীবনে আর এক আইনি বিপর্যয় আসতে চলেছে নাগরিকত্বের নামে৷  অসমসহ সমগ্র উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়ে বাঙালীর ওপর আঘাতের ওপর আঘাত হয়েই চলেছে৷ ‘‘আমরা বাঙালী’’ দল ব্যতিরেকে কোন রাজনৈতিক দলের বাঙালী নেতাদের কোন প্রকারের আন্দোলন কর্মসূচী আমাদের চোখে পড়ছে না, এমনকি  কোন রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভাতে একটি প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না৷ অথচ  দেখুন যে জাতিটির নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য ভারতে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র তৈরী হল, সেই জাতিটি আজ ভারতের সংবিধানে বিদেশী বা বহিরাগত!  স্বাধীনতার পরবর্তী অবস্থায় পঞ্জাবীদের একশ  শতাংশ পুর্নবাসনের  ব্যবস্থা করে দিলেও বাঙালী বিদ্বেষীরা বাঙালীর বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে এখনো জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়নি৷

এর সমাধান বাঙালীকেই করতে হবে৷ এরজন্য ঘরে ঘরে প্রস্তুতি নিতে হবে৷ আজ সব থেকে বেশী প্রয়োজন বাঙালীকে দল মতের উর্ধে বাঙালীর  জাতীয়তাবোধকে একটি ছাতার তলায় এনে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দেলন করা৷ রক্ত দিয়েছি আরো রক্ত দেবো, আমরা গড়ে নেবো শোষণ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাঙালীস্তান৷ এটাই হবে বাঙালীর শেষ অঙ্গীকার৷