বাঙলা আমার দেশ, আমি বাঙলাকে ভালবাসি

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিনহা

একবার অসম ভবনের সামনে ‘‘আমরা বাঙালী’’ সংঘটনের পক্ষ থেকে  বিক্ষোভ প্রর্দশনের সময় আমার  এক প্রাক্তন সহকর্মীর সঙ্গে দেখা৷ তিনি জিজ্ঞেস করলেন-কী ব্যাপার ! আমি বললুম -‘‘বাংলা ও বাঙালী’’ দুইই আজ বিপন্ন, অসমের ১ কোটি ৩৯ লক্ষ বাঙালীর নাগরিকত্ব সংকটের মুখে---তাই এই বিক্ষোভ৷ ‘‘ধুস! ওতে  কিছু হবে না’’  বলে তিনি তাঁর গন্তব্যে চলে গেলেন! আমার সেই আপাদমস্তক  বাঙালী বন্ধুবরটির মত হয়তো বেশীরভাগ বাঙালীই এই ভাবনার শরিক৷ বাংলা ও বাঙালী যে সত্যই  আজ বিপন্ন এই বোধ টুকু তাদের নেই৷ বাংলাযে সব দিক থেকে বঞ্চিত, শোষিত---বাঙালীরা অত্যাচারিত, উৎপীড়িত, স্বভূমে পরবাসী---এই ভাবনাগুলো কি কখনোই  তথাকথিত সুখী বাঙালীদের মনে উঁকি দেয় না? আমরা কি সত্যই বাঙালীর অতীত, ইতিহাস, সব ভুলে বসে আছি? ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পূর্ববর্তী পর্র্যয়ে  বাংলার প্রতি বঞ্চনা, লাঞ্ছনা--- বাংলাকে  টুকরো টুকরো করার বিরুদ্ধে বাঙালীর জনজাগরণ, স্বাধীনতা সংগ্রামে  বাঙালীর অসীম  সাহসিকতার ইতিহাস  কি আমরা বিস্মৃত হয়েছি? অবশ্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে আজকের কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের পক্ষে সেই অগ্ণিযুগের কথা প্রবীণদের  অভিজ্ঞতা বা পুস্তকপাঠ ছাড়া জানা সম্ভবও নয়৷ বর্ত্তমান শিক্ষাব্যবস্থাতে  সেই সব তথ্য গুরুত্ব সহকারে পড়ানোও হয় না৷ কোন রকমে মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে ফেলতে পারলেই হল৷ বিভিন্ন মহাপুরুষ, দেশপ্রেমিকদের  জন্মদিনে বিদ্যালয়, কার্য্যালয় ছুটি থাকে---সেই ছুটি  উপভোগ করা বা খুব বেশী হলে একটু পুষ্পার্ঘ প্রদান করেই   দায়িত্ব শেষ  করা ছাড়া  আর  কিছুর প্রয়োজন পড়ে না৷  খুব কম সংখ্যক কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ওই সব মনীষীদের-জীবনাদর্শ ,দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালবাসার কথা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করে বা সেই আদর্শে নিজেদের জীবন পরিচালনার কথা ভাবে৷বাঙলার ঐতিহ্যের মূলে রয়েছে মৈত্রী ও সম্প্রীতির  মেলবন্ধন, একের প্রতি  অপরের ভালবাসা আর আত্মীয়তার নিবিড় আকর্ষণ৷ নদীমাতৃক বাঙলার ভূমি নদী-নালা-খাল-বিলের  সরসতায় উর্বর, প্রকৃতি শ্যামলিমার শীতল ছায়ায় স্নিগ্দ আর বাঙালীর মন প্রেম-প্রীতি-ভালবাসায় পূর্ণ৷ তাই বাঙালী সহজেই অতিথিকে আপন করে নিতে পারে৷ এরই ফলশ্রুতিতে সুদূর অতীতকাল থেকে এই বঙ্গদেশে বিভিন্ন  সময়ে বিভিন্ন শাসকের শাসনাধীন থাকার সময়ে সেই শাসককুল অল্পকালের মধ্যেই বাঙালীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এই দেশকে আপন করে নিয়েছিল, অপরপক্ষে  বাঙালীও তাঁদের  আত্মীয়তার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছিল৷ সংস্কৃতির এই আদান-প্রদানের ফলে  উভয়পক্ষই হয়েছিল উপকৃত৷ শাসককুল নির্বিঘ্নে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পেরেছিল আর বাঙলার মানুষও সুখে-শান্তিতে বসবাস করেছিল৷ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বঙ্গদেশে  অতি অল্প পরিশ্রমেই  অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হয়ে যাওয়ায় বাকী সময়টুকু বাঙলার অধিবাসীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্র্চ ও অধ্যাত্ম সাধনায় ব্যয় করতো৷ তাই প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতায় ছিল সমুন্নত আর সেজন্যেই বাঙলায় বহু জ্ঞানী, গুণী, মনীষী ও আধ্যাত্মিক ব্যষ্টিত্বের আবির্ভাব সম্ভব হয়েছে৷  প্রাকৃতিক পরিবেশের  গুণেই  বাঙলার মানুষের নৈতিকতা, আদর্শনিষ্ঠা, আত্মসচেতনতা ও আত্মমর্যাদাবোধ অতিমাত্রায় বর্ত্তমান৷  এই কারণেই বাঙালীকে  যারা ভালবেসেছে, বাঙালীও তাদের আপন করে নিয়েছে আরও  বেশী ভালবাসার নিগড়ে বেঁধে৷ কিন্তু  কেউ বাঙালীর  আত্মমর্র্যদা বা জাতিসত্বায় আঘাত  করলে তারাও  প্রতিবাদে  গর্জে উঠেছে--- প্রয়োজনে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতেও পিছপা হয়নি৷ বাঙালীর এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকেরা তাদের শাসনকে  নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বাঙালী ঐক্যে ভাঙ্গন ধরাতে  তৎপর হয়ে উঠেছিল৷  ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর মাধ্যমে বণিকের  ছদ্মবেশে এই দেশে প্রবেশ করে বহুবিধ অনৈতিক পথে ব্রিটিশ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল৷ শাসনকার্য পরিচালনার জন্যে একশ্রেণীর কর্মচারীকে  উপহার , উপঢৌকন, উপাধি প্রদান করে নিজেদের বশংবদ গোষ্ঠীতে পরিণত  করেছিল  ও এদের  কাজে লাগিয়ে ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়গতভাবে  বিভেদ সৃষ্টি করে  বাঙালী জাতিকে দুর্বল করতে প্রয়াসী হয়েছিল৷ প্রথমে পাশ্চাত্য শিক্ষায় অর্দ্ধশিক্ষিত করে অল্পসংখ্যক উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাঙালীকে বিচ্ছিন্ন করতে সমর্থ হল৷ পরবর্ত্তী পর্র্যয়ে শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে পাশ্চাত্য -সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বাঙালীর প্রাণধর্মকে  একটু একটু করে নষ্ট করতে লাগল৷ বিশাল বৃহত্তর বাংলার প্রান্তিক অংশ গুলোকে খণ্ডিত করে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে ওই সব রাজ্যের (বিহার, উড়িষ্যা,অসম, উত্তর প্রদেশ, ইত্যাদি) ভাষা সংস্কৃতির মধ্যে বঙ্গ সংস্কৃতির মূল প্রবাহকে হারিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করল৷ এইভাবে বাঙলার মানুষের ওপর অত্যাচার, উৎপীড়ন, শোষণ বিশেষতঃ সাংস্কৃতিক শোষণের পথ সুগম করল৷  এত কান্ডের পরেও বাংলার  যেটুকু  অস্তিত্ব বেঁচে ছিল, স্বাধীনতার  নামে ভারতবর্ষের  পূর্বদিকে বাঙলা দ্বিখণ্ডিত হয়ে পূর্ববাঙলা গেল পাকিস্তানে আর পশ্চিম বাঙলা রইল ভারতে ও  একইভাবে  পাঞ্জাবের পশ্চিমাংশ গেল পাকিস্তানে  আর পূর্র্বংশ  রইল ভারতে৷ দেশভাগের ফলে লক্ষ লক্ষ বাঙালী ও পাঞ্জাবী হল গৃহহীন, সহায়-সম্বলহীন , নিঃস্ব৷  হাজার হাজার , মানুষের  রক্তে ভারতের পূর্ব-পশ্চিমের মাটি হ’ল লালে লাল৷

স্বাধীনতা পরবর্ত্তী ভারতে পঞ্জাবের  উদ্বাস্তুদের  সমস্যার সমাধান  করা হল অতিশয় দ্রুততায় অথচ বাঙালী উদ্বাস্তুদের সমস্যার  যথাযথ সমাধান হল না কোন এক অজ্ঞাত কারণে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিমাতৃসুলভ  আচরণে ও উদাসীনতায় লক্ষ লক্ষ বাঙালী উদ্বাস্তু বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে  লাঞ্ছিত, শোষিত, অত্যাচারিত অবস্থায় দিনাতিপাত করতে বাধ্য হল৷ একদিকে দিল্লীর হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী শাসককুলের  বঞ্চনার  শিকার  হল পশ্চিম বাংলার  মানুষ  আর অন্যদিকে উর্দু সাম্রাজ্যবাদী পাকিস্তানী শাসকবর্গের  বঞ্চনা-শোষণের স্টীমরোলার নেমে এল পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর৷  পূর্বপাকিস্তানীদের মাতৃভাষা বাংলাকে  সরিয়ে উর্দু ভাষা চাপিয়ে  দেওয়ার প্রতিবাদে  পূর্ববাংলার মানুষ দুরন্ত সংগ্রামের  মাধ্যমে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘‘বাংলাদেশ’’ নামক নূতন  রাষ্ট্রের জন্ম দেয়৷ মাতৃভাষার জন্য জীবনপণ  লড়াই-এর  স্বীকৃতি হিসাবে  ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে ‘‘আন্তর্জাতিক  মাতৃভাষা দিবস ’’ রূপে রাষ্ট্রসংঘ  অনুমোদন  করেছে৷ অপরপক্ষে  ভারতের  বাঙালীদের  প্রতি বঞ্চনা  চলেছে সমানতলে৷  শিক্ষা-সংস্কৃতিতে হিন্দী আগ্রসন ক্রমবর্ধমান৷ বিহার,  ঝাড়খণ্ডের  বাঙালীদের  জন্যে  বাংলাভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ সংকুচিত হতে হতে বর্তমানে  প্রায় নেই বললেই চলে৷ এই সব অঞ্চলের অধিকাংশ বাঙালীই মাতৃভাষা বাংলা ক্রমশঃ ভুলতে বসেছেন৷ অসম-ত্রিপুরা-মেঘালয়-ইত্যাদি স্থানেও একই চিত্র৷ পক্ষান্তরে অসমের অধিকাংশ অধিবাসীর মাতৃভাষা বাংলা হলেও  জোর করে  জনগণনার সময়  তাঁদের মাতৃভাষা ‘‘অসম’’ উল্লেখ করে অসমীয়া জনসংখ্যা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন সময় ‘বাঙালী খেদা’ও অভিযানের মাধ্যমে বাঙালী বিতাড়ন হয়েছে৷ বাঙালীদের ডি-বোটার বা সন্দেহজনক বোটার হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ অসমের সর্বশেষ প্রচেষ্টা এন.আর.সি বা জাতীয়  নাগরিকপঞ্জী তৈরীর নামে লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে নাগরিকত্বহীন করে ‘ডিটেনশন’ ক্যাম্পে চালান করে দেবার জন্যে সর্বশেষ যে খসরা ‘জাতীয় নাগরিকপঞ্জী’ প্রকাশিত হয়েছে  তাতে  প্রায় ১ কোটি ৩৯ লক্ষ বাঙালীর নামই নেই৷ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে--- পরে আরও নাম এন.আর.সি-র তালিকাভুক্ত করা হবে৷ কিন্তু সেই তালিকাগুলিতেও যদি  নাম না থাকে তবে লক্ষ লক্ষ বাঙালী সব হারিয়ে ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হবে ও এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, তাই বাঙালী আজ স্বভূমে পরবাসী৷ বাঙালীর মুখের ভাষা, থাকার ঘরবাড়ী-মাটি, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-প্রাণধর্ম আজ বিপন্ন ৷ বাঙালী আজ নিজের ভাষা হারিয়ে, শিক্ষা-সংস্কৃতি ভুলে অন্যভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে সমঝোতা করে এক ভাসমান গোষ্ঠীতে পরিণত৷ স্বাধীনোত্তর ভারতের বাঙালীর স্বভূমিরূপে চিহ্ণিত পশ্চিমবাঙলার বাঙালীরাও বহুবিধ বঞ্চনার শিকার৷ প্রথমতঃ অধিকাংশ  সময় কেন্দ্র ও রাজ্যে ভিন্ন দলের ও মতের  সরকার  থাকার কারণে সমন্বয় হীনতা  ও অসহযোগিতার বাতাবরণ সর্বদাই বিদ্যমান৷ পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ বরাবরের আর এই অভিযোগের যথেষ্ট সারবত্তা রয়েছে৷ কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে  বাংলার শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতিতে হিন্দি আগ্রাসন৷ এছাড়াও বাংলা মাধ্যমের বিদ্যায়তনগুলি ব্যতীত সর্বভারতীয় বিভিন্ন বোর্ডের শিক্ষাক্রমে  বাংলাভাষা শিক্ষার উপর গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে ওইসব বোর্ড অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলিতে বাঙালী ছাত্র-ছাত্রা বাঙলা ভাষার গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের আরও বেশী সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন৷  বাঙালী ছাত্র-ছাত্রাদের অভিভাবকগণও বাঙলা মাধ্যমের বিদ্যালয় অপেক্ষা ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়গুলির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন৷ অত্যধিক ব্যয়বহুল হলেও  ছাত্র-ছাত্রাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার কারণে তাঁরা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলির ক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যমে প্রশ্ণ-উত্তর ও পঠনপাঠনের সুযোগ থাকলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না৷ এরজন্যে কেন্দ্রীয় নীতি ও উদাসীনতাই দায়ী৷ এইভাবে জীবনের প্রারম্ভের শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মস্থলের সুযোগ সুবিধা পর্যন্ত বাঙালীর মুখের ভাষাকে দমিয়ে রাখার ফলে প্রাণশক্তিরও পরিপূর্ণ প্রকাশ হতে পারে না৷ পক্ষান্তরে সেই প্রাণশক্তি ক্রমশঃ নিস্তেজ হতে থাকে৷ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন শুধুমাত্র শিক্ষা-ভাষা-সংস্কৃতির অঙ্গনেই থেমে থাকেনি৷

পশ্চিমবঙ্গকে পরিকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করে  এই  বাঙালী জাতিকেই নিশ্চিহ্ণ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলেছে ধারবাহিকভাবে৷ এমনকি  পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার অধিকাংশ মাটি আজ অবাঙালীদের কুক্ষিগত, শিক্ষাঙ্গন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিও অধিকাংশক্ষেত্রে অবাঙ্গালীদের দ্বারাই  পরিচালিত৷ বাঙালীর ভবিষ্যতের ভিত ইতিমধ্যেই যথেষ্ট নরবড়ে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে৷ এমতাবস্থায় বাঙালীজাতিকে একমাত্র বাঙালীরাই রক্ষা করতে পারে৷ এখনো গয়ংগচ্ছভাব নিয়ে চললে অদূরভবিষ্যতে পান চিবোতে চিবোতে অফিস-কাছারী করা যাবে কি না এ বিষয়ে  যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে৷ মাতৃক্রোড়ে শিশু প্রথম যে ভাষা শোনে ও শেখে তাই তার মাতৃভাষা৷ মাতৃভাষা মাতৃদুগ্দসম৷ এই মাতৃভাষাই যখন অবদমিত হয় তখন প্রাণরস ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে ও ক্রমশঃ সেই জাতি  ধবংসের দিকে এগিয়ে  যায়৷ তাই বাঙালীকে তার মাতৃভাষা, মাতৃভূমি ও জাতিসত্বাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আরও সচেতন  হতেই হবে৷  প্রয়োজনে  সব দেশের বাঙালীকে একত্রিত হয়ে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতেই হবে৷ বঙ্গভূমিকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত  করার লক্ষ্যে  তীব্র আন্দোলন গড়ে  তুলতে  হবে৷ তাই  আসুন আজ বিশ্বের সব বাঙালী একসুরে সদর্পে বলি--- আমি বাঙালী, আমরা বাঙালী, আমরা বাঙলাকে ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি৷