বাঙলা কখনো গো-বলয় হবে না

লেখক
এইচ. এন. মাহাতো

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘বড় মাছ ছোট মাছকে খায়’৷ অন্যদিকে আবার দেখেছি বড় গাছের নীচে কোন ছোট গাছ জন্মালেও বাঁচতে পারে না৷

রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা আকচার এসব দেখতে অভস্ত্য৷ প্রথমে বাঙলা থেকেই শুরু করা যাক৷ স্বাধীনতার পর আমরা কংগ্রেস, সিপিআই, ফরোয়ার্ড ব্লক, আর এস পি, জনতা পার্টি এছাড়াও আরো কয়েকটি দল নির্বাচনে প্রথম অংশ গ্রহণ করেছিলো৷ পরবর্তীতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট তৈরী হয়৷ সিপিআই ভেঙ্গে সিপিএমের নেতৃত্বে৷ মাকর্সবাদী ফরোয়ার্ড ব্লক, আর.এসপি, আরসিপিআই নক্সালের অনেকগুলো গ্রুপ, এস ইউ সি আই বাংলা কংগ্রেস, জনতা পার্টি, সোসালিষ্ট পার্টি আরো কয়েকটি দল নিয়ে৷ কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলো সিপিআই৷ এই দলগুলোর কোন সুনির্দিষ্ট আদর্শ না থাকার জন্য ও নেতৃত্বের সংঘাতে যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যায়৷ সিপিএম নেতৃত্বের দূরভিসন্ধি মূলক আচরণের জন্য ও ধীরে ধীরে  ছোট ছোট দলগুলোকে বড় দলগুলো গ্রাস করে নেওয়ার ফলে যুক্তফ্রন্ট অবলুপ্ত হয়ে যায়৷

এরপর তৈরী হয় বামফ্রন্ট---ফরোয়ার্ড ব্লক, আর.এস.পি, সিপিএম পরবর্তীতে সিপিআই কংগ্রেস ছেড়ে ফ্রন্টে যুক্ত হয়৷

এক সময় বাঙলার চা বাগানে ট্রড ইউনিয়ন বলতে ছিলো আর এসপির দখলে ও বাঙলার কৃষি অঞ্চল--- যেমন বীরভূম, বর্দ্ধমান, কোচবিহার, পুরুলিয়ার অঞ্চল গুলো ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে৷ সিপিএমের কুটচাল ও শরিকি দলের লড়াই-এর ফলে সিপিএমের সঙ্গে টিকে উঠতে না পেরে এই দলগুলি অস্তিত্বের সঙ্কটের পড়ে যায়৷ এই মুহূর্তে সাইনবোর্ড সর্বস্ব দলে পরিণত হয়ে আছে৷ তৃণমূল সরকারের চাপে সিপিএমও আজ অস্তিত্ব রক্ষা করতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে৷

সারা ভারতে ইন্দিরা গান্ধীকে (কংগ্রেস)  হারাতে জয়প্রকাশের  নেতৃত্বে জনতা দল  তৈরী হলে জনসংঘ সই বেশ কয়েকটি দল তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে জনতা দলের সঙ্গে  মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়৷ সব কয়েকটি দলের স্বার্থ ছিলো একটাই তাহা হলো ইন্দিরা গান্ধীকে  হারানো৷ দেশের নাগরিকদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা তাদের মাথায় ছিলো না৷

সেই সময়ে জনতা সরকারের নীতির নেতৃত্বের লড়াইয়ে  বারবার  প্রধানমন্ত্রী পদে পরিবর্তন করা হলেও স্থায়ী সরকার দেখা যায় নি৷ তখন জনতা দল ভেঙে পূর্বতন জনসংঘ সহ আরো কয়েকটি ছোটো ছোটো দলকে নিয়ে ভারতে একটি নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটল--- ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি৷ এদের অর্থের প্রাচুর্য থাকার জন্য  ছোটো ছোটো দলকে  অর্থের বিনিময়ে  গ্রাস করে নিলো৷ বিজেপি অস্তিত্বের লড়াইয়ের পিছিয়ে থাকায় বিভিন্ন রাজ্যের স্থানীয় আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এন.ডি.এ নামে যৌথ মঞ্চ গড়ে সারা ভারতে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে৷ বিশেষত গো-বলয়ে তাদের আধিপত্য টাকার বিনিময় চরম শিখরে  পৌঁছাতে ধর্মীয় মতবাদের আবেগ ও রাম মন্দিরের  ইসুকে বারবার  ব্যবহার করে  তারা  আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে৷ এরজন্য ভারতের অনেকগুলি ছোটো ছোটো দলকে  রাজনৈতিক জীবন থেকে শেষ করে দিয়েছে৷

এবার বিহারের নীতিশ কুমারের অবস্থা দেখলে সব কিছু  বোঝা যাবে৷ গতবারের চেয়ে নীতিশকে হারতে হয় অনেক কটি আসন শুধুমাত্র জোট ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে৷ বিজেপির একটাই মূলমন্ত্র গদী চাই৷ তারজন্য ছোট দলের অস্তিত্ব  থাকুক বা শেষ হয়ে যাক তা তাদের চিন্তার মধ্যে পড়ে না৷

নীতিশের উচিতের ছিল পার্টি রক্ষার স্বার্থে জোট থেকে বেরিয়ে আসা৷ নচেৎ বাংলা কংগ্রেস দলের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট তৈরী হওয়ায়  পরও আজ এই দলটির কোন অস্তিত্বই নেই৷

বিজেপির সারা দেশে অবস্থান একবার দেখলেই বোঝা যাবে--- সারা দেশের  মধ্যে দশটি রাজ্যে বিজেপির সুস্পষ্ট সংখ্যা গরিষ্ঠতা রয়েছে৷ অন্যদিকে বিজেপিতে আছে---সিকিমের শূন্যটি আসন মিজোরামের শূন্যটি আসন৷ তামিলনাড়ুতে শূন্যটি আসন, অন্ধ্রপ্রদেশে ৪জন, কেরালায় ১জন, পাঞ্জাবে ৩ জন, বাঙলায় ৩জন, তেলেঙ্গানায় ৫ জন, দিল্লীতে ৪ জন, ওড়িশায় ১০ জন, নাগাল্যাণ্ডে ১১ জন এম এল.এ৷ রাজ্য সরকারে আছে মেঘালয়ে ২ জন, ত্রিপুরায় ৩৫ জন, বিহারে ৭৪ জন, জে/কের ২৫ জন, গোয়ার ১৩ জন এম.এল.এ  আসন রয়েছে৷ মোট ১৫৯ টি এম.এল.এর আসন গো-বলয় ছাড়া৷ গোবলয়ে রয়েছে ৯৫০ টি আসন৷ বর্তমান কয়েকটি রাজ্যে অন্তবর্তী নির্বাচনে কয়েকটি এম.এল.এ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ভারতের মোট এম.এল.এ আসন সংখ্যা ৪৩৯৯ টি৷ বিজেপি যতই ঝড়ের কথা বলুক না কেন বাঙালী বা বাঙলার মাটি কখনোই গো-বলয় তৈরী হবে না৷