বাঙলা প্রেমের আড়ালে এরা কারা?

লেখক
মনোজ দেব

উটকো বাঙালী সংঘটনের নামে নৈহাটীতে একটি অবাঙালী যুবকের সঙ্গে যে আচরণ হয়েছে তা কোনমতেই সমর্থনযোগ্য নয়৷ কিন্তু এই আচরণের যাঁরা বিরুদ্ধাচারণ করছে তাদেরও বাঙালী প্রেম কতটা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে৷ এরা কারা? এই দু’পক্ষের লোকেদের আচরণই সন্দেহজনক৷ সন্দেহ হয় এই পক্ষবিপক্ষ একই পক্ষ নয়তো? হয়তো এরা দু’পক্ষই বাঙালী আবেগকে বিপথে চালিত করতে চায় বা প্রকৃত বাঙালী চেতনাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে এহ পক্ষ-বিপক্ষের নাটক৷ নৈহাটীতে অনুষ্ঠিত পক্ষপন্থীরা বাঙলা প্রেমের নামে একটি বিশেষ দলের বিরুদ্ধাচরণ করছে ও এর পেছনে রাজ্যের শাসক দলের প্রচ্ছন্ন মদত আছে৷

সোজা কথা স্পষ্ট করে বললে---বাঙলা পক্ষ বাঙলার পক্ষে নয়৷ বিজেপির বিপক্ষে৷ এর ভিতরেও অনেক রঙ্গরস আছে৷ কে কতটা কার বিপক্ষে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে মাঝে মাঝে ব্যাঙ্ক প্রভৃতি অফিসে, কখনো রেল ষ্টেশনে প্রভৃতি জায়গায় এদের হিন্দী বিরোধী নাটক মঞ্চস্থ হয়৷ কিন্তু রাজ্যে যখন হিন্দী বিশ্ববিদ্যালয় হয়, শনির ছট্ পূজোয় সোমবারও ছুটি ঘোষণা করা হয় তখন কিন্তু এই পক্ষরা নীরবই থাকে৷ সন্দেহটা এখানেই৷ এদের উদ্দেশ্য কী? প্রকৃত বাঙালী আন্দোলনকে ধবংস করাই এদের লক্ষ্য৷ এরাজ্যে বাঙলা পক্ষের হঠাৎ উদয় বিশেষ একটা লক্ষ্য নিয়ে৷ সেটা যতটা না বাঙলার ভাল তার চেয়ে অনেক বেশী দলীয় স্বার্থ লুকিয়ে আছে৷ বাঙলার ভাল নয়, সেই দলীয় স্বার্থসিদ্ধি করাই এদের লক্ষ্য৷

নৈহাটীর ওই হিন্দী ভাষী ছেলেটি নিশ্চয়ই গর্হিত অন্যায় করেছে৷  সোস্যাল মিডিয়ায় যেভাবে একটি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচার করছিল তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়, তাকে প্রশ্রয় দেওয়ারও প্রশ্ণ ওঠে না৷ কিন্তু বাঙলা পক্ষ যেভাবে প্রতিবাদ করেছে সেটাও বাঙলার সংস্কৃতি নয়৷ এটা গো-বলয় থেকে আমদানি করা সংস্কৃতি৷ সমস্যা এই ছেলেটি নয়, সমস্যা গো-বলয়ের আমদানি করা এই সংস্কৃতি৷ যার প্রভাবে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি বিকৃত রূপ পাচ্ছে৷ সঙ্গে লক্ষ লক্ষ অবাঙালী অনুপ্রবেশ ও হিন্দী ভাষা রমরমিয়ে চালু করার পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও আছে৷ সে উদ্দেশ্য বাঙলাকে বঙ্গাল বানানো৷ ইতিমধ্যেই কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ভিন রাজ্য থেকে আসা ওই সব অবাঙারলীরা জাঁকিয়ে বসেছে৷ কেন্দ্রের শাসক দলের প্রচ্ছন্ন মদতে এসব হচ্ছে৷ রাজ্য সরকারও হিন্দী বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ছট পূজোয় অহেতুক ছুটি দিয়ে সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে এদের তোষণ করছে৷ অর্থাৎ কেন্দ্র অবাঙালী অনুপ্রবেশ করাচ্ছে, রাজ্য সরকারের দয়া দাক্ষিণ্যে এরা পালিত হচ্ছে৷ ফলে বাঙলায় বাঙালী বিপন্ন হয়ে পড়ছে৷

হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বাঙালী প্রেমী পক্ষ-বিপক্ষরা বাঙলার এই বিপন্নতার বিরুদ্ধে কোন কথা বলে না৷ এমনকি এন আর সি-র অজুহাতে বাঙালীকে রাষ্ট্রহীন করার চক্রান্তের বিরুদ্ধেও এরা কোন কথা বলে না৷ তাই মনে হয় এই সব ভুঁইফোঁড় বাঙলা প্রেমীরা বিশেষ বিশেষ দলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে৷ বাঙলা প্রেম এদের মুখোশ মাত্র৷

 বাঙালীর বাঁচার অধিকার ও বাঙালী জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে এ রাজ্যে ‘আমরা বাঙালী’ নামের একটি সংঘটন দীর্ঘদিন আন্দোলন করছে৷ আদর্শগতভাবে কোন ভাষা ও জনগোষ্ঠীর তারা বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু কোন ভাষা ও জনগোষ্ঠী যদি অন্য কোন ভাষা ও জনগোষ্ঠীর ওপর জোর পূর্বক চেপে বসে, তার ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতিকে ধবংস করার চেষ্টা করে তবে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে৷ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দী ভাষা ও হিন্দী ভাষী  জনগোষ্ঠী যে হারে অনুপ্রবেশ করছে তা যদি অবিলম্বে রোখা না যায় তবে অচিরেই বাঙালী জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে৷ হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বাঙলাপ্রেমীরা এসব নিয়ে চিন্তা করছে না৷ একমাত্র আমরা বাঙালী সংঘটনই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে৷ হঠাৎ গজিয়ে ওঠা পক্ষরা বাঙালী চেতনাকে বিপথে ঠেলে দিয়ে হিন্দী ভাষা ও ভাষীদের অনুপ্রবেশকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, আর বাঙলা প্রেমের নাটক করছে৷ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বাঙালীকে এই সম্পর্কে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷ নৈহাটীর ঘটনা এক অশনী সংকেত৷ ভিন্ রাজ্যের অসংস্কৃতি এদের হাত ধরেই বাঙলায় প্রবেশ করছে যা বাঙালীকে বিনাশের পথে নিয়ে যাবে৷