আজ যদি বিদ্যাসাগর বেঁচে থাকতেন তাহলে তাঁর বয়স হ’ত ২০০ বছর৷ এখন সেপ্ঢেম্বর মাস৷ বিদ্যাসাগরের জন্ম মাস৷ আমরা বঙ্গবাসীরা উঠে পড়ে লেগেছি বিদ্যাসাগরের জন্ম-দ্বিশতবর্ষ উদ্যাপনে৷ ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার একটি কমিটি গঠন করে বর্ষব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছেন৷ গ্রাম থেকে মফঃস্বল, শহর এমনকি মহানগর সর্বত্রই বিদ্যাসাগর বন্দনা চলছে৷ পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও বাকী নেই বিদ্যাসাগর বিষয়ক আলাপ আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের৷
এতদূর পড়ে’ আপনার মনে হচ্ছে, যা হচ্ছে খুবই ভালো হচ্ছে, এমনটাই তো হওয়া উচিত৷ কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার এই বিষয়টি মোটেও ভাল লাগছে না৷ কারণ এই যে, হুজুগপ্রিয় বাঙালীর সব কিছুতেই সশব্দে জানান দেওয়া যে সে কিছু করছে৷ আমরা যে পরিমাণ উৎসাহ নিয়ে পালন করি, সেই পরিমাণ উৎসাহ নিয়ে কি মনন করি? যদি পালন করার সাথে সাথে বিদ্যাসাগরের আদর্শকে লালন করতে পারি তবেই আমরা প্রকৃত উত্তরাধিকারের মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারব৷ বিদ্যাসাগর নামক ঐতিহ্যকে বহন করতে গেলে আগে আমাদের জড়বুদ্ধি সর্বস্ব সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে হবে৷ লোক দেখানো মানব দরদীর মুখোশ খুলে আমাদের পবিত্র দেহ ও মনের অধিকারী হতে হবে৷ নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করার জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে৷ আমার কাছে বিদ্যাসাগর মানে গদ্যশিল্পী বিদ্যাসাগর নয়, শিক্ষাব্রতী বিদ্যাসাগর নয়, সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগর নয়, নারীমুক্তির কাণ্ডারী বিদ্যাসাগরও নন---আমার কাছে বিদ্যাসাগর মানে আর্তজনের দোসর , আমার কাছে বিদ্যাসাগর মানে অসহায়, নিপীড়িত সর্বহারা মানুষকে বুকে টেনে নেন যে বিদ্যাসাগর, সেই বিদ্যাসাগরকে আমার সহস্র কোটি প্রণাম৷
- Log in to post comments