ধর্ম ও বিজ্ঞান এর মধ্যে প্রভেদ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা আমরা করে থাকি৷ প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও ধর্মের মূল সুর একই ৷ উভয়ক্ষেত্রের সাধকেরাই সৃষ্টির আসল সত্য অসীমকে জানতে চায়, তাতেই পৌঁছুতে চায়৷ অন্তরের বাসনা উভয়েরই এক৷ অসীমের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে উভয়েই অসীমে পৌঁছানোর লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যান৷ প্রভেদ থাকছে কেবল দৃষ্টিভঙ্গির-মধ্যে একজন ধর্মসাধক তাঁর মানস গবেষণাগারেPsychic Laboratory) তে অসীমে উপনীত হবার লক্ষ্যে নিষ্ঠাসম্মত অনুশীলন চালিয়ে যান সাধনা সেবা ও ত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছে যান৷ অন্যদিকে একজন বিজ্ঞান সাধক মনের গবেষণাগারের পরিবর্তে জাগতিক গবেষণাগারে অসীম সত্তাকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যান৷ ব্যর্থতা কোথায়? আধুনিক জড় বিজ্ঞান জাগতিক বিভিন্ন পরিমন্ডলে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে মানবজাতিকে অগণিত বিস্ময়কর উপহার প্রদান করেছেন৷ উন্নত মহাকাশযান কৃত্রিম উপগ্রহে চাষাআবাদ থেকে টেস্টটিউব বেবী প্রভৃতি আবিষ্কারে জড়বিজ্ঞান নি:সন্দেহে সফল৷ কিন্তু যে সত্তা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যই নয়, তাঁকে পাঞ্চভৌতিক গবেষণাগারে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা মাত্রেই যে নিষ্ফল হবে তা বলাই বাহুল্য৷ তাই অসীম ইন্দ্রিয়াতীত সত্তা বিজ্ঞানীদের গবেষণাগারে অধরাই থেকে যাচ্ছে৷ তবে আগামীদিনে মনোবিজ্ঞান এর সম্প্রসারণের মধ্যদিয়ে জড় বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও নিশ্চয়ই পরিবর্তন আসবে৷ সেদিন জড়বিজ্ঞান ও ধর্মবিজ্ঞানের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সমাজজীবনে আসবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন৷
একটু আলোচনায় আসি বর্তমানে জড়বিজ্ঞানী ও ধর্মবিজ্ঞানীদের ধারণা সম্পর্কে৷ জড়বিজ্ঞানীরা সাধারণত সৃষ্টির আদি উৎস ‘অসীম ’ বলতে শক্তিকণাকেই বুঝিয়েছেন৷ তাঁদের মতে এই শক্তিকণাEnergy) হল অবিনশ্বর সত্তা বিশেষ যার সৃষ্টি বা বিনাশ নেই ইহা কেবল একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয় মাত্র৷ তাঁদের মতে এই সূক্ষ্ম শক্তিকণাই সৃষ্টির মূল উপাদান তথা সৃষ্টির আদি উৎস৷ প্রকৃতির নিয়মেই সূক্ষ্ম শক্তিকণাই ঘনীভূত হতে হতে স্থূল বস্তুজগতের বস্তুকণার রূপ নেয়৷ এই জড় বস্তুকণারMatter) ক্ষুদ্ররূপকে অথবা অ্যাটমকে বা পরমাণু বলে থাকি৷ এই পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস,যা কোয়ার্ক সহ আরো অনেকগুলি মৌলিক উপাদান নিয়ে গঠিত ও এর চারিদিকে থাকে শক্তিশালী ইলেকট্রন কণা৷ এইগুলি অফুরন্ত শক্তির ভান্ডার৷সোজা কথায় জড় বস্তুকণার মধ্যেই শক্তিকণা নিমজ্জিত থাকছে৷ তাই জড়বস্তু বিভাজিতহতে হতে শক্তিকণাতেই পুনরায় ফিরে যায়৷ বস্তুকণা আমাদের কাছে দৃশ্যমান তাই ইহা ‘স্থূল’ কিন্তু শক্তিকণা আমাদের কাছে অদৃশ্য ৷ তাই ইহা সূক্ষ্ম৷ তবে শক্তিকণা আমাদের কাছে অদৃশ্য হলেও ইন্দ্রিয়াতীত নয়---তা অবশ্যই ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য অর্র্থৎ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা উপলব্ধ, অনুভব্য৷ যেমন বিদ্যুৎ শক্তিকে আমরা দেখতে পাই না কিন্তু তার প্রভাবে পাখা ঘুরে আলো জ্বলে, ডায়নামোর ইঞ্জিন চলে প্রভৃতি আমাদের ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুভব করে থাকি, উপলব্ধি করে থাকি৷ (ক্রমশঃ)
- Log in to post comments