প্রাউটের যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মেসিনারি, তা মুখ্যতঃ কাজ করবে কেন্দ্রীয় স্তরে, রাজ্য স্তরে, জেলা স্তরে ও ব্লক স্তরে (অবশ্য ওয়ার্লড গব্ণমেন্ট প্রতিষ্ঠার পরে গ্লোব্যাল স্তরেও এই পরিকল্পনা মেসিনারী কাজ করবে)৷ ব্লক স্তরে যে পরিকল্পনা মেসিনারি কাজ করবে, প্রাউটের অর্থনীতিতে তাই হবে সর্বনিম্ন পরিকল্পনা সংস্থা৷ অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্যে পরিকল্পনাকে নীচের থেকে ওপরের দিকে নিয়ে যেতে হবে৷ সেটাই হচ্ছে নীতি৷২ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে হতে হবে ব্লক ভিত্তিক৷৭
প্রাউট অর্থনীতির কাঠামোয় প্রতিটি ব্লকের জন্যে পৃথক পৃথক উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকবে৷ তবে সেক্ষেত্রে সেই সংশ্লিষ্ট ব্লকটিকে ওই অর্থনৈতিক এলাকার (Economic Zone) উন্নয়ন পরিকল্পনার সর্েবাচ্চ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতে হবে৷
সাংবিধানিক স্বীকৃতি ঃ প্রাউট অর্থনীতিতে ব্লকস্তরীয় পরিকল্পনা সংস্থাগুলিকে সংবিধানগত স্বীকৃতি দেওয়া হবে৷
ব্লকের সীমানার পুনর্বিন্যাস ঃ আজকাল যেভাবে ব্লকগুলির সীমানা নির্ধারিত হয় তা অনেকটা রাজনৈতিক বিচার–বিবেচনার ভিত্তিতে৷ প্রাউট এধরণের রাজনৈতিক খেয়াল–খুসীমত সীমানা–নির্ধারণ–নীত্ সমর্থন করে না৷২ কোন একটা ব্লকের একাংশের কৃষি–জমি যদি উর্বর হয় ও অপরাংশ অনুর্বর হয়, ও পাশের ব্লকের জমি হয় উর্বর তাহলে পাশাপাশি দুটি ব্লকের সীমানাকে এমনভাবে পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে যাতে উভয় ব্লকের সমস্ত অনুর্বর জমিই এক ব্লক–ভুক্ত হয়৷ এতে সুবিধা হবে এই যে, একসঙ্গে সমস্ত অনুর্বর জমিটার জন্যে একটা যৌথ পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে৷৭ প্রাউটের বক্তব্য হ’ল, কয়েকটি নির্দিষ্ট তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্লকগুলির সীমানা নির্ধারিত করতে হবে–
(১) সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূপ্রকৃতি (নদী–উপত্যকার কথাও মনে রাখতে হবে)৷
(২) জলবায়ুগত অবস্থা (Varying climatic condition)৷
(৩) জমির ঢ়াল (Topography)৷
(৪) স্থানীয় মৃত্তিকার প্রকৃতি ত্ত্ব্ত্রব্ধব্ভব্জন্দ্ব (Nature of soil)৷
(৫) সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও সমস্যা৷
(৬) সেখানকার পশু–পক্ষী ও উদ্ভিদের কথা৷
(৭) সেখানকার মানুষের শারীরিক, মানসিক আশা–আকাঙক্ষার কথা৷
সুষ্ঠু বিকেন্দ্রীকৃত অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এই বৈজ্ঞানিক ও বিধিসম্মত ব্লক সীমানা নির্ধারণই ভিত্তি হিসেবে নেওয়া উচিত৷
ইণ্ট্রা ও ইণ্টার ব্লক পরিকল্পনা
যখন বিশেষ কোন একটা নির্দিষ্ট ব্লকের সর্বাত্মক বিকাশের জন্যে পরিকল্পনাসূচী তৈরী করা যায়, তাকে বলা হয় আন্তর্ৰ্লক পরিকল্পনা (Intra-block planning)৷ আবার একটি ব্লকেরই এমন অনেক সমস্যা থাকতে পারে যার সমাধান ওই সংশ্লিষ্ট ব্লকটির হাতে নেই–যেমন, বন্যা–নিয়ন্ত্রণ, নদী–উপত্যকা পরিকল্পনা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, উচ্চতর শিক্ষা–প্রতিষ্ঠান, বন–রচনা, আর্থিক উন্নতির পরিবেশগত প্রভাব, বড়বড় শিল্পের স্থাপনা, ভূমিক্ষয় রোধ, জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সুপরিচালিত বাজার, ইত্যাদি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান কোন একটি ব্লক নিশ্চয় পারবে না৷ তাই ইণ্টার ব্লক (Inter-block planning) পরিকল্পনা অবশ্যই দরকার৷ এ পরিকল্পনা হ’ল সুনির্বাচিত কয়েকটি ক্ষেত্রে এমন এক উদ্যোগ যার দ্বারা পাশাপাশি কয়েকটি ব্লকের পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্লকগুলির যৌথ উন্নয়ন ঘটানো যায়৷ ব্লক–স্তরীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সুফল ঃ ব্লক–স্তরীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে নানান সুফল পাওয়া যাবে৷ যেমন, যে ব্লকের জন্যে উন্নয়ন–পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে তার ভৌগলিক আয়তন অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র হওয়ায় পরিকল্পনা প্রণেতারা সংশ্লিষ্ট ব্লকটির ছোট–বড় সব সমস্যার কথাই জানতে পারছেন, স্থানীয় নেতারা এলাকাটির জরুরী সমস্যা সমাধানকল্পে এগিয়ে আসতে পারবেন সুদূর রাজধানী শহরের শীততাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে নয়, একেবারে সংশ্লিষ্ট ব্লকটির কঠোর মাটিতে বসে উন্নয়ন–পরিকল্পনা ছক তৈরী হবে বলে’ সে পরিকল্পনা অধিক বাস্তবোচিত ও ফলপ্রদ হতে বাধ্য, ও শীঘ্র তার সুফলও পাওয়া যাবে৷ স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পর্ষদগুলিও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনবল ও বস্তুসম্পদকে কাজে লাগাবার সুযোগ পাবে, স্থানীয় বেকার সমস্যার সহজেই সমাধানের সুযোগ আসবে৷ গ্রাম্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, আর সুসন্তুলিত অর্থনীতির একটা মজবুৎ বুনিয়াদ তৈরী হবে৷ যে ধরণের ব্লক–উন্নয়ন–প্রক কথা বলা হ’ল সেই ধরণের পরিকল্পনা রচিত হলে একটা সুসন্তুলিত অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে’ উঠবেই, সমাজের প্রতিটি সদস্যের আর্থিক নিরাপত্তা আসবেই, কেননা তার দ্বারা মানুষের (খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, চিকিৎসা ও শিক্ষার মত) মৌলিক চাহিদাগুলির পূরণ করা সম্ভব হবে৷ এতে সমাজে একটা উপযুক্ত ভারসাম্য ও স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটা সুষ্ঠু সামঞ্জস্য আসবে৷ কৃষি, শিল্প, ব্যবসা–বাণিজ্য–সব ক্ষেত্রেই একটা প্রমার অনুকূল পরিবেশ তৈরী হবে৷ অর্থনীতির প্রতিটি উপস্তরে ও আন্ত–উপস্তরীয় ক্ষেত্রেও প্রমা প্রতিষ্ঠিত হবে৷
ভৌতিক ক্ষেত্রে প্রমা প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে চারিটি তত্ত্বের কথা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে–
(১) বর্ত্তমান কালের ভৌতিক চাহিদা ও নিকট ভবিষ্যতের ভৌতিক চাহিদা
(২) বর্ত্তমান কালের ভৌতিক যোগান ও নিকট ভবিষ্যতের ভৌতিক যোগান
(৩) ভূমির সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ
(৪) প্রাউটের পঞ্চ–মৌল সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের সমস্যার সমাধান৷
উপরি–উক্ত চারটি তত্ত্বের যেখানে ঠিক ঠিক প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেখানে ধরে’ নিতে হবে যে ভৌতিক স্তরে প্রমা–সংবৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তারপর থেকে মানুষ মানসিক স্তরে প্রমা–ঋদ্ধি ও আধ্যাত্মিক স্তরে প্রমা–সিদ্ধির জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে৷