বুদ্ধের দ্বিবাচিক উপাসক

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

এ বিশ্বের যা কিছু স্থূল বা সূক্ষ্ম, বাহ্যিক বা মানসিক সবই অনিত্য অশাশ্বত৷  অনিত্য বা অশাশ্বতকে নিত্য বা শাশ্বত বলে মনে করাই অবিদ্যা৷ অবিদ্যাই সকলের                  দুঃখের মূল৷ কারণ অবিদ্যা মানেই অন্ধকার৷ জ্ঞানের আলোয় অবিদ্যার নামই নির্বাণ৷ বুদ্ধদেবের মন সত্যের আলোয় উদভাসিত হলো৷  ৫২৮ খ্রীষ্ট পূর্র্বব্দে বৈশাখী পূর্ণিমার দিন নিরঞ্জনা নদীর তীরে অশ্বত্থ গাছের তলায় এই আলোর সন্ধান পেলেন তিনি৷

বোধিবৃক্ষের নীচে সাধনার দ্বারা বুদ্ধত্ব লাভের পর বুদ্ধদেব একটি বটগাছের তলায় এসে বসলেন৷ সাতদিন এই বটগাছের  নীচে বুদ্ধদেব ধ্যান করলেন৷ এই গাছকে বলা হতো অজপাল বটগাছ৷ সাতদিন তপস্যার  পর এই অজপাল  বটগাছও তিনি ত্যাগ করলেন৷ এরপর মুচলিন্দ ও রাজায়তন গাছের তলায় আরো এক সপ্তাহ করে ধ্যান করলেন৷ প্রবল বৃষ্টিপাতেও তাঁর ধ্যান ভাঙেনি৷ কথিত আছে সেই সময় একটি প্রকাণ্ড সাপ তাঁর মাথার ওপর কণা বিস্তার করে বৃষ্টিপাত নিবারণ করেছিল৷ এইভাবে ধ্যানমগ্ণ অবস্থায় কাটলো সাতদিন৷ বলাবাহুল্য, এই দুসপ্তাহ ধ্যানমগ্ণ অবস্থায় তিনি কিছুই আহার করলেন না৷ ধ্যানভাঙার  পর তাঁর ক্ষুধার  অনুভূতি হলো৷  আর ঠিক  সেইসময়  সেই পথ দিয়ে উৎকলের দুজন বণিক৷ ---তপসু আর ভল্লিক মালপত্র বোঝাই করে শকটে চেপে যাচ্ছিলেন৷ হঠাৎ বুদ্ধের দিকে  দৃষ্টি পড়তেই তাদের কেমন যেন ভাবান্তর  হলো৷ এমন জ্যোতির্ময় পুরুষ তারা এর আগে কখনো দেখেনি৷ চোখে মুখে সাধনার  প্রশান্তি অঙ্গে অঙ্গে যোগ-বিভূতি৷ এ এক অপার্থিব সৌন্দর্য৷ বণিকদ্বয় অভিভূত হয়ে পড়লেন৷ তারা তৎক্ষণাৎ বুদ্ধের কাছে ছুটে গেলেন৷ বললেন, ভগবান, আমরা  তোমার শরণ নিলাম৷ এইবলে বণিকদ্বয় বুদ্ধকে ছাতু ও মধুপিণ্ড দান করলেন৷ তৃপ্তি সহকারে৷ বুদ্ধ লাভের পর এটাই তাঁর প্রথম আহার৷

বৌদ্ধদের মধ্যে এই বণিকদ্বয় দ্বিবাচিক উপাসক’’ নামে খ্যাত৷ যেহেতু তখনো শঙ্খের জন্ম হয়নি তাই তারা বুদ্ধ, ধর্ম ও সঙ্ঘ---এই তিন শরনের পরিবর্তে বুদ্ধ ও ধর্ম---এই দ্বিশরণ গ্রহণ করেছিলেন৷ তাই তারা দ্বিবাচিক উপাসক৷