বুলি সর্বস্ব সোনার বাঙলা নয়

লেখক
এইচ এন মাহাতো

পুরানে আছে সোনার হরিণ রুপী ছদ্মবেশী মারীচকে দেখে সীতা রামের  কাছে গোঁ ধরে ছিলো সোনার হরিণ চাই৷ সীতাকে  সেই সোনার হরিণ উপঢৌকন দিতে গেলে পরিণামে রাবণ কুল ধবংস হলো৷

সীতা সোনার হরিণ না পেলেও ১৪ বছর বনবাসের পর অগ্ণি পরীক্ষা দিয়েও জনসাধারণের  মুখ রক্ষা করতে গর্র্ভবস্থায় আবার বনবাসে যেতে হয়েছিলো৷ রাম ভগবান হয়েও সেই দিন স্ত্রীর সন্মান রক্ষা করেন নি৷

বিজেপি ও মাননীয় নরেন্দ্র মোদি বঙ্গ জয়ের নামে কেন্দ্রীয় বাহিনী,  নির্বাচন কমিশনের কাছে সুনার (বাঙলা) হরিণের আবদার করলেন৷ নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ও বঙ্গীয় মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকদের কাছে আবদার ছলে বলেন--- কৌশলে, দরকার হলে  রিগিং করে হলেও, ভোট বাক্সকে আধুনিক ইলেকট্রনিক ব্যবহার করেই হোক, তা নাহলে শেষপাতে অস্ত্র বন্দুক ব্যবহার করলেও চলবে, কিন্তু সোনার বাঙলা আমার চাই৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদীজীর ভারত জয় তখনই সার্থক হবে যখন বাঙলা ও বাঙালীর গর্বের ভাষা সংসৃকতি, বৈপ্লবিক চেতনা ও কর্মতৎপরতা সহ বাঙালী ঐতিহ্যকে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের দখলে যাবে৷ এরপর বহুজাতিক সংস্থার কাজে বাঙালীর অস্তিত্বকে বিক্রি করে সুনার বাঙলাকে শ্মশানে পরিণত করে বাঙালীকে একটা মেরুদণ্ড হীন ক্রীতদাস জাতিতে প্রতিষ্ঠা না করে তাঁর স্বপ্ণ সার্থক হবে না৷  সেটাই হবে রাজনৈতিকভাবে বিজেপি সরকারের বৃহৎ জয়৷

অতীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ সোনার বাঙলায় লালকুঠি বানিয়ে শ্মশানে পরিণত করেছিলো৷ আমরা দেখেছি ব্রিটিশের ছলচাতুরীর কোপে পড়ে স্থানীয় মীরজাফর বিশ্বাসঘাতক জমিদারদের শোষণের দাবানলের ফলে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর৷ বাঙালীর ঘরে ঘরে খাদ্যের অভাব,  কর্মসংস্থানের অভাব, বাঙালীর নৈতিক মান ভুলুন্ঠিত হলো, আরো কতকিছু অবনতি ঘটেছে বাঙলায়৷ এবারে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা সেই শোষণের পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বাঙালীর মাতৃভূমিকে আর একটি শ্মশানে পরিণত করতে চাইছে৷

সোনার বাঙলা গড়তে হলে প্রথমেই চাই অর্থনৈতিক  পরিকাঠামো তৈরী করা৷ বাঙলাকে শোষণমুক্ত করতে হলে মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া ও প্রাউটের নীতিতে ব্লকভিত্তিক বিকেন্দ্রীত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে  অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় মানুষের হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা তুলে দেওয়া৷ অবাঙালীদের কাছ থেকে স্থানীয় বাঙালীদের হাতে স্বশাসন তুলে দিতে হবে৷ অর্থনৈতিক গণতন্ত্র, স্বনির্ভর হবার জন্য কর্মসংস্থান, আইন পরিষদ, ভাষা সংসৃকতি, শিক্ষা,কৃষি শিল্প কারখানার, সমবায়সমিতি সব কিছুর  নিয়ন্ত্রণ থাকবে নীতিবাদী উন্নত মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ নীতিবাদী মানুষের  হাতে৷ তারাই গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করবে৷

এটাতো পুঁজিবাদের এজেন্ট বিজেপির চরিত্রে নেই৷ তা হলে সোনার বাঙলা হবে কী ভাবে? সোনার বাঙলা বানাতে হলে ভড়ং ছেড়ে বাংলা ভাষার ধ্রুপদী স্বীকৃতি দিন৷ নিজেরা বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভুলে ভরা বিকৃত শব্দ বলা বন্ধ করুন৷ বহিরাগত দ্বারা অর্থ ও সম্পদের বর্হীস্রোত বন্ধ করে বাঙলার মানুষের মান সন্মান রক্ষা ও সংসৃকতিকে বিশ্বের দরবারে মহান করার কাজে আত্মনিয়োগ করুন৷  তবেই সোনার বাঙলা হবে ও বাঙলা আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে৷