ভালো-মন্দ যাহাই ঘটুক সত্যরে লও সহজে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

সংস্কৃত কলেজের একটা ভাঙা সিড়ি নিয়ে একবার দুই ক্লাসের ছেলেদের মধ্যে ভীষণ মারামারি আর হৈচৈ হলো৷ দুপক্ষই চাইল ভাঙা সিঁড়িটি খেলার সামগ্রী হিসাবে দখল করতে৷ তাই উভয় দলের মধ্যে শুরু হলো শক্তি পরীক্ষা৷ প্রথমে কথা কাটাকাটি... তারপর ঠোকনা ঠাকানি.... তারপর ঠেলাঠেলি ব্যঙ্গ বিদ্রূপ...তারপর দুমদাম কিলচড় লাথিঘুষি৷

সংবাদটা পৌঁছে গেল অধ্যাপক মহলে৷ জনকয়েক অধ্যাপক ছুটে এসে ধমকানি দিতেই ছাত্ররা যে যার ক্লাসে পালিয়ে গেল৷

 কিন্তু ব্যাপারটা সেইখানেই শেষ হলো না৷ জল আরেকটু গড়ালো৷ অধ্যাপকদের কাছ থেকে সংবাদটা পৌঁছলো অধ্যক্ষের কাছে৷ ছাত্ররা ভীষণ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷ শক্ত হাতে এদের শায়েস্তা করা দরকার৷

তাই নাকি! সংবাদ পেয়েই ছুটে এলেন অধ্যক্ষ ই.বি. কাউয়েল৷ কাউয়েল সাহেব একটি ক্লাসে ঢুকেই আদেশ করলেন, যে যে মারামারিতে যোগ দিয়েছিলে সে সে উঠে দাঁড়াও৷

কিন্তু কোন ছাত্রই উঠে দাঁড়ালো না৷ কিন্তু সব ছাত্রই যে মারামারিতে যোগ দিয়েছিল তার তো যথেষ্ট প্রমাণ আছে৷ অধ্যাপকরাই তো স্বচক্ষে তা দেখেছেন৷ কিন্তু তবুও ছাত্ররা উঠে দাঁড়িয়ে দোষ স্বীকার করলো না৷

তখন কাউয়েল সাহেব একটু বিরক্ত হয়ে বললেন তবে কি আমি বুঝবো কোন ছাত্রই মারামারিতে যাওনি?

না স্যার, আমি গিয়েছিলাম৷ মিথ্যাকে আর আঁকড়ে থাকতে পারলো না একটি ছেলে৷ সত্যকে স্বীকার করতে সে একটুও ভয় পেল না৷ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘মারামারিতে আমি ছিলাম, স্যার৷’

সমস্ত দোষী ছেলের মধ্যে মাত্র একটি ছেলে দোষ স্বীকার করলো৷

কাউয়েল সাহেব যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হলেন৷ সত্যবাদী ছেলেটির ওপর৷ বললেন, তোমার সততার জন্য তোমাকে মার্জনা করলাম৷ কিন্তু আর সকলকে দু টাকা করে জরিমানা দিতে হবে৷

জানো কে এই সত্যবাদী ছেলেটি? ইনিই হলেন আচার্য শিবনাথ শাস্ত্রী৷ ৩১শে জানুয়ারী তাঁর শুভ জন্মদিন৷ সেদিন তোমরা তাঁকে বিশেষভাবে জেনো দেখবে তিনি শুধু উপাধিধারী পণ্ডিতই ছিলেন না৷ তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সমাজসেবক, আদর্শ শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারক৷ ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ থেকে তিনি এম.এ.ও শাস্ত্রী উপাধি লাভ করেন৷