ভারতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের শনির দশা

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের স্বাধীনতার  ৭১ বছর পরে  ও সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর  পরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাকসফ্যামে’র এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০১৭ সালের ভারতের মোট সম্পদের ৭৩ শতাংশ কুক্ষিগত আছে ১ শতাংশ ধনকুবেরের হাতে৷ এঁদের সম্পদ বেড়েছে কয়েক লক্ষ কোটি  টাকা যা ২০১৭-১৮ সালের অর্থবর্ষের  মোট বাজেটের  প্রায় সমান৷ এতেই প্রমাণিত হয় কেন্দ্রের বিজেপি  সরকার দেশের  ধনকুবেরদেরই পৃষ্ঠপোষক৷ তারা জনসাধারণের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ও বেকার সমস্যা দুরীকরণে তিলমাত্র চিন্তা করে না৷

উন্নয়নের দৃষ্টিতে ৭৪ টি দেশের মধ্যে  ভারতের স্থান ৬২ নম্বরে৷  ভারতের চেয়ে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপাল আর্থিক দিক থেকে ভারতের চেয়ে উন্নত৷ ভারতের এই আর্থিক অধঃপতন ঘটেছে বড়ো নোট  বাতিলের  কারণে  ও জি.এস.টির অবৈজ্ঞানিক কর নির্ধারণে৷ তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক ব্যয়ের  পরিমাণ আয়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশী ৷ বিজেপি সরকার  শাসনে  এসে অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিলমাত্র সফলতা লাভ করেনি৷ ব্যাঙ্কের সুদ কমিয়ে, ট্যাক্স বাড়িয়ে হত দরিদ্র জনগণের ক্লেশ বাড়িয়ে দিয়েছে৷

এ ব্যাপারে যদি আরও কিছুটা পর্র্যলোচনা করা যায় তা হলে দেখা যাবে অদ্যাবধি ভারতে  বিভিন্ন দলীয়  সরকার কি কেন্দ্রে আর কি রাজ্যে শাসন কায়েম করে নিজ নিজ দলের আখের গুছিয়ে নিয়েছে৷ এর মধ্যে  কংগ্রেসই বেশী বছর শাসন করেছে দেশে৷ বড়ো  দলগুলি  ভেঙ্গে যে সব  দলছুট রাজনৈতিক দল হয়েছে তারা কোন কোন রাজ্যে দীর্ঘবছর  ধরে  শাসন ক্ষমতা কব্জায় করে পরিবারতন্ত্রকে  জিইয়ে রেখে সরকারকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত  করেছে৷ যেভাবে  শাসন চালিয়েছে সেটা একধরণের  স্বেচ্ছাচারিতা৷ উত্তর ভারতে  বিহারে লালুপ্রসাদ  যাদব প্রশাসনকে একেবারে ধবংস করে ছেড়েছে৷ দক্ষিণ ভারতে এ ডি এম কে যেভাবে শাসন  চালিয়েছে সেটা গণতন্ত্রের চরম লজ্জা৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই, সিপিআই-এম ও কিছু দলছুট পার্টি মিলে দীর্ঘ ৩৪ বছরে তো একে লাল দূর্গ বানিয়ে বসেছিল৷ তারা রাজ্যকে ছিবড়ে করে গেছে৷ আজ এসেছে তৃণমূল৷ রাজ্য উৎসবেই মত্ত৷

উত্তরপ্রদেশে মুলায়েম পরিবার  চলে গেছে৷ সেখানে বিজেপি এসেছে৷ যেখানকার গণতন্ত্রের  যেন শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা৷ জনগণ আতঙ্কগ্রস্ত৷ দুঃখের  কথা শাসকগণ  গণতন্ত্রকে সার্থক করতে কোন কিছুই করেনি৷ শুধু ছলে-বলে-কৌশলে শাসন ক্ষমতা কায়েমে ব্যস্ত৷ জনগণকে দারিদ্র সীমার নীচে থেকে উপরে তোলার কোন চেষ্টা না করে নিছক মিথ্যাচারিতা  ও দলবাজিটাই করে গেছে৷ ফলে কোটি কোটি হত দরিদ্র নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরীব পরিবারগুলি নানাভাবে আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে বঞ্চিত হয়েই চলেছে৷ চরম বেকার সমস্যায়  দেশ জর্জরিত৷ অধিকাংশ রাজ্যে কলকারখানাগুলি বন্ধ৷ শিক্ষা, আইন শৃঙ্খলা ও জনগণের  নিরাপত্তা যেন একেবারে ধবংসমুখে৷ দুর্নীতিতে দেশের সর্বক্ষেত্রে নিম্নমানের  কাজিয়ায় জনগণ বীতশ্রদ্ধ৷ দেশের  উন্নয়নের দিকে শাসক দলের একেবারেই  নজর নেই৷ তারা শুধু বিরোধীদের  উপর খড়গ হস্ত  হয়ে আছে৷ যে দল যেখানে শাসনে আছে  তারাই  নির্র্বচনে  কারচুপী করে গণতন্ত্রকে বিরোধী শূন্য করে স্বৈরাচারী শাসন কায়েমে সদাব্যস্ত৷ যতোদিন যাচ্ছে জনগণ নির্র্বচন  ও দলের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে৷ প্রকৃত জ্ঞানী গুণী ব্যষ্টিরা আজ আর রাজনীতিতে আসতে চাইছে না৷  তার কারণ বর্ত্তমানে এদেশে রাজনীতিটাই যেন এক ভয়ঙ্কর অন্তহীন অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ আজকে রাজনৈতিক নেতারা অনেকেই চিন্তাশীল জনগণের  মনে এক তিক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে চলেছে৷ জনগণ তাদের ওপর আস্থা হারাচ্ছে৷ বোটারগণ কোন দলকেই  চাইছে না কিন্তু  তবু কৌশল করে জয়লাভ করে প্রকারান্তরে দেশকে বোকা বানাচ্ছে৷ সৎ নীতিবাদীরা রাজনীতির  চৌকাঠ মাড়াচ্ছেন না৷

এটাই গণতন্ত্রের পক্ষে এদেশের ভাগ্যাকাশে ভয়ঙ্কর কালোছায়া নেমে এসেছে৷ রাজনৈতিক দুর্বত্তায়নে দেশ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ছে!