ভারতে দলতন্ত্রের কুশাসনে গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস!

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের  সংবিধানের মধ্যে রাষ্ট্রপতি-রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি শব্দগুলি আছে৷ এদেশে চলছে দলতান্ত্রিক সংসদীয় গণতন্ত্র৷ দলই মুখ্যত প্রধান দেখা যাচ্ছে যতোদিন যাচ্ছে রাজনৈতিক দলাদলি কুৎসা ও দলীয় প্রতি হিংসার  প্রতিফলনটা প্রাধান্য পাচ্ছে আর তার সঙ্গে প্রবল হচ্ছে দলীয় শাসকদের চরম ছলচাতুরী ও মিথ্যা ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি৷ ১৪২ কোটি মানুষের দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করছেন, তাঁদের  অধিকাংশই দুবেলা কি করে বাঁচবো তার চিন্তাতেই সদাব্যস্ত! বাকি যে ৩০ শতাংশ বিরাট এই দেশের যা কিছু সুখ স্বচ্ছন্দ সব কিছু ভোগ করছেন৷ আর প্রতি কথায় ঢেঁকুর  তোলার মতো পদে পদে  সারা দেশের জনগণের  সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের  কথা বলে চলেছেন!

এখন প্রশ্ণ হচ্ছে যে গণতন্ত্র হলো জনগণের দ্বারা শাসন৷ সেটা কি হচ্ছে আসলে? আজও অনেকেই জানেন না এদেশে সংবিধানটি কী?  আর শাসনে যাঁরা যাচ্ছেন তাঁরাই  বা কারা? শাসনে যেতে গেলে কি করতে হয় তাই অনেকে জানেন না বা বোঝেন না৷  রাজনৈতিক দলগুলো, যাঁদের নিয়ে গণতন্ত্র তাঁদের কাছে যান শুধু ঐ বোটটুকু পেতে তার জন্য যা বলার বলেন৷ এই পর্যন্তই বোট মিটে গেলে সবই ফাঁকা! বোটারগণ সকলে বোটটি দিতেই পারেন না৷ তাছাড়া অনেকেই বোটের গুরুত্বটাই বোঝেন না৷ শুধু তাই নয় দলগুলি বোট চলাকালিন এমন সব কান্ড করে থাকে যার দরুন বোট কেন্দ্রটাই অনেক সময় চরম সমস্যায় পড়ে! আর বোট হলে বোটারদের মধ্যে একটা আতঙ্ক থাকে কি জানি কি হয়! মারামারিটা যেন জল ভাত৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানে সবকিছু নির্দেশ আছে কিন্তু প্রায় দলগুলি  ইচ্ছাকৃত ভাবেই অমান্য করে থাকে কেবল জেতার জন্য৷

যখন ইংরেজ সরকার দেশটা এদেশের হাতে দিয়ে যায় তখন দুটো দলের হাতে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দিয়ে যায়৷ কিন্তু ইংরেজ সরকারের অধীনে রেখেই কারণ পাকিস্তান ও ভারত যুক্তরাষ্ট্র হিন্দুস্তানকে ইংরেজের শাসিত কমনওয়েলথের সদস্য করে৷ আর সবকিছুই ইংরেজ সরকারের নিয়ম কানুন  বেশ কিছু বছর মান্যতা দিয়ে  ‘মেমিলিয়ন স্ট্যাটাস’’ মান্যতা দিতে হবে৷ যদি স্বাধীনতা অর্জন করা হতো সংগ্রাম করে তা হলে হয়তো এমনটি হতো না আর অখণ্ড ভারতবর্ষ রক্ষা পেত যেটি নেতাজী বার বার অনুরোধ করেন কংগ্রেসের কাছে বিদেশ থেকে রেডিওর মাধ্যমে৷

আজ ভারতের জনগণ কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়েছে৷ ভারতবর্ষের  ১৫টি রাজ্য ভাগ হয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্র কিন্তু ভারত  যুক্তরাষ্ট্র হয় ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কারণ এখানে তৎকালীন সময়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ মুসলমানদের সংখ্যা ছিল৷ দেশভাগটা গান্ধীজিও চাননি,তিনি অনশন করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন৷ কিন্তু জওহরলাল দেশভাগে স্বাক্ষর করেন বাধ্য হয়েই কিছুটা চাপে পড়ে৷

দেশভাগের যে ভয়ঙ্কর কুফল সেটা হতভাগ্য বাঙালী জনগোষ্ঠী হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে, বিশেষ করে যারা উদ্বাস্তু হয়ে ওপার থেকে এপারে এসেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙলা ও পঞ্জাবের ক্ষেত্রে দ্বিচারিতা নীতির ফলে বাঙলার মানুষ আজও অবর্ণনীয় দুঃখের মধ্যে দিন কাটায়৷ পঞ্জাবী উদ্বাস্তুর সমস্যার সমাধান ভারত সরকার যে উদ্যোগ নিয়ে করেছে বাঙালী উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে তার ছিঁটে ফোটাও দেখা যায়নি৷

কেন্দ্রীয় সরকার সে নেহেরু থেকে নরেন্দ্র মোদি বাঙলার সমস্যা সমাধানের কোনো চেষ্টা করেনি৷ ব্যষ্টি স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থকেই বড় করে দেখে৷ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি মানুষের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর  যে সমান অধিকার আছে একথা দলবাজ নেতাদের আচরণে কখনই প্রকাশ পায়নি৷ বরং দলীয় স্বার্থে কোথাও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে, কোথাও জাতিগত বিদ্বেষ-বিষ ছড়িয়ে নিজের  ও দলের স্বার্থসিদ্ধি করে৷

প্রাউটের মতে প্রাউটের মতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসনকে হতে হবে স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও সকলশ্রেণীর নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণের কথা ভেবে কাজ করবে৷ কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের  স্বদেশী সরকারের কাজে কর্মে বাঙালী বিদ্বেষী মনোভাব পরিলক্ষিত হয়৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ধর্ম নিরপেক্ষ নীতিকে বিসর্জন দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে  কোমর বেঁধে নেমেছে৷ শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন দলের শাসনও কেন্দ্রের শাসক দল মেনে নিতে পারছে না৷ তাই অগণতান্ত্রিক ভাবে রাজ্যসরকারগুলোকে অপসারণ করছে অথবা বিধায়ক কিনে নিজেরাই সরকার গড়ছে৷ ছলবল কৌশলে এই কাজ করতে গিয়ে রাজ্যগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে আর্থিক সংকটে ফেলছে৷ ২০২১শে কেন্দ্রের শাসকদল পশ্চিমবঙ্গ জয় করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল৷ কিন্তু ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে রাজ্য সরকারকে নানাভাবে হেনস্থা করে যাচ্ছে৷ এই কাজে কেন্দ্রের প্রধান সহায়ক রাজ্যপাল৷ এইভাবে দিল্লীর হিন্দুত্ববাদী সরকার দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংহতিকে বিপন্ন করছে ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে দুর্বল করছে৷ যার পরিণতি একদিন ভয়ঙ্কর হবে৷

দেশের জনগণের সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে শাসকদল এইসব অপকর্ম করে যাচ্ছে৷ একে প্রতিহত করতে ও দেশের সংহতি সুদৃঢ় করতে প্রাউটিষ্টদের জনগণকে সচেতন করার কাজে নাবতে হবে৷