আজ ভারতের শাসন ব্যবস্থা জন্মের পর থেকে ভয়ংকর এক দলীয় শাসনে চরমব্যর্থ ও পঙ্গু হয়ে পড়ায় দেশ এগোনো তো দূরের কথা নিম্নগামী হয়ে পড়েছে সবদিক থেকে৷ শাসকগণ কি রাজ্য আর কি কেন্দ্রে মোটেই -উন্নতির পথে এগুচ্ছে না৷ বরং যা ছিল সর্বক্ষেত্রে দেশ পিছিয়ে পড়ছে৷
দেশের উন্নতিটা যে হচ্ছে সেটা বিচার হয় দেশের সাধারণ জনগণের জীবনযাপনের মান কতটা উন্নত হয়েছে তার দিকে বিচার করে৷ দেশের মুষ্টিমেয় ধনীব্যষ্টিদের কতটা আর্থিক উন্নতি হয়েছে তার বিচার করে নয়৷
তাছাড়া দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে দলীয় শাসনে দলগুলিই বেশ গুছিয়ে নিচ্ছে৷ তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়িয়ে আর সাধারণ মানুষের দুঃখের শেষ নেই৷ তাই বোটদানে নাগরিকগণ আকৃষ্ট হচ্ছে না৷ চরম বেকার সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি, চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ কাতর কিন্তু মুনাফা লুঠছে ধনী ব্যবসাদারগণ ৷ সরকার যাদের দ্বারা চালিত হয় সেই দলগুলি আখের গুছিয়ে নেয়৷
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে বিরাট দেশ ভারত বর্ত্তমানে বাংলাদেশ,পাকিস্তান ও নেপালের থেকে আর্থিক উন্নয়নে নিম্নমুখী৷
তাহলে সরকারে যাঁরা এসেছেন তাঁরা কি করছেন? কেবল বাকসর্বস্ব নেতা ও নেত্রীদের বত্তৃণতাও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি! ছোট ছোট শিশুরা উপযুক্ত খাদ্যের অভাবে বাড়তে পারছে না৷ এটা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র---যার বয়স হলো ৭২ বছর তার লজ্জা ও ব্যর্থতা৷ একটা ছেলের চাকরী নেই৷ কেবল চাকরীর প্রশ্ণে উচ্চ আদালতে মামলা রুজু করে কাল হরণ করার ফন্দিতে দেশের সরকার সিদ্ধ হস্ত৷
মানুষকে খেলাধূলা, উৎসব আনন্দে , হইচই, হুজুগে আকৃষ্ট করে রেখেছে৷
আজ ভাববার সময় হয়েছে কি করে আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে দেশে৷ ব্যাপক আঞ্চলিক ভিত্তিতে সেই ব্লকস্তর থেকে উৎপাদন ও বন্টনে সমবায়কে উৎসাহ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক এলাকায় পরিণত করতে৷ প্রতিটি রাজ্যের ব্লক উন্নয়নকে সার্থক করে তুলতে হবে যাতে কোন রাজ্যের রাজ্যের ব্লক উন্নয়ণকে সার্থক করে তুলতে হবে যাতে কোন রাজ্যের বেকার যেন সেই রাজ্যেই কর্ম পায়৷ অন্যরাজ্যে গিয়ে ভীড় না করে৷ এসবের দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনও নজর নেই৷ শাসক ও বিরোধী দল সবাই মত্ত হয়ে আছে ধান্দাবাজি করতে৷ দলভাঙ্গা ভাঙ্গি করে শাসন ক্ষমতা লাভ করেদেশকে রক্তশূন্য করতে৷ এতে নেতা-নেত্রীরা অত্যন্ত পটু৷ তাই চরম দুর্নীতিতে দেশ ডুবছে৷ দেশের শাসন চালাতেই সব অর্থ ব্যয় হচ্ছে৷ দেশের উন্নতিটা হবে কি করে? মাসিক মাহিনা তো চড় চড় করে বাড়ছে সরকারী কর্মচারী ও মাথায় যাঁরা আছেন তাঁদের দেখভালে৷ কই সেথায় তো কোন ত্যাগ নিষ্টা সেবারপরাকাষ্টা নেই? সরকারী কর্মী কতজন? আর বেসরকারীদের সংখ্যা কতো তার তো সঠিক হিসাব রাখা হচ্ছে না৷ আর তাঁদের উপর নানা ধরনের ট্যাকেসর বোঝা চাপিয়ে তাদের প্রাণ ওষ্টাগত করাই হচ্ছে৷ এ কেমন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা?
নামে গণতন্ত্র আর চলছে কিছু সংখ্যক ব্যষ্টির উদরপূর্ত্তির সুব্যবস্থা৷ তাই অপ্রিয় সত্য কথা হলো গণতন্ত্রটাই ধমতান্ত্রিক ব্যবস্থার পূজারী৷ এরা সমাজতন্ত্রের কথা বলে মানুষকে ভোলাতে চায় কিন্তু সমাজতন্ত্র বাঁচে সামাজিকরণে সেদিকে নজর মোটেই নেই৷ অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রকরণ না করলে গরিবী হঠানো যাবে না ও যায় না৷ এরা মানুষকে নানা সমস্যায় জড়িয়ে নিজেদের প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে ঢাকা দেবার কাজে লিপ্ত৷
খেলাধূলায় ছোট ছোট দেশগুলি কত উন্নত, কিন্তু বিরাট ভারত সেদিকেও এগুতে ব্যর্থ৷ এ দেশের শাসনে দেখা যাচ্ছে সেবার চেয়ে দলের প্রচারটা প্রাধান্য পেয়ে যাচ্ছে৷ এখানে প্রচারযন্ত্রগুলো ব্যাপক প্রচারে সরকারী দলের কাজে খুবই সক্রিয়৷ তবে আশার কথা এদেশে নাগরিকগণ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন৷ শাসকদলগুলি সেই জাতপাত সাম্প্রদায়িকতা সুড়সুড়ি দিয়ে বাজিমাৎ করতে প্রায় সদা ব্যস্ত কিন্তু সচেতন নাগরিকগণ দেশের স্বার্থে উদারতার নজির সৃষ্টি করছেন৷ বাবরি মসজিদ ও রামমন্দির মামলায় দেখা যাচ্ছে উভয় সম্প্রদায় অনেকখানি বাস্তবতার পরিচয় দিয়েছেন৷ তারা হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক হিসাবে একটি স্মারকস্তম্ভ ঐ অযোধ্যায় করতে নাকি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন৷ এটা অবশ্যই ঐতিহাসিক ঘটনার নজির হয়ে থাকবে৷ তাই ভারত হোক সত্যসত্যই ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ৷ এটা অনেক মানবতাবাদীই কামনা করেন৷
অত্যন্ত লজ্জার ও দুঃখের কথা শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে অনেক নেতানেত্রীই হন সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের পূজারী৷ যদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমস্যা সংকুল ভারতে সরকার দৃষ্টি ভঙ্গীর পরিবর্ত্তন না করেন তা হলে দেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়বে নিছক দলবাজীতে ও ব্যর্থ শাসনে৷
দলমতহীনভাবে সকল নাগরিক ও জনগণের জন্য দিতে হবে সেবা৷ সেখানে যেন না থাকে সংকীর্ণতা৷ মোদ্দাকথা সরকার যেন গণতন্ত্র ও সংবিধানের নীতি নির্দেশনা মেনে চলে৷ কারণ অনেক সময় দেখা গেছে অতীতে নির্র্বচিত সরকার স্বৈরাচারিতার নজির রেখে গেছেন৷ যার পরিনতি হয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকারক৷
মনে রাখতে হবে শাসকগণ সকলেরই অভিভাবক ও একজন সুশাসক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো বিশেষ দলের প্রতিনিধি শুধু নন৷
আর গণতন্ত্র ও সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষায় সকল শাসক ও বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে৷ স্বার্র্থন্বেষীরা তাঁদের ভাঙ্গন ধরাতে উঠে পড়ে লাগবে৷ তাই সজাগ হতে হবে বিরোধীদেরই৷ তবেই গণতন্ত্র বাঁচবে নচেৎ স্বৈরাচারিতাই মাথা চাড়া দেবে৷
- Log in to post comments