ভারতে সকল বিরোধীদলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে

লেখক
প্রবীর সরকার

আজ ভারতের শাসন ব্যবস্থা জন্মের পর থেকে  ভয়ংকর এক দলীয় শাসনে চরমব্যর্থ ও পঙ্গু হয়ে পড়ায়  দেশ এগোনো তো দূরের কথা  নিম্নগামী হয়ে  পড়েছে সবদিক থেকে৷ শাসকগণ কি রাজ্য আর কি কেন্দ্রে মোটেই -উন্নতির পথে এগুচ্ছে না৷ বরং যা ছিল সর্বক্ষেত্রে দেশ পিছিয়ে পড়ছে৷

দেশের উন্নতিটা যে  হচ্ছে সেটা বিচার হয় দেশের সাধারণ জনগণের জীবনযাপনের  মান কতটা উন্নত হয়েছে তার দিকে  বিচার  করে৷  দেশের মুষ্টিমেয় ধনীব্যষ্টিদের  কতটা আর্থিক উন্নতি হয়েছে  তার বিচার করে নয়৷

তাছাড়া  দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে  দলীয় শাসনে  দলগুলিই বেশ গুছিয়ে নিচ্ছে৷ তাদের দলীয়  নেতাকর্মীদের  আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়িয়ে আর সাধারণ  মানুষের  দুঃখের  শেষ নেই৷  তাই বোটদানে নাগরিকগণ আকৃষ্ট হচ্ছে না৷  চরম বেকার  সমস্যার  কোন সুরাহা হয়নি, চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে  মানুষ কাতর কিন্তু মুনাফা লুঠছে ধনী ব্যবসাদারগণ ৷ সরকার  যাদের দ্বারা চালিত  হয় সেই দলগুলি আখের গুছিয়ে নেয়৷

সমীক্ষায়  দেখা যাচ্ছে  বিরাট দেশ ভারত  বর্ত্তমানে বাংলাদেশ,পাকিস্তান ও নেপালের থেকে আর্থিক উন্নয়নে নিম্নমুখী৷

তাহলে সরকারে যাঁরা  এসেছেন  তাঁরা  কি করছেন? কেবল বাকসর্বস্ব নেতা ও নেত্রীদের  বত্তৃণতাও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি! ছোট ছোট  শিশুরা উপযুক্ত খাদ্যের অভাবে  বাড়তে পারছে না৷ এটা একটা   গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র---যার বয়স হলো ৭২ বছর তার লজ্জা ও ব্যর্থতা৷ একটা ছেলের চাকরী নেই৷ কেবল চাকরীর প্রশ্ণে উচ্চ আদালতে মামলা রুজু করে  কাল হরণ করার ফন্দিতে দেশের সরকার  সিদ্ধ হস্ত৷

মানুষকে খেলাধূলা, উৎসব আনন্দে , হইচই, হুজুগে  আকৃষ্ট করে রেখেছে৷

আজ ভাববার সময় হয়েছে কি করে আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে দেশে৷ ব্যাপক  আঞ্চলিক ভিত্তিতে সেই ব্লকস্তর থেকে উৎপাদন ও বন্টনে  সমবায়কে উৎসাহ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক  এলাকায় পরিণত করতে৷ প্রতিটি রাজ্যের  ব্লক উন্নয়নকে  সার্থক করে তুলতে  হবে যাতে কোন রাজ্যের রাজ্যের ব্লক উন্নয়ণকে সার্থক করে  তুলতে হবে যাতে কোন রাজ্যের  বেকার যেন সেই  রাজ্যেই কর্ম পায়৷ অন্যরাজ্যে গিয়ে ভীড় না করে৷ এসবের দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনও নজর নেই৷ শাসক ও বিরোধী দল সবাই মত্ত  হয়ে  আছে ধান্দাবাজি করতে৷ দলভাঙ্গা ভাঙ্গি করে শাসন  ক্ষমতা  লাভ করেদেশকে রক্তশূন্য করতে৷ এতে নেতা-নেত্রীরা অত্যন্ত পটু৷ তাই চরম দুর্নীতিতে দেশ ডুবছে৷ দেশের  শাসন চালাতেই  সব অর্থ ব্যয় হচ্ছে৷ দেশের উন্নতিটা হবে কি করে?  মাসিক মাহিনা তো চড় চড় করে বাড়ছে  সরকারী কর্মচারী  ও মাথায় যাঁরা আছেন তাঁদের দেখভালে৷ কই সেথায় তো কোন  ত্যাগ নিষ্টা সেবারপরাকাষ্টা নেই? সরকারী কর্মী কতজন? আর বেসরকারীদের সংখ্যা কতো  তার তো  সঠিক  হিসাব রাখা হচ্ছে না৷  আর তাঁদের উপর নানা ধরনের  ট্যাকেসর বোঝা চাপিয়ে তাদের প্রাণ ওষ্টাগত করাই হচ্ছে৷ এ কেমন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা?

নামে গণতন্ত্র আর চলছে কিছু সংখ্যক ব্যষ্টির  উদরপূর্ত্তির সুব্যবস্থা৷ তাই অপ্রিয় সত্য কথা হলো গণতন্ত্রটাই  ধমতান্ত্রিক ব্যবস্থার পূজারী৷ এরা সমাজতন্ত্রের কথা বলে মানুষকে ভোলাতে চায় কিন্তু  সমাজতন্ত্র বাঁচে  সামাজিকরণে সেদিকে নজর মোটেই  নেই৷ অর্থনৈতিক  বিকেন্দ্রকরণ না করলে গরিবী হঠানো যাবে না ও যায় না৷  এরা মানুষকে নানা সমস্যায় জড়িয়ে নিজেদের প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে  ঢাকা দেবার কাজে লিপ্ত৷

খেলাধূলায় ছোট ছোট দেশগুলি কত উন্নত, কিন্তু বিরাট  ভারত সেদিকেও এগুতে ব্যর্থ৷ এ দেশের  শাসনে দেখা যাচ্ছে সেবার চেয়ে  দলের প্রচারটা প্রাধান্য পেয়ে যাচ্ছে৷ এখানে প্রচারযন্ত্রগুলো ব্যাপক প্রচারে  সরকারী দলের কাজে খুবই সক্রিয়৷ তবে আশার কথা  এদেশে নাগরিকগণ  আগের  চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন৷  শাসকদলগুলি সেই জাতপাত সাম্প্রদায়িকতা সুড়সুড়ি  দিয়ে বাজিমাৎ  করতে প্রায় সদা ব্যস্ত কিন্তু সচেতন নাগরিকগণ দেশের স্বার্থে উদারতার নজির সৃষ্টি করছেন৷ বাবরি মসজিদ ও রামমন্দির মামলায় দেখা যাচ্ছে উভয় সম্প্রদায় অনেকখানি  বাস্তবতার পরিচয় দিয়েছেন৷ তারা  হিন্দু মুসলমানদের  মধ্যে ঐক্যের  প্রতীক হিসাবে একটি স্মারকস্তম্ভ  ঐ অযোধ্যায় করতে নাকি ইচ্ছা প্রকাশ  করেছেন৷ এটা অবশ্যই ঐতিহাসিক ঘটনার নজির হয়ে থাকবে৷ তাই ভারত হোক সত্যসত্যই ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ৷ এটা অনেক মানবতাবাদীই কামনা করেন৷

অত্যন্ত লজ্জার  ও দুঃখের কথা শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে অনেক নেতানেত্রীই হন সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের পূজারী৷ যদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক  উন্নয়নে সমস্যা সংকুল ভারতে সরকার  দৃষ্টি ভঙ্গীর  পরিবর্ত্তন না করেন তা হলে  দেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে  পড়বে  নিছক দলবাজীতে ও ব্যর্থ শাসনে৷

দলমতহীনভাবে সকল নাগরিক ও জনগণের  জন্য দিতে হবে সেবা৷ সেখানে  যেন না  থাকে সংকীর্ণতা৷ মোদ্দাকথা সরকার  যেন গণতন্ত্র ও সংবিধানের নীতি নির্দেশনা মেনে চলে৷ কারণ অনেক  সময় দেখা গেছে অতীতে নির্র্বচিত সরকার স্বৈরাচারিতার নজির রেখে গেছেন৷ যার  পরিনতি হয়েছে  মারাত্মক ক্ষতিকারক৷

মনে রাখতে হবে শাসকগণ সকলেরই অভিভাবক ও একজন সুশাসক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো বিশেষ দলের  প্রতিনিধি শুধু নন৷

আর গণতন্ত্র ও সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষায় সকল শাসক ও বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে৷ স্বার্র্থন্বেষীরা  তাঁদের ভাঙ্গন ধরাতে উঠে পড়ে লাগবে৷ তাই সজাগ হতে হবে বিরোধীদেরই৷ তবেই গণতন্ত্র বাঁচবে নচেৎ স্বৈরাচারিতাই মাথা চাড়া দেবে৷