প্রথমেই বলি ভারতে যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের নির্দ্দেশ মতাবেক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম আছে৷ এখানকার কেন্দ্রীয় শাসকগণ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ব্যবহার করে৷ছলে-বলে কৌশলে কেন্দ্রের শাসক রাজ্যের সরকারকে ভেঙ্গে দিয়ে নিজেদের অধীনে এনে শাসন ক্ষমতা কায়েম রাখে৷ স্বৈরাচারিতার এই নজির রেখে গেছে বিগত কংগ্রেস সরকার ইন্দিরা গান্ধীর আমলে৷ কিন্তু কংগ্রেসের পরিণতি মোটেই উজ্জ্বল ও গৌরবের নয়৷ বর্ত্তমানে যে দল শাসনে এসেছে তাদেরও শাসন ব্যবস্থায় দেশবাসী সন্তুষ্ট নয় ৷ কারণ তাদের আর্থিক সংস্কার জনগণকে পথে বসিয়েছে৷ তাছাড়া বিদেশী তাড়ানোর নামে যা কান্ড করছে সেটা মানবতাকে ও গণতন্ত্রকেই ধবংস করবে৷ সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে রেখে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ও বিশ্বৈকতাবোধকেই বিনাশ করছে৷ ধনীদেরই তোষণ করে গরীব কোটি কোটি সাধারণ নাগরিকদের জীবন অতিষ্ট করে তুলছে৷ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে তারা গণতন্ত্রকে এক নক্কারজনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে ৷ এরা নিজেদের ব্যর্থতাকে চাপা দিতে গিয়ে পরিহাসের পাত্রই হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের চোখে৷ এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে শাসক দলের মন্ত্রী এমনকি কিছু তাঁবেদার দলের নেতা, নেত্রী ও এই বাংলার বড়োমাপের নেতা নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জীকে শুধু হেয় করেননি৷
এমনকি তাঁর ব্যষ্টি জীবনকে নিয়ে অতি নিম্নমানের বক্তব্য রেখে বাঙালী জনগোষ্ঠীর মুখ পুড়িয়ে বসেছেন৷ এই রাজ্যের কিছু মানুষ অতীতেও নেতাজীর মতো মহান ব্যাষ্টিকে কুৎসিতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে নিজেদেরই সংকীর্ণতা ও নীচতাকে প্রকাশ করে গেছেন৷ তাতে দেশের ও দশের ক্ষতিই হয়েছে আর ভারতের তথা বাংলায় সর্বনাশ হয়েছে৷
আজ সমস্যা সংকূল পশ্চিম বাংলায় শত শত মীরজাফরের জন্ম হয়েছে যারা নিজেদের কুৎসিৎ ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থকে চরিতার্থ করতে সাম্প্রদায়িকতার ধবজাধারীদের হয়ে ২ কোটি বাঙালীকে বিতাড়ণের হুমকী দিয়ে চলেছে এন.আর.সির মতো কালাকানুনের অস্ত্রের আঘাতে৷ অসমের হাজেল তো ১৯ লক্ষ হতভাগ্যকে নাগরিকত্ত্বহীন করে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে৷ মানুষের ক্ষোভের হাত থেকে বাঁচাতে তাঁকে ভিন রাজ্যে বদলি করা হয়েছে৷ এই পশ্চিম বাঙলায় বিজেপির রাজনৈতিক নেতা দিলীপবাবু তো হুংকার দিয়ে বলেছেন যে তারা পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পালটিয়ে আগামী ২০২১-এ রাজ্য নির্বাচন করবে৷ অর্র্থৎ যেন তেন প্রকারেণ রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাজনৈতিক হত্যা, আরো অনেক অভিযোগ কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়ে অতীতের মতো এরাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন রাজি করারই ফিকির প্রতিদিনই আটছে ও সে সবের নজির দিল্লিতে পাঠাচ্ছে৷ কেননা এ রাজ্যের সরকারকে ফেলে পশ্চিমবাঙলার কেন্দ্রীয় শাসন ক্ষমতা কায়েম করতে পারলে বাঙলাকে লুণ্ঠন করা অনেক সহজ হবে আর বাঙালীকে বিদেশী বানিয়ে দেশছাড়া করার পথ প্রশস্থ হবে৷ তবে ‘‘বাংলার মাটি শক্ত ঘাঁটি’’ এটা মনে রাখতে হবে ধান্দাবাজ বিজেপি নেতাদের৷
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ‘বাঙলা চিরকালই একটু ভিন্নপথেই চলে৷ তাই এখানে কেন্দ্রের সরাসরি শাসন অন্তত ৭২ বছরে কংগ্রেস ছাড়া কেন্দ্রে আসীন কোন দলই সুযোগ পায়নি৷ ‘বাঙলাকে বশে আনতে হলে বাঙলার কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে মান্যতা দিতে হবে, বাংলাভাষাকে মর্য্যাদা দিতে হবে আর বাঙলার হিন্দুও মুসলমান জনগোষ্ঠী এক কথায় বাঙালী জনগোষ্ঠীকে মর্য্যাদা ও সম্মান দিতে হবে৷
তাছাড়া জঘন্য সাম্প্রদায়িকতাকে এই পশ্চিম বাঙলার জনগণ কোনদিন গ্রহণ করেনি ও করবে না৷
তাই বাঙলার বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর কবিতা ও গানে লিখেছেন ---
‘‘হিন্দু না ওরা মুসলিম
ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন?
কান্ডারী, বলো ডুবিছে মানুষ
সন্তান মোর মার’’৷
এখানে মা বলতে ভারত তথা বাঙলা আর
কান্ডারী বলতে দেশনেতাকে বোঝানো হয়েছে৷
অত্যন্ত বেদনার ও লজ্জার কথা দেশ নেতারা তো স্বার্থের লোভে সাম্প্রদায়িকতা ভিত্তি ভারত ভাগ করেছেন--- হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান৷ আজ লড়াই করে ধবংস হচ্ছে দুটো দেশই৷
তাই সমগ্র ভারতবাসী যেন এইসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে হিন্দু মুসলমান সকলেই যেন ভারতীয় হয়ে চলতে পারে৷ মানবতাকে মর্য্যাদা দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতে শেখে, আর রাজনৈতিক স্বার্থে গঠিত রাজ্যগুলোকে নতুন করে স্থানীয় সম্পদের ওপর ভিত্তি করে স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে৷ সেই সঙ্গে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তবেই মানুষ সুখের মুখ দেখবে৷ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে৷ ভারত বাঁচবে আর সেই সঙ্গে গণতন্ত্র স্বীকৃতি পাবে!
- Log in to post comments