চার বছরে  কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক দিক থেকে পিছু হঠে চলেছে 

লেখক
প্রভাত খাঁ

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন  গত ৮ই জুলাই   মম্তব্য করেছেন যে গত ২০১৪ সাল থেকেই কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের  শাসনকালে  ভারত  সম্পূর্ণ ভুল পথে  হেঁটে চলেছে৷  আর্থিক  উন্নয়নের  নামে  ভুল করতে করতে  পিছিয়ে  পড়ছে  দেশ৷ এই সালে  শ্রী মোদি  বোটে  জিতে  লোকসভায় আসেন৷  শ্রী অমর্ত্য সেনের  মতে  আজও তপশীলি উপজাতিভুক্ত  ব্যষ্টিরা  উপেক্ষিত  হয়ে আছে৷ তাঁর মতে  সরকার জাত-পাত বিষয়ক সমস্যাগুলি ঠিকমতো সামলাতে  পারেন নি ৷

শ্রীসেনের  সঙ্গে  অনুরূপ মন্তব্য করেছেন উন্নয়নমূলক অর্থনীতিবিদ জাঁদ্রেজ৷ সম্প্রতি দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তাঁর লেখা একটি বই ‘এ্যান  আনসারটেন গ্লোরি অফ ইন্ডিয়া এ্যান্ড ইটস্ কনট্রাডিকশন্’ - এর হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ  করা হয়৷ এই অনুষ্ঠানে  উপরিউক্ত দুই  অর্থনীতিবিদই  উপস্থিত ছিলেন ৷  সেই সময়  শ্রীসেন উপরিউক্ত মন্তব্য করেন৷ তাঁদের  মতে  দলিতরা কোনরকম  আর্থিক,  শিক্ষাগত ও স্বাস্থ্যগত নিশ্চিততা ছাড়াই  দিনের  পর দিন  কাটিয়া যাচ্ছেন৷ শ্রী সেন  একজন  হতভাগ্য দলিত কিশোরের ওপর বাড়ির  কর্র্ত্তর  নির্যাতনের একটি  ঘটনার  উল্লেখ করেন৷

এই ধরণের  ঘটনা বর্তমান কালে প্রায়ই  ঘটছে  বলে মন্তব্য করেন  শ্রী সেন৷  তাছাড়া ডঃ জাঁদ্রেজ বলেন, শ্রী মোদির ‘আয়ুস্মান ভারত স্বাস্থ্য প্রকল্প’ আসলে  একটি ‘ধোকার টাটি’৷ 

শ্রী সেন  বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের  সময়ও আমরা ভাবতে পারতাম না, যে হিন্দু নাহলে কোনও সংগ্রামে  জেতা যায় না৷ তাঁর  মতে, যে ধরণের  ঘটনা ঘটছে তাতে সব কিছু  ভুলে বিরোধী শক্তিগুলির  এককাট্টা হওয়া দরকার৷  কারণ ভারত কোনপথে  চলবে সেটা ঠিক করার সময় এসেছে৷  সেটা করতে হবে  দেশের  জনগণকে  ও বিরোধীদের  সঙ্গে নিয়ে৷ এ ব্যাপারে দেশের  সৎনীতিবাদীদের  বিশেষ প্রয়োজন৷ এটা অত্যন্ত দুঃখের কথা যে, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলি  নির্বাচনে  জেতার জন্যে সাধারণ জনগণের সামনে  নিছক  মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে৷   গণতন্ত্র এদেশে  ব্যর্থ৷ শ্রী সেন  যে আবেদন  রেখেছেন  সেটা  কতদূর  সফল হবে, সেটা ভাববার  বিষয় ৷ কারণ  গদীর স্বার্থেই সব দল ব্যস্ত৷  প্রকৃত  সর্বভারতীয় দেশ নেতাই  নেই ৷

স্বার্থান্বেষীরা একসময় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মতো দেশ-নেতাদের  ষড়যন্ত্র করে দেশ ছাড়া করে ছেড়েছে৷ সব  দলগুলোই  পরোক্ষ  বা প্রত্যক্ষভাবে  সাম্প্রদায়িকতার  জুয়া খেলে  গদী সামলাচ্ছে৷ জনগণের  কথা---অর্থনৈতিক  উন্নয়নের  কথা কেউই ভাবে না৷ অনেক দল তো দেশকে বিরোধী শূন্য করার  হুমকী দেয় ও সেই মতো  কাজ করে৷  দেশে বর্তমানে  দারুণ অভাব  হলো  চারিত্রিক দৃঢ়তা ও নৈতিকতার৷  রাজনীতির ক্ষেত্রে বেশীরভাগ নেতা-নেত্রী  কেবল ক্ষমতা চায় আর স্বৈরচারিতার প্রতীক  হয়ে স্বেচ্ছাচারী  শাসক হতে চায়৷ গণতন্ত্র শব্দটা বইয়ের  পাতায় আবদ্ধ! এদেশের  রাজনীতির মান অনেকটাই  নেমে গেছে৷  মানুষ বিশ্বাস  হারিয়েছে ৷  মোদিজি তো প্রথম  থেকেই  পিছনে হাঁটছেন৷ রাজ্যগুলিও যে যেমনটা পারছে  তেমনটা করে  বোটে জেতার জন্য  দলীয়  স্বার্থসিদ্ধি করছে ৷ কেন্দ্রে বিজেপি   শাসনক্ষমতা  কায়েম  করে গদি সামলাতে  নানান মিথ্যা বাণী ছড়াচ্ছে আর ২০১৯-এর নির্বাচনে জয়ী হতে বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলিকে  সাহায্যের হাত একেবারে খাটো করে আর্থিক সংকটে ফেলেছে৷

বিজেপির শাসন কালে গত ২০১৪ থেকে  ২০১৮তে ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশ লোকসানে ভুগছে,  অনেক ব্যাঙ্কই  অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে ডুবতে বসেছে৷ গরিবের সুদের হার কমে যাওয়াতে  তারা আর্থিক সংকটে পড়েছে৷  দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আকাশছোঁয়া৷ বাজার নিয়ন্ত্রণের দিকে কেন্দ্র ও রাজ্যের নজর নেই৷  ভয়ঙ্কর বেকার সমস্যায় সারা দেশ কাতর৷ মোদির জনধন  প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে৷  গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সেবক  দিল্লী সরকার  ধনীদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়ে গরিবদের রক্ত  শোষণ করেই চলেছে৷ জি.এস.টি তো গরীব- শোষণের হাতিয়ার হয়েছে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেমন লাগাম ছাড়া ঠিক তেমনই জীবনদায়ী ঔষধের দাম  গরীবের হাতের নাগালের বাইরে ৷ ডিজেল,  পেট্রোল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিন তেলের দাম  প্রতিমাসে বেড়ে  এমন স্থানে এসেছে  যা  বলবার নয়৷  এ কেমন দেশ শাসন!

হঠাৎ  মোদি সরকার  ১৪টি  জিনিসের  অর্থাৎ ফসলের  দাম বাড়িয়ে দেবার কথা৷  ঠিক নির্বাচনের প্রাক মূহূর্তে এই ঘোষণাকে বিরোধীরা  ভাঁওতা আখ্যা দিয়েছে৷ কারণ বিজেপি শাসনে কেন্দ্রীয় সরকার  যে যে প্রকল্প নিয়েছিল সবকটাই ব্যর্থ৷ সেগুলো জনগণের দুঃখ বাড়িয়েছে বই কমাইনি৷  ফসল সংগ্রহের জন্যে সরকারের ১৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দতে  মুদ্রাস্ফীতি  ঘটবে বলে অনেকে আশংকা করছেন৷ ক্রমাগতভাবে জমির খণ্ডীকরণের ফলে প্রতিটি কৃষি জমির পরিমাণ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হওয়াতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীরা চরম অভাবে পড়েছেন৷ আর্থিক অভাবের তাড়নায় তাঁরা তাঁদের জমি থেকে ফসল তুলেই বিক্রি করতে বাধ্য হয় অল্প দামে৷ বহুক্ষেত্রে এই শর্তেই তাঁরা মহাজন বা ফড়েদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছে বা সংসারে অন্যান্য ব্যয় নির্র্বহ করেছে৷  তাই অভাবের  তাড়নায়   ফসল তুলেই তারা অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়৷ এরাই আর্থিক দিক থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷

দুর্নীতিগ্রস্ত ফোড়েরাই  তাঁদের ফসল  কেনে কম দামে৷  যাদের খামারে অনেক শস্য থাকে,  ত ারাই লাভবান হয়ে থাকে৷ তাই সরকারের  ঘোষিত নূ্যনতম  দাম পেতে গরিব মানুষেরা অপেক্ষা করতে পারে না৷ এজেন্টদের ভরসায়  থাকতে হয়৷ এরাই ছড়ি ঘোরায়৷ এটাই হল দেশের হতভাগ্য কর্ষকদের                    দুর্ভাগ্য৷