বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন গত ৮ই জুলাই মম্তব্য করেছেন যে গত ২০১৪ সাল থেকেই কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের শাসনকালে ভারত সম্পূর্ণ ভুল পথে হেঁটে চলেছে৷ আর্থিক উন্নয়নের নামে ভুল করতে করতে পিছিয়ে পড়ছে দেশ৷ এই সালে শ্রী মোদি বোটে জিতে লোকসভায় আসেন৷ শ্রী অমর্ত্য সেনের মতে আজও তপশীলি উপজাতিভুক্ত ব্যষ্টিরা উপেক্ষিত হয়ে আছে৷ তাঁর মতে সরকার জাত-পাত বিষয়ক সমস্যাগুলি ঠিকমতো সামলাতে পারেন নি ৷
শ্রীসেনের সঙ্গে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন উন্নয়নমূলক অর্থনীতিবিদ জাঁদ্রেজ৷ সম্প্রতি দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তাঁর লেখা একটি বই ‘এ্যান আনসারটেন গ্লোরি অফ ইন্ডিয়া এ্যান্ড ইটস্ কনট্রাডিকশন্’ - এর হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ করা হয়৷ এই অনুষ্ঠানে উপরিউক্ত দুই অর্থনীতিবিদই উপস্থিত ছিলেন ৷ সেই সময় শ্রীসেন উপরিউক্ত মন্তব্য করেন৷ তাঁদের মতে দলিতরা কোনরকম আর্থিক, শিক্ষাগত ও স্বাস্থ্যগত নিশ্চিততা ছাড়াই দিনের পর দিন কাটিয়া যাচ্ছেন৷ শ্রী সেন একজন হতভাগ্য দলিত কিশোরের ওপর বাড়ির কর্র্ত্তর নির্যাতনের একটি ঘটনার উল্লেখ করেন৷
এই ধরণের ঘটনা বর্তমান কালে প্রায়ই ঘটছে বলে মন্তব্য করেন শ্রী সেন৷ তাছাড়া ডঃ জাঁদ্রেজ বলেন, শ্রী মোদির ‘আয়ুস্মান ভারত স্বাস্থ্য প্রকল্প’ আসলে একটি ‘ধোকার টাটি’৷
শ্রী সেন বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ও আমরা ভাবতে পারতাম না, যে হিন্দু নাহলে কোনও সংগ্রামে জেতা যায় না৷ তাঁর মতে, যে ধরণের ঘটনা ঘটছে তাতে সব কিছু ভুলে বিরোধী শক্তিগুলির এককাট্টা হওয়া দরকার৷ কারণ ভারত কোনপথে চলবে সেটা ঠিক করার সময় এসেছে৷ সেটা করতে হবে দেশের জনগণকে ও বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে৷ এ ব্যাপারে দেশের সৎনীতিবাদীদের বিশেষ প্রয়োজন৷ এটা অত্যন্ত দুঃখের কথা যে, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে জেতার জন্যে সাধারণ জনগণের সামনে নিছক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে৷ গণতন্ত্র এদেশে ব্যর্থ৷ শ্রী সেন যে আবেদন রেখেছেন সেটা কতদূর সফল হবে, সেটা ভাববার বিষয় ৷ কারণ গদীর স্বার্থেই সব দল ব্যস্ত৷ প্রকৃত সর্বভারতীয় দেশ নেতাই নেই ৷
স্বার্থান্বেষীরা একসময় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মতো দেশ-নেতাদের ষড়যন্ত্র করে দেশ ছাড়া করে ছেড়েছে৷ সব দলগুলোই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সাম্প্রদায়িকতার জুয়া খেলে গদী সামলাচ্ছে৷ জনগণের কথা---অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা কেউই ভাবে না৷ অনেক দল তো দেশকে বিরোধী শূন্য করার হুমকী দেয় ও সেই মতো কাজ করে৷ দেশে বর্তমানে দারুণ অভাব হলো চারিত্রিক দৃঢ়তা ও নৈতিকতার৷ রাজনীতির ক্ষেত্রে বেশীরভাগ নেতা-নেত্রী কেবল ক্ষমতা চায় আর স্বৈরচারিতার প্রতীক হয়ে স্বেচ্ছাচারী শাসক হতে চায়৷ গণতন্ত্র শব্দটা বইয়ের পাতায় আবদ্ধ! এদেশের রাজনীতির মান অনেকটাই নেমে গেছে৷ মানুষ বিশ্বাস হারিয়েছে ৷ মোদিজি তো প্রথম থেকেই পিছনে হাঁটছেন৷ রাজ্যগুলিও যে যেমনটা পারছে তেমনটা করে বোটে জেতার জন্য দলীয় স্বার্থসিদ্ধি করছে ৷ কেন্দ্রে বিজেপি শাসনক্ষমতা কায়েম করে গদি সামলাতে নানান মিথ্যা বাণী ছড়াচ্ছে আর ২০১৯-এর নির্বাচনে জয়ী হতে বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলিকে সাহায্যের হাত একেবারে খাটো করে আর্থিক সংকটে ফেলেছে৷
বিজেপির শাসন কালে গত ২০১৪ থেকে ২০১৮তে ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশ লোকসানে ভুগছে, অনেক ব্যাঙ্কই অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে ডুবতে বসেছে৷ গরিবের সুদের হার কমে যাওয়াতে তারা আর্থিক সংকটে পড়েছে৷ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আকাশছোঁয়া৷ বাজার নিয়ন্ত্রণের দিকে কেন্দ্র ও রাজ্যের নজর নেই৷ ভয়ঙ্কর বেকার সমস্যায় সারা দেশ কাতর৷ মোদির জনধন প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে৷ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সেবক দিল্লী সরকার ধনীদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়ে গরিবদের রক্ত শোষণ করেই চলেছে৷ জি.এস.টি তো গরীব- শোষণের হাতিয়ার হয়েছে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেমন লাগাম ছাড়া ঠিক তেমনই জীবনদায়ী ঔষধের দাম গরীবের হাতের নাগালের বাইরে ৷ ডিজেল, পেট্রোল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিন তেলের দাম প্রতিমাসে বেড়ে এমন স্থানে এসেছে যা বলবার নয়৷ এ কেমন দেশ শাসন!
হঠাৎ মোদি সরকার ১৪টি জিনিসের অর্থাৎ ফসলের দাম বাড়িয়ে দেবার কথা৷ ঠিক নির্বাচনের প্রাক মূহূর্তে এই ঘোষণাকে বিরোধীরা ভাঁওতা আখ্যা দিয়েছে৷ কারণ বিজেপি শাসনে কেন্দ্রীয় সরকার যে যে প্রকল্প নিয়েছিল সবকটাই ব্যর্থ৷ সেগুলো জনগণের দুঃখ বাড়িয়েছে বই কমাইনি৷ ফসল সংগ্রহের জন্যে সরকারের ১৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দতে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে বলে অনেকে আশংকা করছেন৷ ক্রমাগতভাবে জমির খণ্ডীকরণের ফলে প্রতিটি কৃষি জমির পরিমাণ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হওয়াতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীরা চরম অভাবে পড়েছেন৷ আর্থিক অভাবের তাড়নায় তাঁরা তাঁদের জমি থেকে ফসল তুলেই বিক্রি করতে বাধ্য হয় অল্প দামে৷ বহুক্ষেত্রে এই শর্তেই তাঁরা মহাজন বা ফড়েদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছে বা সংসারে অন্যান্য ব্যয় নির্র্বহ করেছে৷ তাই অভাবের তাড়নায় ফসল তুলেই তারা অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়৷ এরাই আর্থিক দিক থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷
দুর্নীতিগ্রস্ত ফোড়েরাই তাঁদের ফসল কেনে কম দামে৷ যাদের খামারে অনেক শস্য থাকে, ত ারাই লাভবান হয়ে থাকে৷ তাই সরকারের ঘোষিত নূ্যনতম দাম পেতে গরিব মানুষেরা অপেক্ষা করতে পারে না৷ এজেন্টদের ভরসায় থাকতে হয়৷ এরাই ছড়ি ঘোরায়৷ এটাই হল দেশের হতভাগ্য কর্ষকদের দুর্ভাগ্য৷
- Log in to post comments